ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সুদীপ্ত ধ্রুব

গুগলে চাকরির যোগ্যতা

প্রকাশিত: ০৬:৪২, ২৮ মার্চ ২০১৭

গুগলে চাকরির যোগ্যতা

এ প্রজন্মের তরুণ নিলয় তালুকদার পড়াশোনা করছে অনার্স শেষ বর্ষে। আর ক’দিন পরেই পাস করে বের হবে কিন্তু এই চাকরির মন্দা বাজারে কি ভাবে চাকরি পাবে। সেই চিন্তাই ঘুর পাক খাচ্ছে নিলয়ের মাথায়। প্রায় সময় পেপারে দেখে তরুণ প্রজন্মের অনেকেই গুগল চাকরি করছে তারা নিশ্চয়ই অনেক মেধাবী। কিন্তু নিলয় পড়াশোনা করছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সে কি পারবে গুগল এ চাকরি করতে। বন্ধুরা গুগলে চাকরি করা অনেকের কাছে স্বপ্নের মতো। আপনি হয়ত ভাবছেন গুগলে চাকরি পেতে হলে আপনাকে মেধাবী হতে হবে, পরীক্ষায় বেশি জিপিএ থাকতে হবে, এ ধারণা করা ঠিক নয়। গুগলে চাকরি পেতে জিপিএ কিংবা পরীক্ষায় খুব ভাল নম্বর পাওয়ার বিষয়টির তেমন কোন গুরুত্বই নেই। কারণ পরীক্ষার ফল দেখে কারও সম্পর্কে ধারণা করা যায় না। আর এ কথাগুলো নিউইয়র্ক টাইমসকে এক সাক্ষাতকারে জানিয়েছেন গুগলের মানবসম্পদ বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট লাজলো বক। লাজলোর মতে, ধীরে ধীরে প্রচলিত শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় বা কোন প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রী ছাড়া গুগলকর্মীর সংখ্যা বাড়ছে। আসুন বন্ধুরা জেনে নেই কি কি পেতে গেলে। দ্রুত শেখার ক্ষমতা- প্রতিটি চাকরির ক্ষেত্রেই যে মূল বিষয়টি বিবেচনায় রাখা হয় তা হচ্ছে সাধারণ জ্ঞানের দক্ষতা। এ বিষয়টিতে আইকিউয়ের সঙ্গে মিলিয়ে ফেলা ঠিক হবে না। এখানে সাধারণ জ্ঞান বলতে বোঝানো হচ্ছে, কোন বিষয় শেখার দক্ষতা, দ্রুত শেখার ক্ষমতা এবং তা কাজে লাগানোর ক্ষমতা। এই দক্ষতা হচ্ছে অতিসূক্ষ্ম জিনিসের মধ্যে পার্থক্য করার ক্ষমতা। গুগলে চাকরির জন্য সাক্ষাতকার নেয়ার সময় আচরণগত এ বিষয়গুলো খুব ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়। খুব তাড়াতাড়ি যারা শিখতে পারেন ও তা কাজে রূপায়িত করতে পারেন তারাই গুগলে চাকরির জন্য সবচেয়ে বেশি উপযুক্ত। অর্থাৎ গুগলে চাকরি পেতে চাইলে আপনাকে প্রথমত কোন বিষয়কে খুব তাড়াতাড়ি বোঝার ও কাজে রূপায়িত করার মতো দক্ষতা থাকতে হবে। চাই নেতৃত্ব দিতে পারার যোগ্যতা- গুগলে কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে দ্বিতীয়ত যে বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়া হয় তা হলো নেতৃত্বগুণ। নেতৃত্বগুণ বলতে এখানে আপনি পূর্বে কোন প্রতিষ্ঠানে নেতৃত্ব দিয়েছেন কিনা তা বোঝানো হয় না। গুগল সব সময় এমন লোককেই চায় যারা কিনা বিপদে হাল ধরতে পারেন। তার মানে, গুগলে চাকরি পেতে চাইলে আপনার মধ্যে বিপদে হাল ধরার মতো নেতৃত্বগুণ থাকতে হবে। প্রচলিত নেতৃত্বের পরিবর্তে প্রয়োজনীয় মুহূর্তে সমস্যা সমাধান করার নেতৃত্ব গুণকে গুরুত্ব দেয় গুগল। যেমন দাবা ক্লাবের আপনি একজন প্রেসিডেন্ট ছিলেন কিংবা বিপণন বিভাগের প্রধান ছিলেন? আপনি কত দ্রুততার সঙ্গে সেই পদে উন্নীত হয়েছেন, গুগল সে বিষয়টি দেখে না; বরং প্রয়োজনের মুহূর্তে আপনার টিমকে আপনি কতটা সমর্থন দিয়েছেন এবং আপনার কাজ কতটা টেনে নিয়েছেন, সেটি দেখে। সমস্যায় পড়লে নেতৃত্ব গুণে সমাধান করার বিষয়টি বিবেচনা করে গুগল। সমস্যা জটিল হলে আপনার ভূমিকা কী হয়, সে বিষয়টিও পর্যবেক্ষণ করে গুগল। কাজকে নিজের মনে করা- কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে গুগল তৃতীয়ত যে বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয় তা হলো, আপনি কত তাড়াতাড়ি কাজকে ও প্রতিষ্ঠানকে নিজের হিসেবে ভাবতে পারেন তার ওপর। তার মানে গুগলে চাকরি পেতে চাইলে আপনাকে গুগলের কাজকে নিজের কাজ হিসেবে ভাবতে হবে ও প্রতিষ্ঠান হিসেবে গুগলকে আপনার নিজের প্রতিষ্ঠান হিসেবে ভাবতে হবে। গুগলে উগ্র স্বভাবের মানুষের চাকরি পাওয়া কঠিন। দায়িত্ব জ্ঞানসম্পন্ন হতে হবে এবং প্রতিষ্ঠানের কাজকে নিজের কাজ ভাবতে হবে, নিজের প্রতিষ্ঠান ভাবতে হবে। কোন কিছুতেই রেগে যাওয়া চলবে না। কোন কাজ নিজে সমাধান করতে না পারলে ভদ্রভাবে অন্যকে তা ছেড়ে দিতে হবে। অন্যদের ভাল পরামর্শগুলো গ্রহণ করতে হবে। গুগল সব সময় কাজের শেষে কী অর্জন করা হলো, সে বিষয়টি দেখে। কীভাবে একত্রে বা দলগতভাবে সমস্যা সমাধান করা যাবেÑএ বিষয়টিকেই গুগল গুরুত্ব দেয়। মূল্যায়ন করুন অন্যের মতামতের- গুগলের চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে চতুর্থ শর্ত হলো, আপনার মধ্যে অন্যের মতামতকে গ্রহণ করার মতো মানসিকতা থাকতে হবে। কেউ যদি আপনার ভুল ধরিয়ে দেয় তবে তার প্রতি অসন্তুষ্ট না হয়ে কৃতজ্ঞতা পোষণ করতে হবে। কোন কাজ না বুঝলে গোঁজামিল না দিয়ে দলগতভাবে তা সমাধান করার মতো মানসিকতা থাকতে হবে। গুগলে ভদ্রতা বলতে অন্যকে কাজের সুযোগ করে দেয়া নয়; বরং এটিকে বলা চলে বুদ্ধিবৃত্তিক নম্রতা। এই নম্রতা বা অন্যকে সম্মান দেখানোর মানসিকতা তৈরি না হলে কর্মীদের পক্ষে নতুন কিছু শেখা সম্ভব নয়। গবেষকদের প্রসঙ্গ টেনে লাজলো বলেন, অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতর ডিগ্রীধারীদের আধিক্য দেখা যায়। অধিকাংশ সফল ও মেধাবীর ক্ষেত্রে ব্যর্থতার হার খুব কম থাকে, তাই তারা ব্যর্থতার থেকে কীভাবে শিক্ষা নিতে হয়, সেই বিষয়টিই শিখতে পারে না। অভিজ্ঞতা অবশ্যই- আপনার মধ্যে ন্যূনতম অভিজ্ঞতা হলেও থাকতে হবে। সুতরাং গুগলে চাকরি পেতে চাইলে অবশ্যই আপনার অভিজ্ঞতার পাল্লাকে ভারি করতে হবে। ‘গুগল’র কর্তৃপক্ষ কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে একজন মানুষের প্রতিটি আচরণ খুব মনোযোগ দিয়ে খেয়াল করে। আচরণ দেখেই গুগলের কর্তৃপক্ষ বুঝে নেয় আপনার মধ্যে কী। ভাল থাকবেন সকলেই। আপনার যদি সঠিক মাত্রায় পেশাদারী অভিজ্ঞতা থাকে তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রী না থাকলেও চলবে। তবে আপনার ভাল একটি ডিগ্রী থাকলে তা অবশ্যই গ্রহণযোগ্য হবে। ন্যূনতম অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কাউকে কাজে নেয়া হলে তার শেখার আগ্রহ, যোগাযোগ দক্ষতা, নেতৃত্ব দেয়ার আগ্রহ থাকে। মানুষের মেধা বিভিন্ন ধরনের হতে পারে এবং এই মেধাকে প্রচলিত ধারার বাইরেও নানাভাবে কাজে লাগানো যেতে পারে। তাই চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান ও নিয়োগকারী হিসেবে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাকে শুধু নামকরা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে চেয়ে থাকলেই হবে না। কারণ স্কুল থেকে ঝরে পড়া অনেক মানুষই তাদের পথ খুঁজে নিয়ে বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। যদিও তারা ব্যতিক্রম হিসেবে বিবেচিত হন। এই ব্যতিক্রমী মানুষদেরই খুঁজে বের করে গুগল।
×