ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সকাল থেকেই দীর্ঘ লাইন, নারী ভোটার উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ৩১ মার্চ ২০১৭

সকাল থেকেই দীর্ঘ লাইন, নারী ভোটার উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো

স্টাফ রিপোর্টার, কুমিল্লা থেকে ॥ ‘সকাল ৮টা তন লাইনে খাড়াই রইছি, এহন সাড়ে ১০টা বাজে, ভোট দিতে হারিনো, হগলে আর কাছে ভোট চাইবার লাই আইছে, আই ভোট না দি যাইতাম হারতামনা।’ কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের ভল্লবপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এমনভাবেই কথাগুলো বলছিলেন পঞ্চাশোর্ধ তাহেরা বেগম। সকাল সকাল ভোট শেষ করে বাড়ি গিয়ে দুপুরের জন্য রান্না করার পরিকল্পনা ছিল তার, তবে ভোট দিতে দেরি হওয়ায় রান্নায়ও দেরি হবে বলে জানান। তাহেরা বেগমের পাশেই ছিলেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারী কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সম্মান শেষ বর্ষের ছাত্রী আঁখি আক্তার। তিনিও সাড়ে আটটার সময় এসেছেন বলে জানান। ভোট দিতে দেরি হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এখানে লাইন অনেক লম্বা ছিল, এখন অনেকটা কাছাকাছি আসছি। মাঝে মাঝে দেখি অসুস্থদের লাইন ছাড়াও ঢুকতে দিচ্ছে। কেন্দ্রের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিয়ে সন্তোষও প্রকাশ করেন তিনি। শুধু ভল্লবপুর নয়, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের প্রায় সব কেন্দ্রেই নারী ভোটারদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। ভোট শুরুর আগ থেকেই লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন ভোটাররা। কেন্দ্রগুলোতে সরেজমিনে গিয়ে মনে হয়েছে প্রতিটি কেন্দ্রেই যেন চলছে ভোট উৎসব। দুপুর পর্যন্ত কেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের ভিড় ছিল উপচেপড়া। অধিকাংশ কেন্দ্রেই প্রথম চার ঘণ্টায় গড়ে ৪৫ শতাংশেরও বেশি ভোট পড়েছে। দুপুরের পর থেকে কেন্দ্রগুলোতে ভোটাররা আসতে থাকে থেমে থেমে। প্রায় সব কেন্দ্রেই মেয়র পদে প্রধান দুই প্রার্থীসহ কাউন্সিলরদের এজেন্ট দেখা গেছে। তবে অন্য দুই মেয়র প্রার্থীর এজেন্ট ছিল না কোন কেন্দ্রেই। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় ভোট গ্রহণ শুরুর পর থেকে সিটি কর্পোরেশনের অন্তত ২০টি কেন্দ্রে সরেজমিনে গিয়ে এসব চিত্র দেখা গেছে। সকাল সাড়ে ১০টায় ভল্লবপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ২ নম্বর ভোট কক্ষে গিয়ে দেখা গেছে ধানের শীষ প্রতীকের পক্ষে এজেন্ট হিসেবে রয়েছেন তসলিমা। এই কক্ষে নৌকা মার্কার এজেন্ট রতœা আক্তার। এই কক্ষে মোট ১৭০ ভোটের মধ্যে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ৮৮টি ভোট পড়েছে। পাশের ৩ নম্বর কক্ষে মোট ৩২৬ ভোটের মধ্যে একই সময়ে ভোট পড়েছে ৯৬টি। এই কক্ষে নৌকার এজেন্ট সৈয়দ রাশেদুল হাসান এবং ধানের শীষের এজেন্ট মেহেদী হাসান। এই কেন্দ্রের সব কক্ষেই নৌকা ও ধানের শীষের এজেন্ট দেখা গেলেও পাওয়া যায়নি বাকি দুই মেয়র প্রার্থীর এজেন্ট। পড়ে এই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার ডাঃ নাজমুল হক জনকণ্ঠকে বলেন, এই কেন্দ্রে মোট ৮টি ভোট কক্ষ। এর মধ্যে ৪টি পুরুষ ও ৪টি মহিলা। কেন্দ্রে মোট ২ হাজার ৭০৯ ভোটের মধ্যে সকাল ১০টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ৫৮০টি। সকাল থেকেই শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহণ হচ্ছে বলেও তিনি জানান। এর আগে সকাল ৯টা ৩৯ মিনিটে ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের বিসমিল্লা কিন্ডারগার্টেন স্কুল কেন্দ্রের ১ নম্বর ভোট কক্ষে ভোট পড়েছে ৫৬টি। পাশের দুই নম্বর কক্ষে ভোট পড়েছে ৮০টি। এই দুই কক্ষেই দেখা গেছে নৌকা ও ধানের শীষের এজেন্ট। নৌকার ও ধানের শীষের এজেন্ট কে জানতে চাইলে তারা হাত উঁচিয়ে দেখান। এই কেন্দ্রের ২ নম্বর ভোট কক্ষের ধানের শীষ মার্কার এজেন্ট ফেরদৌস জানান, সকাল থেকে ভালভাবেই ভোট হচ্ছে। কোন সমস্যা নেই। এই কেন্দ্রের ঠিক অপর পাশেই রয়েছে তেলিকোনা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই স্কুলের দুটি ভোটকেন্দ্র। একটি মহিলা ও একটি পুরুষদের জন্য। এক সঙ্গে তিনটি কেন্দ্র হওয়ায় এখানে ভোটারদের ভিড় ছিল অনেক। দুটি স্কুলেরই মূল গেটের বাইরেই ছিল ভোটারদের দীর্ঘ লাইন। সকাল ১০টা ৫২ মিনিটে ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের চৌয়ারা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ঢুকতেই দেখা হয় ভোট দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া ৬২ বছর বয়সী জুলফুর রহমানের সঙ্গে। কেমন ভোট হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা যেমন ভোট চেয়েছিলাম তেমনই হচ্ছে। আমার ভোট আমি দিতে পেরেছি। খুব ভাল লাগছে। চৌয়ারা বাজারে ওষুধের ব্যবসা করেন বলে জানান তিনি। কেন্দ্রটির ১ নম্বর ভোট কক্ষে ওই সময়ের মধ্যে মোট ২৯১ ভোটের মধ্যে কাস্ট হয়েছে ৮৭টি ভোট। এই বুথে নৌকার এজেন্ট রয়েছেন সাখাওয়াত হেসেন এবং ধানের শীষের এজেন্ট মোঃ আবদুল কাদের সুমন। কেন্দ্রেটির দুই নম্বর ভোট কক্ষে একই সময়ে একটি ব্যালট বই পূর্ণ হয়েছে। মানে ১০০ জন ইতোমধ্যে ভোট দিয়েছেন। এই বুথে মোট ভোটার ৩২১। এখানে প্রধান দুই দলের মেয়র প্রার্থীরই এজেন্ট দেখা গেছে। কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার বদিউল আলম জনকণ্ঠকে জানান, সকাল থেকেই শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই কেন্দ্রে। উপস্থিতিও ভাল। তিনি জানান, মোট ২ হাজার ২৯৩ জন ভোটারের মধ্যে সকাল ১০টা পর্যন্ত নেয়া হিসেবে ৬১৩ জন ভোট দিয়েছেন। কোন ধরনের কোন চাপ আছে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি জানান, এখনও কেউ চাপ প্রয়োগ করতে আসেনি। আর এলেও সফল হবে না। এছাড়া চৌয়ারা ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রী) মাদ্রাসা, ভিক্টোরিয়া সরকারী কলেজের দুটি কেন্দ্র, ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট হাইস্কুলের দুটি কেন্দ্র, পুলিশ লাইন্স উচ্চ বিদ্যালয় (প্রশাসনিক ভবন), পুলিশ লাইন্স উচ্চ বিদ্যালয় (টিনশেড ভবন), পুলিশ লাইন্স উচ্চ বিদ্যালয় (প্রশিক্ষণ ভবন), পুলিশ লাইন্স সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, কুমিল্লা মডার্ন স্কুল প্রাইমারী শাখার চারটি কেন্দ্র, নবাব হোচ্ছাম হায়দার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রসহ বিভিন্ন কেন্দ্রে গিয়ে একই ধরনের চিত্র পাওয়া গেছে।
×