ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মাহিয়ান দ্বীপ

সুইস মিস হিঙ্গিসের রাজত্ব অব্যাহত

প্রকাশিত: ০৬:৩২, ২৯ মার্চ ২০১৭

সুইস মিস হিঙ্গিসের রাজত্ব অব্যাহত

বয়সে ছত্রিশকেও ছাড়িয়ে গেছেন মার্টিনা হিঙ্গিস। টেনিস কোর্টে এখনও দুর্বার! এই বয়সেও টেনিসের দ্বৈতে রাজত্ব করছেন তিনি। সম্প্রতি বিএনপি পরিবাস ওপেনের শিরোপাও নিজের শোকেসে তুলেছেন সুইজারল্যান্ডের এই জীবন্ত কিংবদন্তি। এবার তার সঙ্গী ছিলেন উং-জান চান। চাইনিজ তাইপের এই টেনিস খেলোয়াড়কে নিয়ে প্রথমবারের মতো কোন শিরোপা জয়ের স্বাদ পেলেন মার্টিনা হিঙ্গিস। এর আগে কাতার ওপেন এবং দুবাই চ্যাম্পিয়নশিপেও জুটি বেঁধে কোর্টে নেমেছিলেন তারা। কিন্তু সেই দুটি টুর্নামেন্টে নিজেদের মেলে ধরতে পারেনি হিঙ্গিস-চান জুটি। তবে সেই সময়টাতে নিজেদের মধ্যে দারুণ একটা বোঝাপড়া সম্পন্ন হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তারা। টেনিস জগতে সব সময় সুন্দরীদের আগমন ঘটে থাকে। তবে তাদের বেশিরভাগই ভাল ফলাফল না করেই সময়ের স্রোতে হারিয়ে যায়। তবে এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম মার্টিনা হিঙ্গিস। মাত্র দুবছর বয়সেই হাতে র‌্যাকেট তুলে নেন তিনি। বিস্ময়করভাবে মাত্র চার বছরে প্রথম টুর্নামেন্ট খেলে ফেলেন হিঙ্গিস। বারোয় প্রথম গ্র্যান্ডসøাম জুনিয়র খেতাব উইলম্বডন। চৌদ্দতে পা দিতে না দিতেই পেশাদার হিসেবে আত্মপ্রকাশ। ষোড়শ জন্মদিনের তিন মাস আগেই সর্বকালের সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে গ্র্যান্ডসøাম জয়ের অবিস্বরণীয় কীর্তি গড়েন। এক বছরের মধ্যে বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থানটিও দখল করে নেন তিনি। সুদীর্ঘ ক্যারিয়ারে সর্বমোট ২০৯ সপ্তাহ শীর্ষে থাকার গৌরব অর্জন করেছেন হিঙ্গিস। তবে একের পর এক ট্রফির পাশাপাশি তার সঙ্গী ছিল নানান বিতর্কও! গোড়ালির চোটের নির্মম ধাক্কায় মাত্র বাইশ বছর বয়সেই অবসর নিতে বাধ্য হওয়া, জুতা স্পন্সরের গাফিলতিকে সেই চোটের কারণ হিসেবে দেখিয়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা, নিজের মাকে কোচের চাকরি থেকে তাড়িয়ে দেয়ার দুই মাসের মধ্যে আবারও তাকে ফিরিয়ে আনা, এক ধরনের কোকেন নেয়ার শাস্তি হিসেবে দুই বছরের নির্বাসন (২০০৮), একাধিকবার অবসর ভেঙ্গে কোর্টে ফেরা এবং সবশেষে স্বপ্নের প্রত্যাবর্তন। তবে এই মার্টিনা হিঙ্গিস একটা সময় খুবই দাম্ভিক ছিলেন। এতটাই অহঙ্কারী ছিলেন, তাকে নিয়ে একটা কৌতুকও চালু হয়ে গিয়েছিল। বলা হতো, হিঙ্গিসের প্রতিভা তর্কাতীত। তবে ডাবলসে একটাই দুর্বলতা- ওটা অন্য আর একজনের সঙ্গে মিলে খেলতে হয়। ১৯৯৮ সালে যেমন তার জেতা চারটি গ্র্যান্ডসøামের মধ্যে তিনটিতেই হিঙ্গিসের সঙ্গী ছিলেন চেকপ্রজাতন্ত্রের ইয়ানা নোভতœা। অথচ বছর ঘুরতে না ঘুরতে তিরিশ বছরের ইয়ানাকে বড্ড বুড়ো এবং সেøা বলে বিদায় করে দেন সুইস তারকা। এর পরের পার্টনারের নাম রাশিয়ার আনা কুর্নিকোভা। কিন্তু তাদের সম্পর্কও খুব বেশি দিন টিকেনি। ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেনে ডাবলস চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ের কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই একে অন্যের বিরুদ্ধে প্রদর্শনী একক ম্যাচ খেলতে নেমেই যা প্রকাশ্যে চলে আসে। একটা লাইন কল নিয়ে কথা-কাটাকাটির জেরে হিঙ্গিস চেঁচিয়ে ওঠে কুর্নিকোভাকে বলে বসেন, তুমি কি ভাবছ তুমি রানী? কারণ ওটা কিন্তু তুমি নও, রানি আমিই! লকাররুমে গিয়েও চেঁচামেচি তো থামেইনি, বরং তাতে যোগ হয়েছিল ফুলদানি ছোড়াও। কুর্নিকোভার পরে আরেক নাম্বার ওয়ান মনিকা সেলেস। সেলেসের পরে সাবিনে লিসিকি। তারপর ফ্লাভিয়া পেনেত্তা-ভেরা জোনারেভা...। সর্বশেষ সম্পর্কছেদ হয়েছে দারুণ জমে ওঠা ভারতের সানিয়া মির্জার সঙ্গেও। গত বছর রিও অলিম্পিকে ডাবলসে ব্যর্থ হওয়ার পরই ফাটল ধরে সানিয়া মির্জা-মার্টিনা হিঙ্গিস জুটির। বিভিন্ন কারণে মতবিরোধ হওয়ার জন্যই তারা আর একসঙ্গে না খেলার সিদ্ধান্ত নেন। ২০১৫ সালে হিঙ্গিসের সঙ্গে জুটি বাঁধেন সানিয়া। সে বছরই অভাবনীয় সাফল্য পায় এই তারকা জুটি। উইম্বলডন, ইউএস ওপেন ও অস্ট্রেলীয় ওপেন জিতে নেন তারা। সেই সঙ্গে টানা ৪১টি ম্যাচে অপরাজিত থাকার রেকর্ডও গড়েন এই ইন্দো-সুইস জুটি। গত বছরের শুরুতেই কাতার ওপেনে প্রথম ব্যর্থ হন তারা। তখন থেকেই মনোমালিন্য শুরু হয় দুজনের। অনুশীলনে অনুপস্থিত থাকতে শুরু করেন হিঙ্গিস? একপর্যায়ে সম্পর্কের ইতি টানেন তারা। কথায় আছে, যত ঘন ঘন প্রেমিক পাল্টেছেন হিঙ্গিস, প্রায় সেই গতিতে পাল্টেছে তার কোর্ট-সঙ্গীদের নামও। কিংবদন্তি মার্টিনা নাভ্রাতিলোভার নামে মেয়ের নাম রেখেছিলেন হিঙ্গিসের বাবা-মা। নাভ্রাতিলোভার সরণি ছুঁতে পারেননি তো কী, টেনিসের ইতিহাস বইয়ে হিঙ্গিস নিজের জন্য বেশ বড়সড় জায়গা ছিনিয়ে নিয়েছেন। টেনিস পার্টনারের মতো তার লাইফ পার্টনারের সংখ্যাও অগণিত। তার বয়ফ্রেন্ড হিসেবে রয়েছে সুইডিস টেনিস খেলোয়াড় ম্যাগনাস নরম্যান, স্প্যানিশ গলফার সার্জিও গার্সিয়া, চেক তারকা রাদেক স্টেপানেক, সাবেক টেনিস তারকা ইভো হেবার্গার, জুলিয়ান আলোপ্সোর নাম। তাদের সঙ্গে চুটিয়ে ডেটিং করেছেন সুইস সুন্দরী। ২০১০ সালে বিয়ে করেন ফরাসী ইকুয়েস্ট্রিয়ান থিবাও হুতিনকে। কিন্তু ২০১৩ সালে মার্টিনা সবাইকে অবাক করে ঘোষণা দেন তিনি বর্তমানে সিঙ্গেল। বিশ্বের অনেক পত্রিকায় তাকে নিয়ে কাভার স্টোরি করেছে। জানিয়ে রাখা ভাল যে, সুদীর্ঘ ক্যারিয়ারে মহিলা এককে ৪৩টি ডব্লিউটিএ শিরোপা জয়ের স্বাদ পেয়েছেন মার্টিনা হিঙ্গিস। যার মধ্যে পাঁচটি গ্র্যান্ডসøাম টুর্নামেন্ট। দ্বৈতে তার শিরোপা জয়ের সংখ্যাটা আরও বেশি। ১২টি মেজর টুর্নামেন্টসহ সর্বমোট ৫৬টি।
×