ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সমাজ ভাবনা ॥ বিষয় ॥ এবারের বর্ষবরণ

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ১৩ এপ্রিল ২০১৭

সমাজ ভাবনা ॥ বিষয় ॥ এবারের বর্ষবরণ

সময় পরিক্রমায় পুরাতনের বিদায় এবং নতুনের আগমন। পুরাতনের সকল কলুষতা, সকল হতাশা মুছে যাক এবার এমনই একটি সুন্দর আকাক্সক্ষায় ঘেরা বাতাস চারদিকে। নতুন বছরের নতুন সূর্য নতুন করে আবারও স্বপ্ন দেখার আহ্বান জানাচ্ছে। বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে আরও একটি স্বপ্নেঘেরা নতুন সূর্য বাঙালী জীবনের দ্বারে করা নাড়ছে। বিশ্বের সকল বাঙালী প্রাণের সুরে গেয়ে উঠবে- ‘এসো হে বৈশাখ, এসো, এসো।’ ‘বাঙালী’ একটি জাতির নাম। আর বাঙালী জাতির সত্তা, ঐতিহ্য ও পরিচয়কে বহন করে যে উৎসবটি, তা হলো বাংলা নববর্ষবরণ উৎসব। আমাদের দেশের সকল ধর্মের মানুষ এই আনন্দ-মিছিলেই একত্রিত হয় এবং মঙ্গল শোভাযাত্রার মধ্যদিয়ে সকলে একসঙ্গে বরণ করে নেয় বাংলা বছরের নতুন সূর্যকে। আর এই মঙ্গল শোভাযাত্রা এখন বিশ্ব ঐতিহ্যের একটি অংশ হিসাবেই আখ্যায়িত হয়েছে। আমাদের দেশে বেশ কয়েক বছর ধরে বাঙালী নানা রঙ্গে পালন করছে এই বাংলা নববর্ষটি। বাঙালী জাতি যে উৎসবপ্রিয় তারই এক সুন্দর প্রতিচ্ছবি ফুটে ওঠে সেদিন। আমাদের দেশে এই উৎসবটি উদযাপনের সব থেকে আকর্ষণীয় হয় দুটি বিষয়, একটি মঙ্গল শোভাযাত্রা যেটিতে পায়ে পা মিলিয়ে সমগ্র দেশের মানুষ বরণ করে নেয় নতুন বছরকে অন্যদিকে ছায়ানটের বটমূলের বর্ণাঢ্য আয়োজন। যে আয়োজনটিতে এবার আরও একটু অন্য রেশ যোগ হবে, কারণ এবার এই আয়োজনের অর্ধশতক পূর্ণ হলো। এছাড়াও শহর থেকে গ্রাম সকল প্রান্তেই সেজে উঠে বর্ষবরণের রঙ্গিন রঙে। সব মিলিয়ে কল্পনায় ভেসে আসছে একটি সুন্দর আনন্দঘন পরিবেশের সমারোহ। চারদিকে ঢাক-ঢোল মাদলের শব্দ। সূর্যরশ্মি পৃথিবীর বুকে আসতেই সকলে বেরিয়ে পরে সেটিকে বরণের উৎসবে। নতুন বছরের সকালটা মঙ্গল শোভাযাত্রা থেকে শুরু করে মাটির সানকিতে পান্তা ইলিশ খাওয়া অথবা বাতাসা মুড়ি দিয়ে মিষ্টি মুখ করা সকলই বাংলার নিজস্ব ঐতিহ্য। বাংলার রমণীর দেহে শোভা পায় লাল, সাদা, নীল, হলুদ, সবুজ রঙের শাড়ি। পুরুষরা সেজে ওঠে বাহারি রঙের পাঞ্জাবিতে। সবটাই যেন বাংলাকে, বাংলার সত্তাকে গভীরভাবে বহন করে চলেছে বহু বছর ধরে। রং বেরঙের মনের দেয়ালে বাঙালী সংস্কৃতি উজ্জীবিত হোক নতুন করে আরও একবার এমনই প্রত্যাশা সকলের। তবে এর মধ্যে যে শঙ্কা নামক শব্দের কোন স্থান নেই এটা বললে ভুল হবে। বিগত কয়েকটি বছর বাংলাদেশের কিছু অনাকাক্সিক্ষত বিচিত্র রূপ দেখা গিয়েছে। যে কোন উৎসব আনন্দ মেলাকে প্রতিহিংসার বলি করার চেষ্টা করে চলেছে একদল মানুষরূপী অমানুষ। কিছুটা পেছনে ফিরে তাকালেই হত্যাযজ্ঞ, জ্বালাও-পোড়াও, ককটেল, গুলি অথবা কোন নিকৃষ্ট পরিকল্পনা এসবের কোনটা কারও স্মৃতি থেকে মুছে যায়নি এখনও। তবে কি এবার বাঙালী থেমে থাকবে তাদের প্রাণের উৎসব উদযাপন থেকে? ‘কখনই না।’ বাঙালী জাতিকে কখনও কোন অপশক্তি বা কোন অশুভ শক্তি থামিয়ে রাখতে পারেনি। তাই অমঙ্গল আশঙ্কাকে উপেক্ষা করে আমরা একত্রিত হব মঙ্গল শোভাযাত্রায়। আঁধার ভেদ করে সূর্যকিরণ প্রতিটি জীবনের দুয়ারে পৌঁছে দেব। যাপিত জীবনের যাবতীয় গ্লানির স্মৃতি ভুলে রাঙিয়ে তুলব নববর্ষকে। এমনই একটি শান্তির বার্তা নীলখামে সকলকে পাঠালাম। সুদিনের সুবাতাস পৌঁছে যাক সকলের হৃদয়ে, সকলের দুয়ারে। নববর্ষের নবরূপ রাঙিয়ে দিক প্রতিটি মুহূর্ত। সুন্দর ও সমৃদ্ধ হোক আগামীর দিনগুলো, এই শুভ কামনায় সমাপ্তিতে জানাই শুভ নববর্ষ। দেওয়ানপাড়া, জামালপুর থেকে
×