ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভারত থেকে ভোগ্যপণ্য আমদানি করবে টিসিবি

প্রকাশিত: ০৪:১৮, ৩১ মার্চ ২০১৭

ভারত থেকে ভোগ্যপণ্য আমদানি করবে টিসিবি

এম শাহজাহান ॥ জরুরী প্রয়োজনে টিসিবি ভারতীয় রাষ্ট্রীয় সংস্থা স্টেট ট্রেডিং কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া থেকে ভোগ্যপণ্য আমদানি করবে। দেশে ভোগ্যপণ্যের ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভাঙ্গতে এবং ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশকে (টিসিবি) শক্তিশালী করতে সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়া ভারতের সঙ্গে করা বর্ডারহাট চুক্তি পাঁচ বছরের জন্য নবায়ন করা হবে। কোন পক্ষ আপত্তি না তুললে পাঁচ বছর পর পর এই চুক্তিটি অটোমেটিক নবায়ন হয়ে যাবে। বর্ডার হাটের বিক্রেতার সংখ্যা দ্বিগুণ করে ৫০ জন করা হয়েছে। আর একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ ২০০ ডলারের পণ্য কিনতে পারবেন এই হাট থেকে। বর্তমান চুক্তিতে ১০০ ডলার পর্যন্ত কেনাকাটার সুযোগ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফরের সময় পণ্য আমদানিতে সমঝোতা স্মারক সই এবং বর্ডার হাট নবায়ন সংক্রান্ত চুক্তি করা হবে। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে হাটের পরিধিও বাড়াতে যাচ্ছে সরকার। হাটের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ, বিক্রেতা ও লেনদেনের সীমাও বাড়ানো হবে। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বর্ডার হাট স্থাপনা ও পরিচালনা-সংক্রান্ত চুক্তি নবায়ন ও পুনঃস্বাক্ষরের জন্য খসড়া সম্প্রতি অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। এদিকে, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে হাট স্থাপন নিয়ে ২০১০ সালের ২৩ অক্টোবর একটি সমঝোতা চুক্তি এবং মুড অব অপারেশন অব বর্ডার হাটস চুক্তি স্বাক্ষর হয়। গত ২০১১ সাল থেকে এ পর্যন্ত চারটি হাট চালু করা হয়েছে। এসব হাটে দুই দেশের সীমান্ত এলাকার মানুষ প্রতি সপ্তাহে অন্য দেশের পণ্য বিনা শুল্কে কেনার সুযোগ পান। তিন বছরের চুক্তিতে হাট শুরু হলেও ২০১৫ সালে সে মেয়াদ পূর্ণ হয়ে যাওয়ার পর এখনও তা নবায়ন করা হয়নি। তবে হাটের কার্যক্রম চলছে। নতুন চুক্তি অনুযায়ী তিন বছর থেকে বাড়িয়ে এটি পাঁচ বছরের জন্য করা হবে। একই সঙ্গে নতুন চারটি হাট স্থাপনের পাশাপাশি বিক্রেতার সংখ্যা ২৫ থেকে বাড়িয়ে ৫০ এবং লেনদেনের সীমা ১০০ ডলার থেকে বাড়িয়ে ২০০ ডলার করা হবে। হাট পরিচালনায় জেলা প্রশাসক বা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। তবে জেলা প্রশাসকের অনুমোদনপ্রাপ্ত কর্মকর্তাও এ হাট পরিচালনা করতে পারবেন। গত ২০১১ সালের ২৩ জুলাই বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম জেলার বালিয়ামারী সীমান্ত ও ভারতের মেঘালয় রাজ্যের কালাইচর সীমান্ত এলাকায় প্রথম সীমান্ত হাটের যাত্রা শুরু হয়। এরপর ফেনীর ছাগলনাইয়া, সুনামগঞ্জের ডলুরা ও ত্রিপুরা রাজ্যের শ্রীনগর সীমান্তে হাট বসে। এছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা বর্ডার হাট চালু রয়েছে। জানা গেছে, চুক্তির মেয়াদ না থাকায় নতুন করে বর্ডার হাট স্থাপন হচ্ছে না। যদিও বাংলাদেশ ও ভারতের সম্মতিক্রমে সীমান্তে আরও ১৪টি হাট স্থাপনের তালিকা চূড়ান্ত হয়ে আছে। তবে প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন ভারত সফরের মধ্য দিয়ে বর্ডার হাট সমঝোতা চুক্তি নবায়নসহ আরও কিছু হাট স্থাপনের ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে বলে জানা গেছে। আগামী ৭ এপ্রিল থেকে চারদিনের জন্য প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর করবেন। তাঁর ওই সফরের সময় দ্বিপক্ষীয় ও বাণিজ্য সংক্রান্ত বেশ কিছু চুক্তি হওয়ার কথা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব শুভাশিষ বোস জনকণ্ঠকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের সময় দ্বিপক্ষীয় ও বাণিজ্য বিনিয়োগ সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বর্ডার হাট চুক্তি নবায়নের বিষয়টি রয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ থেকে উচ্চ পর্যায়ের একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হচ্ছেন। তাই ব্যবসায়ী পর্যায়ে বেশকিছু চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফরে বিভিন্ন বিষয়ে প্রায় ২৪টি চুক্তি, সমঝোতা স্মারক ও দলিলে সই হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র আভাস দিয়েছে। এসব চুক্তির মধ্যে তিস্তার পানি বণ্টন, গঙ্গা ব্যারেজ প্রকল্প, জলসীমায় সামরিক শক্তি বৃদ্ধি, গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি, ভারতের ভিসা প্রক্রিয়া সহজীকরণ, দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ প্রভৃতি বিষয় প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। সফরকালে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করা হবে। এছাড়া ট্যারিফ-নন ট্যারিফ ইস্যুতে ভারতের বাজারে বাংলাদেশী পণ্যের রফতানি বাড়ছে না। সম্প্রতি পাটপণ্যের ওপর এ্যান্টি-ডাম্পিং করায় রফতানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া ভারতের ভিসা প্রাপ্তিও সহজ বিষয় নয়। এসব বিষয়গুলো ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক তাবারুক তোসাদ্দেক হোসেন টিটু জনকণ্ঠকে বলেন, ভারতের সঙ্গে বড় অঙ্কের বাণিজি ঘাটতি রয়েছে। এই ঘাটতি দিন দিন বাড়ছে। অথচ শুল্ক-অশুল্কজনিত সমস্যাগুলো দূর করা হলে বাংলাদেশী পণ্যের রফতানি বাড়বে ভারতে। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার সুযোগ নিয়ে ভারতের বিনিয়োগকারীরা এদেশে বিনিয়োগ করতে পারেন। ভারতের সেভেন সিস্টারসে বিপুল পরিমাণ ভোগ্যপণ্যের চাহিদা রয়েছে। এছাড়া অন্যান্য পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। এই বাস্তবতায় ওই দেশের উদ্যোক্তারা পণ্য উৎপাদন করে আবার নিজদেশে বিক্রি করতে পারবেন। এতে করে বাংলাদেশ-ভারত উভয় দেশই লাভবান হতে পারবে। এছাড়া ভিসা সংক্রান্ত জটিলতা রয়েছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের সময় এই বিষয়গুলো ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে তুলে ধরা হবে। জানা গেছে, দুই দেশের মধ্যে সামরিক সহযোগিতা বাড়াতে ২৫ বছর মেয়াদী একটি চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য ভারতের পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে দুই দেশের উর্ধতন মহলে। এছাড়া বাণিজ্য সম্প্রসারণের বিষয়েও বিভিন্ন চুক্তি ও সমঝোতা হবে। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের অংশ হিসেবে গত ১৩ মার্চ ভারতীয় হাইকমিশনে দেশের অন্তত শীর্ষ ৩০ জন ব্যবসায়ীর সঙ্গে মতবিনিময় করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার। এছাড়া বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম ছাড়াও মংলা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার, পায়রা বন্দরে মাল্টিপারপাস (কন্টেইনার) টার্মিনাল নির্মাণ, লাইটহাউজেস ও লাইটশিপস, কোস্টাল ও প্রটোকল রুটে যাত্রী এবং ক্রুজ সার্ভিস-সংক্রান্ত বিষয়ে দুই দেশের সচিব পর্যায়ের বৈঠকে যে সমঝোতা স্মারক চূড়ান্ত হয়েছে, এবার তা চুক্তি হিসেবে রূপ নিতে পারে। ভোগ্যপণ্য আমদানি ॥ এতদিন ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভোগ্যপণ্য আমদানি করা হলেও এবার থেকে সরকার টু সরকার (জিটুজি) পদ্ধতিতে আমদানি করার উদ্যোগ নিচ্ছে টিসিবি। বিশেষ করে পেঁয়াজ, লবণ, চিনি, ডাল, রসুনসহ বিভিন্ন মসলা জাতীয় পণ্য আমদানি করা হবে। এ লক্ষ্যে স্টেট ট্রেডিং কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়ার (এসটিসিআই) সঙ্গে টিসিবির সমঝোতা স্বারক (এমওইউ) সই হবে। এই চুক্তির ফলে টিসিবি স্বল্প সময়ের নোটিসে টেন্ডার ছাড়াই পণ্য আমদানি করতে পারবে।
×