ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পানগুছি নদী থেকে দুই শিশুসহ আরও ৯ লাশ উদ্ধার ॥ এখনও নিখোঁজ ৮

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ৩১ মার্চ ২০১৭

পানগুছি নদী থেকে দুই শিশুসহ আরও ৯ লাশ উদ্ধার ॥ এখনও নিখোঁজ ৮

স্টাফ রিপোর্টার, বাগেরহাট ॥ মোরেলগঞ্জ পানগুছি নদীতে ট্রলারডুবির তৃতীয় দিনে দুই শিশুসহ আরও ৯ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। এখনও নিখোঁজ রয়েছেন কমপক্ষে ৮ জন। বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত পানগুছি নদী থেকে লাশগুলো উদ্ধার করা হয়। বাগেরহাট ফায়ার সার্ভিসের সহকারী উপ-পরিচালক মাসুদুর রহমান সরদার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এ নিয়ে মঙ্গলবারের ট্রলারডুবির ঘটনায় ১৪ জনের লাশ উদ্ধার হলো। বৃহস্পতিবার উদ্ধার হওয়া ৯ জন হলেন- মোরেলগঞ্জ কাছিকাটা গ্রামের আব্দুল মজিদ শেখ (৭০), নাসির শেখের ছেলে শিশু নাজমুল (৬), আলতু-বুরুজবাড়িয়া গ্রামের সুলতান হাওলাদার (৫৫) ও আনছার হাওলাদার (৫০), বাঁশবাড়িয়া গ্রামের আলম চাপরাশির স্ত্রী সালমা বেগম (৩০), তার ১৮ মাসের ছেলে সাজ্জাদ, হোগলাবুনিয়া গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে রফিকুল ইসলাম (৩৩), গোপালপুর গ্রামের তবিবুর রহমান তোতার স্ত্রী মুন্নী বেগম (৪০) ও শরণখোলার রায়েন্দা বাজারের বাসিন্দা শামসুল হুদার ছেলে স্থানীয় রায়েন্দা পাইলট হাইস্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্র আবির আল শামস (১৬)। লাশ উদ্ধারের পর স্বজনহারাদের আহাজারিতে মোরেলগঞ্জের পানগুছি নদীর দুই তীরে শোকার্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এখনও অনেকে তাদের স্বজনদের লাশের সন্ধানে হন্যে হয়ে ছোটাছুটি করছেন। এদিকে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উদ্ধারকৃত লাশ পরিবহন ও দাফনের জন্য প্রত্যেকের পরিবারকে ১৫ হাজার টাকা করে দেয়া হয়েছে। নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, পুলিশ ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার কর্মীদের ১৪টি টিম ট্রলার নিয়ে পানগুছি ও বলেশ্বর নদীর বিভিন্ন এলাকায় লাশের সন্ধানে উদ্ধার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন। গত মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে মোরেলগঞ্জ পানগুছি নদীতে অন্তত ৮০ যাত্রী নিয়ে একটি ইঞ্জিনচালিত ট্রলার ডুবে যায়। এরপর ওই দিনই মা-মেয়েসহ চার নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসন ১৮ জন নিখোঁজের তালিকা করে। বুধবার উদ্ধার হয় আরও এক নারীর লাশ। ঘটনার পর থেকে পুলিশ, দমকল বাহিনী, নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড সদস্যরা স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে উদ্ধার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। নদীতীরে ভিড় করছেন নিখোঁজদের স্বজনরা। উদ্ধারকাজের নেতৃত্বে রয়েছেন নৌবাহিনীর কমান্ডার মোঃ শাহরিয়ার আকন। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার ভোর থেকে বিকেল পর্যন্ত ঘটনাস্থলের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে বিভিন্ন জায়গা থেকে এই নয়জনের লাশ উদ্ধার হয়। এ নিয়ে মোট ১৪ জনের লাশ উদ্ধার হলো। নিখোঁজদের সন্ধানে উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। মোরেলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওবায়দুর রহমান বলেন, উদ্ধারকৃত লাশ তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে মোরেলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ ওবায়দুর রহমানের সভাপতিত্বে জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ট্রলার ডুবির ঘটনায় বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ মোমিনুর রশিদকে প্রধান করে গঠিত পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটি আগামী রবিবার জেলা প্রশাসকের কাছে তাদের তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করবেন। আবিরের লাশ দাফন ॥ পানগুছি নদীতে ট্রলারডুবির ঘটনায় শরণখোলার রায়েন্দা পাইলট হাইস্কুলের ১০ম শ্রেণীর মেধাবী ছাত্র আবির আল শামসের লাশ বৃহস্পতিবার সকালে শরণখোলায় পৌঁছলে সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে শোকের ছায়া নামে। শিক্ষক-সহপাঠী ও স্বজনদের আহাজারিতে বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। এদিন বাদ জোহর রায়েন্দা পাইলট হাইস্কুল মাঠে জানাজা শেষে উত্তর কদমতলা গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়।
×