অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশী উদ্যোক্তা শাহনাজ দূরীন অসলোর মর্যাদাপূর্ণ ‘বিজনেস ফর পিস’ পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন। মঙ্গলবার নরওয়ের অসলো সিটি হলে এ বছরের পুরস্কারজয়ী হিসেবে দূরীনসহ চার ব্যবসায়ীর নাম ঘোষণা করা হয়।
দূরীনের সঙ্গে যারা এই বছর পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ড. হারলে সায়েদিন ও এলন মাস্কে এবং কানাডার মুরাদ আল কাতিব। আগামী ১৬ মে অসলোর সিটি হলে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেয়া হবে।
সিঙ্গাপুরভিত্তিক ইমপেক্ট ইনভেস্টমেন্ট এক্সচেঞ্জ এশিয়া ও আইআইএক্স ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ব্যবসার পাশাপাশি ইতিবাচক সামাজিক ও পরিবেশগত প্রভাব সৃষ্টির উদ্যোগ নেয়ায় দূরীনকে এই পুরস্কার দেয়া হচ্ছে বলে অসলোর বিজনেস ফর পিস কমিটি জানিয়েছে। ২০০৯ সালে দূরীন এই এক্সচেঞ্জ ও ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করে।
এ নিয়ে তৃতীয়বার কোন বাংলাদেশী ‘ব্যবসা বাণিজ্যে নোবেল’ খ্যাত এই পুরস্কার পাচ্ছেন। এর আগে ২০১২ সালে ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী লতিফুর রহমান এবং ২০১৪ সালে নিটল-নিলয় গ্রুপের ভাইস চেয়ারপার্সন সেলিমা আহমাদ এই পুরস্কারে ভূষিত হন।
গত ৯ ফেব্রুয়ারি লন্ডনে সেরা উদ্যোক্তাদের নির্বাচিত করা হয় বলে বিজনেস ফর পিস কমিটি জানিয়েছে। পুরস্কারের জন্য মনোনীত হওয়ার প্রতিক্রিয়ায় দূরীন বলেছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইমপ্যাক্ট ইনভেস্টের ভাবনা যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে, এই পুরস্কার তার স্বীকৃতি। তিনি বলেন, এই আন্দোলনের উদ্ভাবক ও সামনের কাতারের একজন হিসেবে সেরা উদ্যোক্তার স্বীকৃতি পেয়ে আমি সম্মানিত।
২০২০ সালের মধ্যে ইমপ্যাক্ট ইনভেস্ট বিশ্বের অন্তত ১০ কোটি দরিদ্র ব্যক্তির আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়ে সামাজিক ও পরিবেশগত উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে যে কাজ করে যাচ্ছে তাতে এই পুরস্কার উৎসাহ যোগাবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
দূরীন এর আগে এশিয়া সোসাইটির ‘গেম চেঞ্জার’ পদকেও ভূষিত হয়েছিলেন। সামাজিক উদ্যোগের মাধ্যমে দায়বদ্ধ বিনিয়োগ নিশ্চিতের লক্ষ্যে নিজের প্রতিষ্ঠিত বিশ্বের প্রথম ‘সোশ্যাল স্টক এক্সচেঞ্জ’ কার্যক্রমের জন্য ২০১৬ সালে তিনি এই সম্মান পান। এর আগের বছর দূরীন জিতে নিয়েছিলেন জোসেফ হোয়ারটন এ্যাওয়ার্ড।
আমেরিকার স্মিথ কলেজ থেকে ইকোনমিকস এ্যান্ড গবর্নমেন্ট নিয়ে বিএ শেষ করে পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিন্যান্সে এমবিএ করেন তিনি। এর পর আন্তর্জাতিক অর্থনীতির ওপর এমএ ডিগ্রী নেন জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
১৯৯৯ সালে তিনি ওয়াননেস্ট নামে একটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন, যার মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন গ্রামের কারিগরদের অনলাইনের মাধ্যমে একত্রিত করে ভিন্নধর্মী বাজার সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়েছিল। পরে ওই প্রতিষ্ঠান বিক্রি করে দেন তিনি।
নিউইয়র্কের মর্গান স্ট্যানলি ব্যাংক, ঢাকায় গ্রামীণ ব্যাংক, ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংক কার্যালয় এবং হংকংয়ের মেরিল লিঞ্চে কাজ করার পর ২০০৬ সালের অগাস্ট পর্যন্ত দূরীন এশিয়া মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের সিঙ্গাপুর শাখার পরিচালন কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন। পরে কাজ করেছেন ওয়াল স্ট্রিটেও।
