ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর ॥ উত্তপ্ত এশিয়া

প্রকাশিত: ০৬:৩৩, ২৯ মার্চ ২০১৭

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর ॥ উত্তপ্ত এশিয়া

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনের প্রথম এশিয়া সফরে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে এশিয়ার রাজনৈতিক হাওয়া। তার বার্তা পরিষ্কার উত্তর কোরিয়া বিষয়ে ওবামার ধীরে চলার দিন শেষ। গত শক্রবার তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দেন উত্তর কোরিয়া আর চীন নিয়ে ওবামার ‘ধীরে চলার নীতি আর নয়।’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিবেচনা করছে অন্য সব বিকল্প যার মধ্যে আছে সামরিক শক্তি প্রয়োগের বিষয়টিও। দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়ুন বুয়ংসির সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে টিলারসন চায়নার কাছে আবেদন রাখেন দক্ষিণ কোরিয়ার জন্য ক্ষতিকর অর্থনৈতিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি মার্কিন মিসাইল শিল্ড গড়ে তোলার বিরোধিতা পরিত্যাগ করতে। তিনি এই বিরোধিতাকে আখ্যায়িত করেন অযৌক্তি, অপ্রাসঙ্গিক ও বিরক্তিকর। রেক্স টিলারসন পরিষ্কার জানিয়ে দেন, উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সমাধানের গত দু’দশক ধরে চেষ্টার ফল শূন্য। ধৈর্য নিয়ে পথ চলার দিন শেষ। আমরা কূটনীতি, নিরাপত্তা আর অর্থনীতির নতুন যুগে পা রাখতে যাচ্ছি। তার এই বার্তা ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর সতর্কবাণী বলেই বিবেচিত হচ্ছে পাশাপাশি ট্রাম্প যে তার পূর্বসূরিদের পথ থেকে সরে আসছেন এটিও পরিষ্কার। রেক্সের মতে আমরা সামরিক সংঘাতে জড়াতে চাই না এটি পরিষ্কার।তবে উত্তর কোরিয়া যদি তার হুমকিকে কার্যে পরিণত করে, দক্ষিণ কোরিয়া আর আমাদের সৈন্যদের ওপর কোন প্রকার শক্তি প্রয়োগ করে সেক্ষেত্রে আমরাও সমুচিত জবাব দেব। এমনকি উত্তর কোরিয়ার সামরিক শক্তি বৃদ্ধি যদি আমাদের জন্য হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়ায় সে ক্ষেত্রেও আমরা সামরিক শক্তি প্রদর্শনে বাধ্য। টিলারসনের এই সফরকে গণ্য করা হচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন বার্তা পৌঁছে দেয়ার সফরে। যেখানে তিনি পা রাখছেন সিউল, পিয়ংইয়ং আর টোকিওতে। চায়নার উদ্দেশে তিনি বলেন, আমরা মনে করি সবার জন্য হুমকি হয়ে ওঠা একটি রাষ্ট্রকে আঞ্চলিক পরাশক্তি হিসেবে চায়না যে সমর্থন দিচ্ছে তা ঠিক নয়। তিনি আশা করেন চায়না দক্ষিণ কোরিয়াকে শায়েস্তা করার পথ পরিত্যাগ করবে। তিনি আরও বলেন থাড ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের বিরোধিতা না করে চায়না তার কারণ নির্মূলে আমাদের সঙ্গে কাজ করবে। এক্সন মোবিনের এই প্রাক্তন সিইও দিনের শুরুতে ওসান এয়ার বেজে নেমে পরিদর্শন করেন দুই কোরিয়ার সীমান্তে নিরপেক্ষ এলাকা। পরে দুপুরে খাবার গ্রহন করেন যৌথ নিরাপত্তা জোনের রক্ষার দায়িত্বরত সৈন্যদের সঙ্গে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পূর্বে তিনি দেখা করেন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী হুয়াং কিও আহনের সঙ্গে। তবে টিলারসনের এই বার্তা আগামী ৯ মে নির্বাচিত হতে যাওয়া দক্ষিণ কোরিয়ার নতুন নেতৃত্বের সঙ্গে কোন সংঘাত তৈরি করবে কিনা তাও বিবেচনায় নিতে হবে। এই মুহূর্তে নির্বাচনী দৌড়ে এগিয়ে আছেন মুন-জে-ইন যিনি উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সামরিক সংঘাতের চাইতে কৌশলগত সমঝোতায় বেশি আগ্রহী। তিনি এবং তার দল ‘থাড’ মোতায়নে রক্ষণশীল অবস্থানে আছেন। এ ছাড়াও যুদ্ধকালীন যৌন দাসত্বের বিষয়ে টোকিওর সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তিটির পুনর্বিবেচনা দাবি করছেন। যে বিষয়ে টিলারসন গত বৃহস্পতিবার টোকিওর প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করছেন। আর টিলারসন আশা করছেন দক্ষিণ কোরিয়ার পরবর্তী নেতৃত্বের সঙ্গে একটি কার্যকরী সম্পর্কের বিষয়ে যারা তাদের থাড মোতায়েন পরিকল্পনার বিষয়ে অব্যাহত সমর্থন দিয়ে যাবে। টিলারসনের প্রতিপক্ষ ইয়ুন তার প্রতিবেশী কমিউনিস্ট উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক শক্তি প্রয়োগের পক্ষে কথা বলেন। তার ভাষায় উত্তর কোরিয়া এক ভয়ঙ্কর হুমকি তাকে প্রতিরোধে বহুমুখী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তিনি।প্রধানমন্ত্রী তার দেশে আপাত নেতৃত্ব সঙ্কটের মাঝে টিলারসনের এই সফরকে স্বাগত জানিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তার ফোনালাপ উদ্ধৃত করে বলেন, আমাদের বন্ধুত্ব পরিক্ষীত এবং কেবল উত্তর কোরিয়া নয় যে কোন বৈশ্বিক ইস্যুতে আমরা এক সঙ্গে পথ চলব। অন্য একটি সূত্র জানায় টিলারসন জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ২ ঘণ্টার অধিক সময় ব্যয় করেন। ডিনারও করেন অথচ দক্ষিণ কোরিয়ান প্রতিপক্ষকে তুলনামূলকভাবে সময় দিয়েছেন অনেক কম আর সেখানে লাঞ্চ বা ডিনারও ছিল না কর্মসূচীতে। অপরদিকে টিলারসনের এই সফর নিয়ে তার স্বদেশে ঝড় উঠেছে অন্য কারণে। তিনি এ সফরে দীর্ঘদিনের প্রথা ভেঙ্গে বর্জন করেছেন সংবাদকর্মীদের। তার ভাষায়, ”আমি মিডিয়ার সামনে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি না আর ব্যক্তিগতভাবে আমি এর কোন প্রয়োজনও বোধ করি না।” ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের মালিকানাধীন একটি সংবাদ মাধ্যমকে এক সাক্ষাতকারে তিনি জানান। ‘এই সিদ্ধান্তের প্রধান কারণ ব্যয় সঙ্কোচন, আর অপর কারণটি হলো তিনি বন্ধ দরজার ওপারে কাজ করতে পছন্দ করেন।’ তার বার্তা এক্ষেত্রেও পরিষ্কার ‘মার্কিন ডিপ্লোম্যাটিক মিশন নিয়ে সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে আলোচনার তেমন কোন ইচ্ছাই তার নেই।’ সব মিলিয়ে বলাই যায় ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে তার এই প্রথম সফর বেশ সাড়া জাগানো। তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ যা তিনি সরাসরি বলেননি কিন্তু ইঙ্গিত করেছেন সেটি। তার ইঙ্গিতপূর্ণ বার্তার মূল লক্ষ্য ছিল এশিয়ার অন্যতম পরাশক্তি চায়না। আর চায়না এই হুমকিতে পিছিয়ে যাবে এটি ভাবার কোন কারণ নেই। টিলারসনের মিত্র দক্ষিণ কোরিয়ার স্বার্থে শক্তি প্রয়োগের স্পষ্ট বার্তাটিও উত্তপ্ত করে তুলবে এশিয়ার রাজনৈতিক হাওয়া। সূত্র : গার্ডিয়ান
×