ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শ্রাবনী আক্তার সান

ওয়ানডেতেও মিরাজের স্বপ্নের অভিষেক

প্রকাশিত: ০৬:৩২, ২৯ মার্চ ২০১৭

ওয়ানডেতেও মিরাজের স্বপ্নের অভিষেক

গত বছর ঘরের মাটিতে মেহেদী হাসান মিরাজের টেস্ট অভিষেক। চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম ইনিংসেই ৬ উইকেট, দ্বিতীয় ইনিংসে ১। ম্যাচে ৭ উইকেট নিলেও টেস্টটা ২২ রানে হেরেছিল বাংলাদেশ। দুই ইনিংসে ১২ উইকেট নিয়ে মিরুপুরে দ্বিতীয় টেস্টে ঐতিহাসিক জয়ের নায়ক মিরাজ তুলে নিয়েছিলেন সিরিজ সেরার পুরস্কার। আর শ্রীলঙ্কা সফরে ডাম্বুলায় অভিষেক ওয়ানডেতে ৪৩ রানে ২ উইকেট। জীবনের প্রথম রঙিন পোশাক গায়ে টাইগারদের বড় জয়ের সঙ্গী হয়েছেন। ‘টেস্টে অভিষেক হয়েছিল ৭ উইকেট নিয়ে। কিন্তু ম্যাচটি আমরা জিততে পারিনি। ওয়ানডে অভিষেকে ম্যাচ জিতেছি। আমার কাছে মনে হয়, ওয়ানডে অভিষেক অনেক ভাল হয়েছে।’ প্রতিক্রিয়ায় বলেন তরুণ অলরাউন্ডার। তিনি আরও যোগ করেন, ‘সত্যি বলতে দুই ফরমেটেই স্বপ্নের মতো অভিষেক হয়েছে। যে রকম চেয়েছিলাম সেভাবেই হয়েছে। এটা এখন ধরে রাখতে হবে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অনেক কঠিন। এখানে কিন্তু টিকে থাকতে হলে দিন দিন উন্নতি করতে হবে। কারণ, প্রতিপক্ষ সব সময় আমাকে নিয়ে গবেষণা করবে। এক জায়গায় থেমে থাকলে হবে না। অনেক কষ্ট করতে হবে।’ অথচ মিরাজের ওয়ানডে অভিষেকটা বেশ নাটকীয়ভাবেই হয়েছে। কলম্বোয় ঐতিহাসিক শততম টেস্টে জয়ের পর তাকে দেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল। ঘরের মাটিতে ইমার্জিং কাপের স্কোয়াডেও ছিলেন; বলেছিলেন, যেখানেই পান সুযোগটা কাজে লাগিয়ে রঙিন পোশাকের ক্রিকেটেও সুযোগ করে নিতে চান। কিন্তু সেটা এত দ্রুত ঘটবে, মিরাজ নিজেও হয়ত ভাবেননি। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদনী নান্নু জানিয়েছিলেন, প্রতিপক্ষ লঙ্কান দলে একাধিক বাহাতি ব্যাটসম্যানের বিষয়টি মাথায় রেখেই ১৯ বছর বয়সী আলোচিত ডানহাতি অফস্পিনিং-অলরাউন্ডারকে ওয়ানডেতেও নেয়া হয়েছে। ‘শ্রীলঙ্কার ওয়ানডে দলে পাঁচজন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান আছে। একজন বিশেষজ্ঞ অফস্পিনারের প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়েছে টিম ম্যানেজমেন্ট। তাদের চাহিদা অনুযায়ী মিরাজকে দলে নেয়া হয়েছে।’ বলেন তিনি। শ্রীলঙ্কায় মিরাজের অফস্পিনের কার্যকারিতা ছিল প্রমাণিত। দুই টেস্টের সিরিজে স্বাগতিক তারকা রঙ্গনা হেরাথের পর দ্বিতীয় সর্বাধিক ১০ উইকেট তারই। সেরা ৪/১১৩। অক্টোবরে ঘরের মাটিতে ইংল্যান্ডকে নামিয়ে দেয়া সিরিজের নায়ক মিরাজ। সর্বাধিক ১৯ উইকেট নিয়ে অভিষেকেই হয়েছিলেন সিরিজ সেরা। মিরপুরে দ্বিতীয় টেস্টে তার হাত ধরেই আসে স্মরণীয় জয়। সেই থেকে অনেকটা যেন অলিখিতভাবে টেস্টের নিয়মিত সদস্যে পরিণত হয়েছেন। তবে মিরাজ কিন্তু জাত-ওয়ানডে ক্রিকেটার। ২৭টি লিস্ট-এ (পঞ্চাশ ওভারের) ম্যাচে ২ হাফসেঞ্চুরিতে করেছেন ৪৮১ রান। ডান হাতি অফস্পিনে নিয়েছেন ২৭ উইকেট। গত বছর বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপ দিয়ে আলোচনায়। ৫০ ওভার ক্রিকেটের এই টুর্নামেন্টে তাকে দেখা গেছে দুর্দান্ত এক অলরাউন্ডার হিসেবে। ব্যাটিং-বোলিং-নেতৃত্ব, তিন ভূমিকাতেই আলো ছড়িয়েছেন, যদিও আন্তর্জাতিক অভিষেক টেস্ট দিয়ে! এ পর্যন্ত ৭ টেস্টে ৩৫ উইকেট নিয়ে এরই মধ্যে তিনি পরিচিতি পেয়েছেন দুর্দান্ত এক অফস্পিনার হিসেবে। গত অক্টোবরে টেস্ট অভিষেকের পর থেকে অন্য সংস্করণেও জাতীয় দলের হয়ে খেলার জন্য উন্মুখ ছিলেন মিরাজ। ১৯ বছর বয়সী তরুণের স্বপ্ন পূরণ হলো ডাম্বুলায়, ‘আমার খুব ইচ্ছে ছিল ওয়ানডে খেলার। টেস্ট অভিষেকের পরই ওয়ানডের কথা চিন্তা করেছিলাম। অভিষেক হয়ে গেল। বোর্ড সভাপতি (নাজমুল হাসান) যখন আমাকে বললেন, শ্রীলঙ্কা যেতে হবে, ওয়ানডে খেলতে। তখনই চিন্তা করেছিলাম, ওয়ানডে দলে সুযোগ পেলে ভালো কিছু করার চেষ্টা করব। সবচেয়ে বড় কথা দল জিতেছে, দিন শেষে এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ওয়ানডেতে ২/৪৩ আর টেস্টের ৭/১৩৮ অভিষেকের দুই পারফরম্যান্সের মধ্যে কোন তুলনায় যেতে রাজি নন মিরাজ, ‘দুইটাই স্বপ্নের মতো হয়েছে। টেস্টে অভিষেক হয়েছে পাঁচ উইকেট (৬/৮০) নিয়ে। কিন্তু ম্যাচটা আমরা জিতিনি। ওয়ানডেতে জিতেছি। আমার কাছে মনে হয়, ওয়ানডে অভিষেক অনেক ভাল হয়েছে। টেস্ট ও ওয়ানডে, দুই অভিষেকে যা চেয়েছিলাম তাই হয়েছে।’ আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ক্রিকেটে মিরাজ প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেছিলেন। কিন্তু তারা শরীরিক ভাষাতে আত্মবিশ্বাস কমতি ছিল না কোন। তামিম এমন মিরাজকে পেয়ে দারুণ খুশি। তাই তো ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে এ অলরাউন্ডারের প্রশংসার বন্যায় ভাসিয়েছেন, ‘ওর অভিষেকটা অসাধারণ হয়েছে। আমার ওকে দেখে একবারও মনে হয়নি, প্রথমবার ওয়ানডে খেলছে। আমার কাছে মনে হয়েছে ও খুবই আত্মবিশ্বাসী একটা ছেলে। আমি আশা করি সে অনেক দূর যাবে।’ স্বপ্নের মতো অভিষেকের পর সিনিয়র ক্রিকেটারদের ধন্যবাদ দিতে ভুলেননি মিরাজ। কারণ এ সিনিয়ররাই তাকে অভিষেকের চাপ থেকে মুক্ত করেছেন, ‘আমার স্বপ্নের মতো অভিষেকের জন্য, আমি সিনিয়রদের ধন্যবাদ দেব। তারা আমাকে খুব সহায়তা করেছেন। টেস্টে লম্বা সময় থাকে, অনেক কিছু ভাবা যায়, পরিকল্পনা করা যায়। ওয়ানডেতে কিন্তু সে রকম সময় থাকে না। এখানে সময় কম। পুরো ম্যাচে মাশরাফি ভাইরা আমাকে সেই চাপটা বুঝতে দেননি। তাদের অনুপ্রেরণার জন্য অভিষেকের কথা ভুলে গিড়য়েছিলাম। মনেই হয়নি প্রথম খেলছি। কোন চাপই ছিল না।’ অভিষেক ম্যাচের আগে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার থেকে পেয়েছিলেন প্রেরণামূলক বার্তা। ম্যাশ বলেছিলেন ‘তুই অনেক ভাল বোলার। ঠিক জায়গায় বল করতে পারলেও তোর বল ওরা খেলতেই পারবে না।’ অভিষিক্ত মেহেদী হাসান মিরাজকে পরামর্শ দিতে কার্পণ্য করেননি সতীর্থ বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানও। তিনি তার টোটকা দিয়ে বলেন, ‘লেগ স্টাম্পে বল করিস না। অফ স্টাম্পের বাইরে বল কর, তাহলে মারতে পারবে না।’ এই প্রসঙ্গে মিরাজ জানান, ‘সাকিব ভাইয়ের কথাতেই যেমন, থিসারাকে লেগ স্টাম্পে কোন বল দেইনি। ও আমাকে মারতে পারেনি। যদিও ওর উইকেট নিতে পারিনি কিন্তু ওর ঝড় থামাতে পেরেছিলাম।’
×