ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

টুটুল মাহফুজ

কুমেরুর বরফ গলছে

প্রকাশিত: ০৬:৪৭, ৩১ মার্চ ২০১৭

কুমেরুর বরফ গলছে

কুমেরুর কাছের একাধিক বরফের পাত ইতোমধ্যেই ভেঙ্গে গেছে। ২০০২ সালের পরিস্থিতি শীঘ্রই আবার দেখা দিতে পারে বলে গবেষকদের আশঙ্কা। সে বছর মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে লার্সেন-বি নামের শেল্ফ আইসের পাতটি ছোট ছোট আইসবার্গ, অর্থাৎ হিমশৈলে ভেঙ্গে যায়। ২,৬০০ বর্গকিলোমিটার বরফ সাগরে মিশে যায়। কুমেরুরুউপদ্বীপের ওপর যে বরফের পাতগুলো অবস্থিত, সেই এলাকাটি বিশেষভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের দ্বারা প্রভাবিত। কিন্তু আরও শীতল এলাকাগুলোতেও বরফ গলছে। এর মূল কারণ জলবায়ু পরিবর্তন বলে অনেক গবেষকের ধারণা। জলবায়ু পরিবর্তন দু’ভাবে মেরু প্রদেশের বরফের ক্ষতি করছে। কুমেরুর পশ্চিমাঞ্চলে উষ্ণ জলের স্রোত তলা থেকে বরফ গলাচ্ছে। শেল্ফ আইসের বরফের পাতগুলোর উপরের বরফ গরম বাতাসে গলে জলের কুণ্ড তৈরি হচ্ছে। এমনকি গবেষণা কেন্দ্রগুলোকে অন্যত্র যেতে হচ্ছে, যদি না তাদের কোন আইসবার্গের ওপরে চড়ে ভেসে যেতে হয়! ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে কুমেরুর জলবায়ু। ব্রিটিশ গবেষণা কেন্দ্র হ্যালি সিক্স-কে অন্যত্র সরে যেতে হবে। কারণ কেন্দ্রটি যে বরফের ওপর, তা ভেঙ্গে যেতে পারে। ট্রাক্টর আর বুলডোজার দিয়ে কয়েক টন ওজনের মডিউলটিকে ডাঙ্গার দিকে ২৩ কিলোমিটার টেনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। হ্যালি সিক্স একটি ভাসমান বরফের পাতের ওপর দাঁড়িয়ে, পরিভাষায় যার নাম ‘ব্রান্ট শেল্ফ আইস’। এই বরফের পাতে অনেক ফাটল দেখা দিয়েছে। ফাটল আরও বাড়লে বরফের একটা বড় অংশ ভেঙ্গে হিমশৈল হয়ে সাগরে ভেসে যেতে পারে। ভাসন্ত বরফের ওপর গবেষণা কেন্দ্র সেন্টার ফর পোলার এ্যান্ড মেরিন রিসার্চের আলফ্রেড ভেগেনার ইনস্টিটিউটের প্রফেসর ব্যার্নহার্ড ডিকমান বলেন, ‘এই ফাটলটার ওপর স্বভাবতই গবেষণা কেন্দ্রের ভাগ্য নির্ভর করছে। কেন্দ্রটির অবস্থান এমন যে, হিমশৈল যখন সাগরে ভেসে যাবে, তখন গবেষণা কেন্দ্রটি ঠিক সেই হিমশৈলের ওপর থাকবে।’ জার্মান কুমেরুরুগবেষণা কেন্দ্র নয়মায়ার-৩ অন্য একটি শেল্ফ আইসের পাতের ওপর খাড়া। তবে এই গবেষণা কেন্দ্রটি আরও ছোট ও অনেক বেশি স্থিতিশীল। এখানে বরফ ভাঙলে গবেষণা কেন্দ্রটি ডাঙ্গার দিকে থাকবে। প্রফেসর ডিকমান জানালেন, ‘কিন্তু বেশি বরফ ভেঙ্গে গেলে পাতটা স্থিতিহীন হয়ে পড়বে, ভারসাম্য হারাবে। তার ফলে পিছনে হিমবাহের বরফ সোজা সাগরে গিয়ে পড়তে পারে। সাগরের পানির উচ্চতার জন্য একটি আইস শেল্ফ ভাঙলে ক্ষতি নেই, কেননা, বরফ জলে ভাসে। কাজেই বরফের পাত ভাঙলে সাগরের পানি বাড়বে না। কিন্তু মেরু প্রদেশের ভিতর থেকে যে বরফ আসছে, তার ফলে সাগরের পানির উচ্চতা বাড়বে বৈকি।’ জলের কুণ্ড প্রফেসর ডিকমান বলেন, ‘এই জলের কুণ্ডগুলো আবার শীতকালে জমে যায়। কিন্তু সেই নতুন বরফের প্রকৃতি হয় হিমবাহের বরফ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। এই বরফ হয় কিছুটা নরম। প্রতিবছর গরমে বরফ গলে কুণ্ডি তৈরি হওয়া চলে বছরের পর বছর। তার ফলে বরফ ঝুরঝুরে হয়ে পড়ে।’ ব্রিটিশ গবেষণা কেন্দ্রটি আগামী মাস থেকে আট মাস বন্ধ থাকবে। কারণ, কুমেরুর শীতে কোন ত্রাণ অভিযান পাঠানো সম্ভব নয়। আর এখানকার বরফ আগামীতে কি করবে বা না করবে, তা বলা সম্ভব নয়। সূত্র : বিবিসি, ডয়েচ ভেলে
×