ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী ট্রেন উদ্বোধন করলেন হাসিনা ও মোদি

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ৯ এপ্রিল ২০১৭

বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী ট্রেন উদ্বোধন করলেন হাসিনা ও মোদি

অমল সাহা, সাজেদ রহমান ও আবুল হোসেন ॥ বাস্তবায়ন হলো আরও একটি স্বপ্ন। আনুষ্ঠানিকভাবে পরীক্ষামূলক যাত্রা শুরু হলো বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী রেলের। দুপুর ১টা ৫৫ মিনিটে নয়াদিল্লীর হায়দরাবাদ হাউসে ফিতা কেটে মৈত্রী ট্রেন উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এরপর দুপুর দুটোয় বাংলাদেশ রেলওয়ের চীফ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ইফতেখার হোসেনের নেতৃত্বে ৩৬ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল মৈত্রী রেলটি নিয়ে বেনাপোল স্টেশন ছেড়ে কলকাতার উদ্দেশে রওনা দেয়। ফুল ও রঙ্গিন কাপড় দিয়ে সাজানো সাদার মাঝে লাল-সবুজ রেখা টানা পাঁচ বগির ট্রেনটি খুলনা-যশোর-বেনাপোল-পেট্রাপোল-বনগাঁ হয়ে কলকাতার শিয়ালদহ স্টেশনে পৌঁছবে। ট্রেনটি রবিবার সকাল আটটা ৫ মিনিটে কলকাতা থেকে খুলনায় ফিরে আসবে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। ট্রেনটির উদ্বোধন উপলক্ষে বেনাপোল আন্তর্জাতিক রেলস্টেশনে সব ধরনের আয়োজন ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। জানা যায়, এখন যাত্রাপথে দু’দেশের ইমিগ্রেশনে দীর্ঘ সময়ের বাধা কাটাতে ঢাকা স্টেশনেই (ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন) ইমিগ্রেশনের সব কাজ শেষ করার বিষয়টি যাচাই করা হয়। ইমিগ্রেশন শেষে কোথাও না থেমে একেবারে কলকাতার শিয়ালদহ স্টেশনে গিয়ে থামবে মৈত্রী এক্সপ্রেস। একই সঙ্গে কলকাতা থেকে যারা ফিরবেন, তাদের ইমিগ্রেশনের সব কাজ সম্পন্ন করা হবে শিয়ালদহ স্টেশনে। ট্রেনে যেহেতু খাবারের পর্যাপ্ত সুবিধা আছে, সেহেতু এটা ননস্টপ হলেও অসুবিধা নেই। যাত্রাপথে ইমিগ্রেশনের জন্য যদি বাড়তি সময় ব্যয় না হয়, তাহলে এখনকার নির্ধারিত সময়ের কয়েক ঘণ্টা আগেই এক দেশ থেকে আরেক দেশে পৌঁছবে মৈত্রী ট্রেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বেনাপোল রেলস্টেশনে ভিডিও কনফারেন্সস্থলে উপস্থিত ছিলেনÑ রেলপথমন্ত্রী মহক, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক, প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, শেখ আফিল উদ্দিন এমপি, স্বপন ভট্টাচার্য এমপি, মিজানুর রহমান এমপি, যশোর জেলা প্রশাসক ড. হুমায়কবীর, বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক আমজাদ হোসেন, বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার শওকাত হোসেন, বেনাপোল পৌর মেয়র আশরাফুল আলম লিটন, যশোরের পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুস ছালামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের সহস্রাধিক নেতাকর্মী। এর আগে শনিবার সকাল আটটা ১০ মিনিটে যাত্রীবাহী ট্রেন মৈত্রী এক্সপ্রেস-২ খুলনা থেকে কলকাতার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে সকাল ১০টা ৫৫ মিনিটে বেনাপোলে পৌঁছায়। সকালে কলকাতার উদ্দেশে খুলনা রেলওয়ে স্টেশন ছেড়ে যাওয়া প্রথম যাত্রীবাহী ট্রেন মৈত্রী এক্সপ্রেস-২ ট্রেনটিকে বিদায় জানান খুলনা রেলওয়ের স্টেশন মাস্টার কাজী আমিরুল ইসলামসহ হাজারও উৎসুক জনতা। সাধারণ এসব মানুষ ইতিহাসের সাক্ষী হলেন। উদ্বোধনী ষ্ঠানে রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হক বেনাপোল রেলস্টেশনে সংবাদকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে জানান, দেশের উন্নয়ন করতে হলে আগে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রয়োজন। সে বিষয়টি মাথায় রেখে জননেত্রী শেখ হাসিনা একের পর এক যোগাযাগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করে চলেছেন। আজ উদ্বোধন হলো বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে মৈত্রী রেল। এখন এ পথে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক, চিকিৎসা ও ভ্রমণের কাজে যাতায়াতকারীরা উপকৃত হবেন। পাশাপাশি দুই দেশের মানুষের মধ্যে বন্ধুত্বের বন্ধন আরও জোরদার হবে। উদ্বোধনী ট্রেনে চড়েন রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য মিজানুর রহমান মিজান। এছাড়া ট্রেনটিতে রেলওয়ের পদস্থ কর্মকর্তারা এবং সাধারণ মানুষও যাত্রী হন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রেনটি চালু হলে খুলনাসহ যশোর অঞ্চলের মানুষের অনেকদিনের স্বপ্ন পূরণ হবে। খুলনা থেকে বেনাপোল স্থলবন্দর হয়ে সাড়ে তিন ঘণ্টায় তারা যেতে পারবেন কলকাতায়। নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যে রোগী, পর্যটক ও ব্যবসায়ীরা কলকাতায় পৌঁছতে পারবেন। এতে দুই দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যেরও সম্প্রসারণ ঘটবে। গতিশীল হবে দু’দেশের অর্থনীতির চাকা।
×