ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরে অভিন্ন ৪২টি নদীর পানি বন্টন সমস্যা সমাধানের আশাবাদ

প্রকাশিত: ০২:০৪, ৩০ মার্চ ২০১৭

প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরে অভিন্ন ৪২টি নদীর পানি বন্টন সমস্যা সমাধানের আশাবাদ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফরে তিস্তাসহ অভিন্ন ৪২টি নদীর পানি সমস্যার সমধান হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন দেশের বিশিষ্টজনরা। তারা বলেছেন, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে দেশের নৌ যোগাযোগ ব্যবস্থা এখন হুমকির মুখে। ক্ষমতাশীল লোকজন নদী দখল, দূষন সহ নানা অরাজগতা চালিয়ে যাচ্ছে। অথচ নৌ দুর্ঘটনা থেকে শুরু করে নদ-নদী সংক্রান্ত কোন অপরাধের বিচার হচ্ছে না। বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ‘বাংলাদেশের নদ-নদী ও নৌ পরিবহন ব্যবস্থা’ শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন ও প্রকাশনা অনুষ্ঠানে তারা একথা বলেন। মোড়ক উন্মোচন ও প্রকাশনা কমিটির আহ্বায়ক প্রবীণ রাজনীতিবিদ মনজুরুল আহসান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মীর শওকাত আলী বাদশা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান, ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত এবং নৌপরিবহন অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী এ কে এম ফখরুল ইসলাম। স্বাগত বক্তৃব্য রাখেন বইয়ের লেখক অনলাইন নিউজপোর্টাল পিটিবিনিউজ.কমের প্রধান সম্পাদক আশীষ কুমার দে। সাংবাদিক নিখিল ভদ্র’র সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল সংস্থার সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান বদিউজ্জামান বাদল, বুয়েট-এর অধ্যাপক ড. মীর তারেক আলী, প্রকাশনা কমিটির সদস্য সচিব রফিকুল ইসলাম সবুজ প্রমূখ। তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, নদ-নদী ও নৌ পরিবহন ব্যবস্থার গুরুত্ব উপলব্ধি করে বর্তমান সরকার বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন; যেগুলো পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়িত হচ্ছে। তবে সরকারের একার পক্ষে নদী রক্ষা সম্ভব নয়, এজন্য সংশ্লিষ্ট সকল মহলসহ সচেতন নাগরিকদেরও এগিয়ে আসতে হবে। নদী দূষণ, দখল ও ভরাটের বিরুদ্ধে সাধারণ জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা নদী নদী দখল ও দূষণের সঙ্গে যুক্ত। তারা নির্বিচারে অপরাধ করে যাচ্ছে। অপকর্মকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সময় এসেছে। মীর শওকাত আলী বাদশা বলেন, দেশকে বাঁচাতে হলে অবশ্যই নদ-নদীসহ সকল প্রাকৃতিক পানিসম্পদ রক্ষা করতে হবে। এ বিষয়ে সরকারের মনোভাব যেমন ইতিবাচক, তেমনি গণমাধ্যম পরিবেশকর্মী ও সামাজিক সংগঠনগুলোর ভূমিকাও প্রশংসনীয়। তবে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। নদী রক্ষা ও নৌ চলাচল ব্যবস্থার উন্নয়নে সংসদ সদস্যসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট সরকারী সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে জেলাভিত্তিক কমিটি গঠন করার পরামর্শ দেন তিনি। অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, নদীর অপরিহার্যতা অনস্বীকার্য। বন্যা ও ভাঙনের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা এবং পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে নদীসহ আমাদের সকল উন্মুক্ত জলসম্পদ রক্ষা করতে হবে। নদীগুলো যথাযথভাবে সংরক্ষণের জন্য নৌপথ সচল রাখার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটানোর আহ্বান জানান তিনি। সাংবাদিক শ্যামল দত্ত বলেন, বাংলাদেশের নৌ পরিবহন ব্যবস্থা আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের শিকার। বহুজাতিক অটোমোবাইল কোম্পানিগুলো মুনাফার লোভে সহজ শর্তে এদেশে বাস, ট্রাক, প্রাইভেটকারসহ বিভিন্ন ধরনের সড়কযান ও যন্ত্রাংশ বিক্রি করছে। ফলে সড়ক ব্যবস্থা সম্প্রসারিত হলে নৌপথ সংকুচিত হয়েছে। তাই নদীগুলো যথাযথভাবে সংরক্ষণের জন্য নৌপথ সচল রাখার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে হবে। তিনি বলেন, অব্যবস্থাপনা ও বিচারহীনতার কারণে গোটা নৌ সেক্টর আজ হুমকির মুখে। উল্লেখ্য, সাংবাদিক আশীষ কুমার দে’ লেখা আলোচ্য গ্রন্থটিতে নদ-নদীর পরিসংখ্যান, সেগুলোর অতীত ও বর্তমান পরিস্থিতি, নদী ও নৌপথ বিলুপ্তির কারণ, প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা ও জাতীয় জীবনে নদ-নদী ও উন্মুক্ত জলাভূমির গুরুত্ব, বিলুপ্ত নদী ও নৌপথ পুনরুদ্ধার ও নৌ পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নে বর্তমান সরকারের গৃহিত পদক্ষেপসমূহ তুলে ধরা হয়েছে। বইয়ে ঢাকার চারপাশের নদীগুলো মারাত্মক দূষণ ও দখল এবং এবং ১৯৬৭ সাল থেকে নৌ দুর্ঘটনা, প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ রয়েছে। এছাড়া অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচলের ক্ষেত্রে বিরাজমান সমস্যাসমূহ, উত্তরণের পথ এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোর অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা ও প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা সম্পর্কেও বিস্তারিত বিরবরণ রয়েছে। অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, ভৌগলিক কারণেই নদ-নদী ও বাংলাদেশ-পরস্পর অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। বন্যা ও ভাঙনের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা এবং পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে নদীসহ আমাদের সকল উন্মুক্ত জলসম্পদ রক্ষা করতে হবে। আর নদীগুলো যথাযথভাবে সংরক্ষণের জন্য নৌপথ সচল রাখার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে হবে। অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, নদীর অপরিহার্যতা অনস্বীকার্য। বন্যা ও ভাঙনের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা এবং পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে নদীসহ আমাদের সকল উন্মুক্ত জলসম্পদ রক্ষা করতে হবে।
×