ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

স্টুডেন্ট কেবিনেট নির্বাচন ॥ কেউ হয়েছে মন্ত্রী কেউ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ৩১ মার্চ ২০১৭

স্টুডেন্ট কেবিনেট নির্বাচন ॥ কেউ হয়েছে মন্ত্রী কেউ প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কেবল নির্বাচন নয়, এ যেন নির্বাচনী উৎসব। ‘স্টুডেন্ট কেবিনেট’ গঠনের এ নির্বাচনী উৎসবে শামিল হতেই বৃহস্পতিবার নিজ নিজ বিদ্যালয়ে এসেছিল মাধ্যমিক স্তরের প্রায় ১ কোটি শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীদের কোলাহলে মুখরিত ছিল রাজধানীসহ সারাদেশের ২২ হাজার মাধ্যমিক স্কুল ও মাদ্রাসা। বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে পা রেখেই তারা মেতে ওঠে উল্লাসে। নিজ নিজ স্কুলে নির্বাচনী উৎসবে সামিল হয়ে শিক্ষার উন্নয়নে ছাত্র-ছাত্রীরা নিজেরই ভোট দিয়ে নির্বাচন করলেন নিজেদের প্রতিনিধি। এ শিশু শিক্ষার্থীদেরই কেউ হয়েছে মন্ত্রী, আবার কেউ প্রধানমন্ত্রী। নির্বাচন কমিশনার, প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করেছে শিশুরাই। শৃঙ্খলা রক্ষায় কেউ কেউ হয়েছে র‌্যাব, পুলিশ, আনসার বাহিনীর সদস্য। সরাসরি ভোটের মাধ্যমে প্রতিটি বিদ্যালয়ে আটজন করে প্রার্থী নির্বাচিত হলো। সারাদেশেই উৎসরেব আমেজে অনুষ্ঠিত হয়েছে মাধ্যমিক পর্যায়ের ‘স্টুডেন্টস কেবিনেট’। রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী তেজগাঁও সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের তনিমা মন্ত্রী হওয়ার লক্ষ্যে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন। উদ্দেশ্য নির্বাচিত হয়ে বিদ্যালয়ের ও সহপাঠীদের নানা কল্যাণে কাজ করবেন। তাই অতিথি, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অভ্যর্থনায় সকাল থেকেই ব্যস্ত থাকতে দেখা যাচ্ছে। পাশাপাশি তাকে ভোট দিয়ে জয়লাভের জন্য ভোটারদের কাছে ভোট চান। তার মতো সকল প্রার্থী নিজেদের জয়লাভে সহপাঠীদের কাছে ভোট চাওয়ায় ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ তেজগাঁও সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে স্টুডেন্টস কেবিনেট নির্বাচন পরিদর্শন করেন। এ সময় শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আজ সারাদেশে মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল ও মাদরাসায় স্টুডেন্ট কেবিনেট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ নির্বাচনের ফলে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে গণতান্ত্রিক মনোভাব, মূল্যবোধ ও চিন্তা-চেতনা গড়ে উঠবে। তারা অন্যের মতের প্রতি সহনশীল ও শ্রদ্ধাশীল হতে শিখবে। শিক্ষামন্ত্রী ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া প্রত্যক্ষ করেন এবং নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কমিশনারদের সঙ্গে কথা বলেন। তেজগাঁও সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে সকাল ও বিকেলের শিফটে শিক্ষার্থীরা তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে দুটি পৃথক কেবিনেট নির্বাচন করেছে। খুদে মন্ত্রীদের কি কি দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে, সে সম্পর্কে ধারণা পাওয়া গেল নির্বাচিত মন্ত্রীদের কাজ থেকেই। মন্ত্রিসভার সদস্যরা মাদকবিরোধী ফেস্টুন, স্টিকারসহ বিভিন্ন প্রচার চালাবেন। দুপুরে ধানমন্ডি সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, আনন্দঘন পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনায় শিক্ষার্থীরা ভোট দিচ্ছে। প্রার্থীরাও উৎসবে সামিল হয়ে ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করছেন। বিদ্যালয়টির ভোটদান দেখছেন প্রধান শিক্ষক মোঃ ইনসান আলী। প্রধান শিক্ষক তার প্রতিক্রিয়ায় বললেন, এই আয়োজন শিশুদের নেতৃত্ব বিকাশে কাজ করবে। শিশুরা অত্যন্ত খুশি। এদিকে আবার অনেক শিক্ষকই মনে করছেন এর ফলে শিশুদের ক্ষতিও হতে পারে। তাদের মতে, নির্বাচনের নাম করে ছোট ছোট এই শিশুদের মাঝে ‘রাজনীতির বিষফোঁড়া ঢোকানোই হচ্ছে। কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। শিশুরা এই নিয়েই ব্যস্ত থাকবে। উল্লেখ্য, ছাত্র-ছাত্রীদের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত আটজন প্রতিনিধির প্রধান দায়িত্ব ও সম্পাদিত কর্মকা-গুলো হচ্ছেÑ পরিবেশ সংরক্ষণ (বিদ্যালয়, আঙ্গিনা ও টয়লেট পরিষ্কার এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা), পুস্তক ও শিখন সামগ্রী, স্বাস্থ্য, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি এবং সহপাঠ কার্যক্রম, পানি সম্পদ, বৃক্ষ রোপণ ও বাগান তৈরি, দিবস ও অনুষ্ঠান উদযাপন এবং অভ্যর্থনা ও আপ্যায়ন, আইসিটি। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এসব দায়িত্ব বণ্টন করবেন। স্টুডেন্ট কেবিনেট গঠনের উদ্দেশ্যগুলো হলোÑ বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম এবং উন্নয়ন কর্মকা- বাস্তবায়নে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, বিদ্যালয়ে শতকরা ১০০ ভাগ শিক্ষার্থী ভর্তি ও ঝরে পড়া রোধে সহযোগিতা করা, অন্যের মতামতের প্রতি সহিষ্ণুতা এবং শ্রদ্ধা প্রদর্শন, শিক্ষা কার্যক্রমে ছাত্র-ছাত্রীদের ভূমিকা সম্পর্কে অভিভাবক এবং অন্যদের অবহিত এবং উদ্বুদ্ধকরণ, শিশুকাল থেকে গণতন্ত্রের চর্চা এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া। সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতা মেধা বিকাশে ভূমিকা রাখছেÑ শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতা শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এ প্রতিযোগিতায় পশ্চাৎপদ অঞ্চলের শিক্ষার্থীরাও সমান সুযোগ পাচ্ছে। সারাদেশে যে মেধাবী শিক্ষার্থীরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এ প্রতিযোগিতায় তারা অংশগ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে। উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে প্রায় লক্ষাধিক ছাত্র-ছাত্রী এ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে। এ মেধাবী শিক্ষার্থীরাই একদিন জাতিকে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও গবেষণায় এগিয়ে নিয়ে যাবে। আজিমপুর গবর্নমেন্ট গার্লস স্কুল এ্যান্ড কলেজ মিলনায়তনে সৃজনশীল মেধা অন্বেষণের জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতা উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মোঃ সোহরাব হোসাইনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব মোঃ আলমগীর, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব চৌধুরী মুফাদ আহমদ, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. এস এম ওয়াহিদুজ্জামান এবং সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতার সদস্য সচিব ড. মোঃ শফিকুল ইসলাম তালুকদার বক্তব্য রাখেন। শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, যেসব মেধাবী শিক্ষার্থী আড়ালে আছে বা কম সুযোগ পাচ্ছে, যারা অনাদরে-অবহেলায় ছিল, তারাও এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে তাদের বিকাশের সুযোগ পাবে। এদের মধ্যে যারা মেধা তালিকায় উঠে এসেছে, তাদের পড়ালেখায় যাতে কোন প্রতিবন্ধকতা না আসে সেজন্য সহযোগিতা করা হবে। উল্লেখ্য, দেশের ৮টি বিভাগের প্রতিটি থেকে ১২ জন করে এবং ঢাকা মহানগরীর ১২ জনসহ মোট ১০৮ জন শিক্ষার্থী জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে। জাতীয় পর্যায়ে উত্তীর্ণ শীর্ষ ১২ জনকে এক লাখ টাকা করে পুরস্কার প্রদান করা হবে এবং তারা বিদেশে ভ্রমণের সুযোগ পাবে।
×