ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ইরানকে চাপে রাখার চেষ্টা

প্রকাশিত: ০৬:৩৪, ২৯ মার্চ ২০১৭

ইরানকে চাপে রাখার চেষ্টা

ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যে যতই বিশৃঙ্খলা, বিভ্রান্তি ও অসঙ্গতি থাক না কেন, একটা ইস্যুতে গোটা প্রশাসন ঐক্যবদ্ধ বলে মনে হয়। আর সেটা হলো ইরান। ট্রাম্প প্রশাসন মনে করে যে ২০১৫ সালের মাঝামাঝি ইরান চুক্তি হওয়ার পর থেকে তেহরান এই চুক্তির সুযোগে বিদেশে আটকে থাকা প্রায় ১০ হাজার কোটি ডলার মূল্যের পরিসম্পদ ছাড়িয়ে নিয়েছে এবং আগের চেয়ে আরও সাহসিকতার সঙ্গে নিজের শক্তিকে জাহির করার চেষ্টা করছে। ইরানের এই অবস্থা যুক্তরাষ্ট্র মানতে নারাজ। বরং সে তেহরানকে চাপে রাখতে চায়। চুক্তি হওয়ার পর থেকে সিরিয়ার বাশার সরকারের প্রতি ইরানের সাহায্য-সমর্থন এমনভাবে বেড়ে গেছে যে, রাশিয়ার বিমান সমর্থনে বলীয়ান হয়ে এই সরকারের আপাতত টিকে যাওয়ার ব্যাপারটি সুনিশ্চিত হয়েছে। অন্যদিকে সিরিয়ার মাটিতে যুদ্ধরত লেবাননের শিয়া মিলিশিয়া হিজবুল্লাহকে ভারি অস্ত্র সরবরাহে ইরান রাশিয়ার সঙ্গে একযোগে কাজ করেছে। ইরান ইরাক, আফগানিস্তান ও পাকিস্তান থেকে অন্য শিয়া মিলিশিয়ারা মার্কিন সমর্থিত ইরাকী বাহিনীর পাশে দাঁড়িয়ে আইএসের বিরুদ্ধে লড়ছে বটে। তবে মসুল থেকে আইএস উৎখাত হয়ে গেলে ইরান ইরাককে তার ওপর নির্ভরশীল করে তুলতে আপ্রাণ চেষ্টা করবে। ওদিকে ইয়েমেনে উপসাগরীয় সুন্নি আরব ও হুতি শিয়া বিদ্রোহীদের মধ্যে যে গৃহযুদ্ধ চলছে তাতে হুতিদের অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ যোগাচ্ছে ইরান। অস্ত্রের মধ্যে জাহাজবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রও আছে যা লোহিত সাগরে মার্কিন জাহাজ লক্ষ্য করে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। এদিকে স্বদেশে ইরান বেশ কয়েকটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে যেগুলো পারমাণবিক বোমা বহনে সক্ষম। গত ২৯ জানুয়ারি সর্বশেষ পরীক্ষার প্রেক্ষাপটে মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয় এই ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচীর সঙ্গে যুক্ত বেশ কিছু ব্যক্তি ও কোম্পানির ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। সামগ্রিকভাবে এসব বিচারে ট্রাম্প প্রশাসন মনে করছে যে, ইরানকে মোকাবেলা করতে হবে এবং ঠেলে পেছনে হটিয়ে দিতে হবে। আর সেটা করতে গেলে আমেরিকার আরেক মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি দেখা দেবে এবং ওই অঞ্চল নতুন করে টালমাটাল হয়ে উঠবে। এতে ইরান পরমাণু চুক্তির ভবিষ্যত কি হবে তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয়-সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে। ট্রাম্প ইতোমধ্যেই এই চুক্তিকে ইতিহাসের জঘন্যতম চুক্তি বলে অভিহিত করেছেন। কংগ্রেসের রিপাবলিকান সদস্যদেরও এই চুক্তির প্রতি তেমন একটা সহানুভূতি নেই। তবে প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস মাতিস ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের পরিপ্রেক্ষিতে বলা চলে যে, আমেরিকা একতরফাভাবে চুক্তিটি সম্ভবত বাতিল করতে যাবে না। সেক্ষেত্রে ইরানকে চাপে রাখার জন্য কি করতে পারে আমেরিকা? খুব সম্ভব আমেরিকা ইরান চুক্তিটি কঠোরভাবে বলবৎ করার ওপর জোর দেবে। ছোটখাটো লঙ্ঘন বা বরখেলাপ বরদাশত করতে চাইবে না। সম্প্রতি ইরান তার রিএ্যাক্টরগুলোর জন্য বরাদ্দ পরিমাণের চাইতে বেশি পরিমাণে হেভিওয়াটার রেখেছে। চুক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে লঙ্ঘন করেছে প্রমাণিত হলে আমেরিকা তখন চুক্তি স্বাক্ষরকারী অন্যান্য দেশকে ইরানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য চাপ দেবে। পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে ইরানের ওপর আরোপিত পরমাণু বিষয়ক নিষেধাজ্ঞাই কেবল প্রত্যাহৃত হয়েছে। অন্যান্য নিষেধাজ্ঞা যথারীতি বলবৎ। দরকার হলে আমেরিকা নতুন নিষেধাজ্ঞাও দিতে পারে। নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র ইরান মোকাবেলার নীতি নিতে পারে। বাগদাদ থেকে দামেস্ক হয়ে বৈরুত পর্যন্ত এটি একটি অর্ধচন্দ্রের মতো এলাকা। এই এলাকার ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা ইরানের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য্য অর্জনে ইরানকে বাধা দেয়ার জন্য প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস মাতিসকে একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে বলা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে ইয়েমেনে সৌদি ও আমিরাতীদের সরাসরি সাহায্য-সহযোগিতা আরও বাড়িয়ে তোলা হতে পারে। ইরান থেকে হুতিদের অস্ত্র সাহায্য লাভ বন্ধের জন্য আন্তর্জাতিক জলসীমায় আমেরিকার আক্রমণাত্মক টহল বেড়ে যেতে পারে। সিরিয়ায় রাশিয়া ও ইরানের মধ্যে যে একটা মৈত্রী আছে তাতে ভাঙ্গন ধরানোর চেষ্টা করবে আমেরিকা। তার অংশ হিসেবে মস্কোকে আইএসের বিরুদ্ধে সামরিক সহযোগিতার অফার দেয়া হবে এবং সিরিয়া সমস্যার ভবিষ্যত সমাধানের শর্তাবলী নির্ধারণে রাশিয়ার ভূমিকা স্বীকার করে নেয়া হবে। সেটা ব্যর্থও হতে পারে এবং সেক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র ঠিক করতে পারে যে, সিরিয়ায় তার যে বিশেষ বাহিনী আছে সেটার সংখ্যা আরও বাড়িয়ে তুলতে হবে। তবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে ইরাক। সে দেশে এখন মার্কিন সৈন্য আছে ৬ হাজার। মসুলের পতন যদি ঘটে তারপরও বেশ কিছু সময়ের জন্য এই সৈন্যদের ইরাকে রাখার প্রয়োজন হবে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র জানে এই বাহিনী ও তার রাজনৈতিক প্রভাব যদি না থাকে তাহলে ইরাকে ইরানের পছন্দমতো নতুন সরকার গঠন ঠেকানো যাবে না। চলমান ডেস্ক সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×