ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

৬ এপ্রিলের মধ্যে ট্যানারি স্থানান্তরে আপিল বিভাগের নির্দেশ

প্রকাশিত: ১৮:৩২, ৩০ মার্চ ২০১৭

৬ এপ্রিলের মধ্যে ট্যানারি স্থানান্তরে আপিল বিভাগের নির্দেশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আগামী ৬ এপ্রিলের মধ্যেই হাজারীবাগে থাকা সকল ট্যানারির কার্যক্রম স্থানান্তরের নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। আদালত আজ বৃহস্পতিবার বলেছে, এই সময়ের মধ্যে হাজারীবাগে চলা ট্যানারি বন্ধ করে আসুন। তখন ৩১ কোটি টাকা জরিমানা প্রদানের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। গত ৬ মার্চ হাইকোর্ট এক আদেশে হাজারীবাগে থাকা সকল ট্যানারির কার্যক্রম অবিলম্বে বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিল। একই সঙ্গে গ্যাস বিদ্যুৎ ও পানি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালককে বলা হয়। কিন্তু ট্যানারি মালিকরা হাইকোর্টের এই আদেশ কার্যকরের ক্ষেত্র নানা ভাবে সময়ক্ষেপণ করছিল। একই সঙ্গে তারা হাইকোর্টের আদেশ সংশোধন চেয়েও আবেদন করে। কিন্তু হাইকোর্ট ঐ আবেদন খারিজ করে দেয় এবং পরবর্তীতে আপিল বিভাগ তা বহাল রাখে। এর মধ্যে গত ২ মার্চ ১৫৪ ট্যানারিকে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে পরিবেশের ক্ষতিপূরণ বাবদ ৩১ কোটি টাকা জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়। ট্যানারি মালিকরা হাইকোর্টের এই আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে। আজ আবেদনের পক্ষে ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস শুনানি করেন। শুনানি শেষে আপিল বিভাগ ৬ এপ্রিলের মধ্যে ট্যানারি সরানোর নির্দেশ দিয়ে জরিমানার বিষয়টি বিবেচনার জন্য ৯ এপ্রিল আদেশের জন্য দিন ধার্য রাখেন। বাংলাদেশ সরকার ১৯৮৬ সালে ৯০৩টি শিল্প কারখানাকে পরিবেশ দূষণকারী হিসাবে চিহ্নিত করে। এর মধ্যে হাজারীবাগের চামড়া শিল্পগুলো ছিল অন্যতম। শিল্প কারখানার পরিবেশ দূষণরোধে নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে ১৯৯৪ সালে রিট করেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)। ওই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ২০০১ সালে ‘লাল’ শ্রেণীভুক্ত সকল শিল্প প্রতিষ্ঠানকে এক বছরের মধ্যে পরিবেশ দূষণরোধে প্রয়োজনীয় কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেয়। আদালতের এ আদেশ বাস্তবায়িত না হওয়ায় বেলা প্রয়োজনীয় নির্দেশ চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন দাখিল করে। বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক ও বিচারপতি মো: মমতাজ উদ্দিন আহমেদের ডিভিশন ২০০৯ সালের ২৩ জুন এক আদেশ দেন। ওই আদেশে ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে হাজারীবাগে অবস্থিত সকল ট্যানারি স্থানান্তরের নির্দেশ দেয়া হয়। পাশাপাশি স্থানান্তরে ব্যর্থ হলে পরিবেশ অধিদফতরকে ট্যানারি কারখানাগুলো বন্ধের নির্দেশ দেয়। পরবর্তীতে শিল্প মন্ত্রণালয় কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার নির্মাণের জন্য দফায় দফায় আদালতে সময়সীমা বৃদ্ধির আবেদন করেন। ২০১০ সালের ৩০ অক্টোবর ছয় মাসের জন্য হাইকোর্ট সময় বর্ধিত করে। পরবর্তীতে শিল্প মন্ত্রণালয় আরো ২ বার অর্থাৎ গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগারের নির্মাণ সময় বাড়ানোর আবেদন করলেও আদালত সময় বাড়ানোর কোন নির্দেশ দেয়নি। সর্বশেষ শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব একতরফা ভাবে আদালতের অনুমতি ছাড়া হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি স্থানান্তরের সময়সীমা চলতি বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। এই সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে গত ৩ জানুয়ারি হাইকোর্টে আবেদন করে বেলা। ওই আবেদনে শিল্প সচিবের সময়সীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণার পাশাপাশি হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের ৪(৩) ও ৪(ক) ধারা অনুসরণ করে পরিবেশ অধিদফতরকে হাজারীবাগের ট্যানারি বন্ধের নির্দেশনা প্রদানের আবেদন করে বেলা।
×