ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

অনলাইনে কেনাকাটা

প্রকাশিত: ০৪:০৯, ৩১ মার্চ ২০১৭

অনলাইনে কেনাকাটা

দোকানে গিয়ে জিনিসপত্র নেড়ে-চেড়ে দেখে, দাম-দস্তুর করে কেনাকাটা করা বাঙালী এখন অনলাইনে কেনাকাটায় আগ্রহী হয়ে উঠছে। উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও প্রসার ঘটছে অনলাইনে কেনাকাটার। ইন্টারনেট সহজ করে দিচ্ছে ক্রেতার জীবনাচরণ। চব্বিশ ঘণ্টারও কম সময়ে নিজের অর্ডার করা পণ্য ডেলিভারি পেয়ে ক্রেতারাও আগ্রহী হয়ে উঠছেন এই ব্যবস্থায়। হেন জিনিস নেই যা পাওয়া যায় না। পোশাক, দৃষ্টিনন্দন গহনা, ব্যাগ, প্রসাধন সামগ্রী, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও দ্রব্যের পাশাপাশি জায়গা-জমি, ফ্ল্যাট, আসবাবপত্র, মোবাইল, বইপত্র, কম্পিউটার, ইলেক্ট্রনিক পণ্য, নতুন-পুরাতন সব ধরনের পণ্য কেনাবেচা হচ্ছে অনলাইনে। ক্রেতাকে এখন আর যানজটে আটকে থেকে মার্কেটে মার্কেটে ঘুরে ক্লান্ত ও গরমে ঘেমে অস্থির হতে হচ্ছে না। পছন্দের পণ্যটাতে ক্লিক করলেই পৌঁছে যাচ্ছে ক্রেতাদের ঘরে ঘরে। জায়গা-জমি থেকে শুরু করে পোশাক সবই এই বাজারে পাওয়া যাওয়ার কারণে ক্রেতারাও খুশি। সময় বাঁচানো ও নিরাপত্তাজনিত কারণে দিন দিন ক্রেতারা অনলাইন কেনাকাটায় আগ্রহী হচ্ছেন। বিভিন্ন মার্কেট থেকে আলাদা আলাদা পণ্য সংগ্রহ করার ঝামেলা থেকে রেহাই মেলে। একই জায়গায় সব ধরনের পণ্য পাওয়ায় যাচাই-বাছাই করার সুযোগও থাকছে। এদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় গড়ে চার কোটি। অবশ্য বিশাল এ ব্যবহারকারীদের মধ্যে ক্ষুদ্র একটি অংশ অনলাইন কেনাকাটা বা ই-কমার্সের সঙ্গে জড়িত। দেশে প্রায় নয় হাজার অনলাইন শপিং গাইট ও ফেসবুক রয়েছে। আর এই মাধ্যমে প্রতিবছর পাঁচ শ’ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হচ্ছে। যা প্রতিনিয়তই বাড়ছে। কেনাকাটা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ সংক্রান্ত ওয়েবসাইটও বেড়ে চলেছে। অনেক ক্ষেত্রে পণ্যের দাম শপিংমলের দামের থেকেও কম থাকায় ক্রেতাদের আগ্রহ বাড়ছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশে এভাবে কেনাকাটার ধারণা থাকলেও বাংলাদেশে এই পদ্ধতি চালু হয়েছে বছর তিনেক আগে। দেশের অর্থনৈতিক ও ব্যবসায়িক কর্মকা-ে ইতিবাচক প্রভাব রাখছে এই মাধ্যম। সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে ভার্চুয়াল বিশ্বে মানুষের অংশগ্রহণ বাড়ছে। আধুনিক ইলেকট্রনিক কমার্সে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েভ ব্যবহার করে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। ই-কামার্স মূলত পাঁচভাবে হয়ে থাকে। ব্যবসা থেকে ব্যবসা, ব্যবসা থেকে গ্রাহক, ব্যবসা থেকে সরকার, গ্রাহক থেকে গ্রাহক ও মোবাইল কমার্স। ই-কমার্সের একটি অংশই অনলাইন কেনাকাটা। বর্তমানে প্রায় সব ই-কমার্স সাইট ক্যাম অন ডেলিভারি পদ্ধতিতে গ্রাহকের কাছে পণ্য পৌঁছে দিচ্ছে। অর্থ পরিশোধে পাওয়া যাচ্ছে ব্যাংক সহায়তাও। দেশী সাইটগুলোতে প্রবাসীরা পছন্দ অনুযায়ী পণ্য কিনে তা পাঠিয়ে দিতে পারেন দেশে থাকা প্রিয়জনদের কাছে। দোকান বা শপিংমলে যেভাবে পরখ করে পছন্দের পণ্যটি কেনা হয়, ঠিক সেভাবে অনলাইন শপে ঢুকে ছবি এবং দাম দেখে অনলাইনেও অর্ডার দেয়া হচ্ছে। ডেলিভারির সময় অর্ডার দেয়া জিনিস পেয়ে যাচাই করারও সুযোগ রয়েছে। পছন্দসই জিনিস না পেলে অর্ডার বাতিল করা যায়। মুদ্রার এপিঠ ইতিবাচক হলেও অপর পিঠে নেতিবাচক দিকও রয়েছে। ভুয়া ওয়েবসাইট খুলে, ক্রেতাদের চাহিদা প্রয়োজন বা সুবিধার কথা বিবেচনা না করে অনেক সময় নিম্নমানের পণ্যও সরবরাহ করা হয়। সাধারণের কাছে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়। ভুয়া অফার ও সঠিক সেবা না দেয়ার কারণে অনলাইন কেনাকাটায় ক্রেতা সন্দেহভাজন হতে বাধ্য। জনপ্রিয়তার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে প্রতারণাও। এসব প্রতারকের ব্যাপারে অভিযোগ জানানোর সুনির্দিষ্ট স্থান নেই। প্রতিকার মেলে না প্রতারিত হলেও। আশঙ্কাও থাকে, পণ্য সরবরাহের এই ক্ষেত্রটি যদি সন্ত্রাসীদের ব্যবহার ঘটায়। কলাবাগানে যে দুজন যুবককে জবাই করা হয়েছে, পণ্য ডেলিভারির নামে তাদের সঙ্গে সাক্ষাত করতে এসে হামলা চালানোর ঘটনা মানুষ বিস্মৃত হয়নি। অনলাইন শপিং নীতিমালা জরুরী হয়ে পড়েছে। সরকারের রাজস্ব আয়ের এই ক্ষেত্রটি নিয়ে কর্তৃপক্ষ যেন উদাসীন না থাকেন এবং এ ক্ষেত্রে গণমুখী পদক্ষেপ নেয়া হবে, এটাই প্রত্যাশা।
×