ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শামসুদ্দিন চৌধুরীর বক্তব্য

আইনজীবীর লিগ্যাল নোটিস ও তার জবাব

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ২৮ মার্চ ২০১৭

আইনজীবীর লিগ্যাল নোটিস ও তার জবাব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ১৫ এপ্রিল রাত ১১টায় নবনিতা চৌধুরীর সঞ্চালনায় ‘রাজকাহন’ নামক একটি টকশোতে বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক সুপ্রীমকোর্টের প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা একজন আত্মস্বীকৃত শান্তি কমিটির সদস্য, স্বাধীনতাবিরোধী এবং রাজাকার বলায়, সুপ্রীমকোর্টের এ্যাডভোকেট একলাছ উদ্দিন ভুঁইয়া বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে লিগ্যাল নোটিস পঠিয়েছিলেন। তারপক্ষে এ্যাডভোকেট মুহাম্মদ মিজানুর রহমান সোমবার ঐ নিগ্যাল নোটিসের জবাব দিয়েছেন। এ্যাডভোকেট একলাছ উদ্দিন ভুঁইয়া ১৬ মার্চ লিগ্যাল নোটিসে বলেছিলেন, প্রধান বিচারপতি যদি স্বাধীনতাবিরোধী কিংবা রাজাকার হয় যা বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক প্রকাশ্যে গণমাধ্যমে বক্তব্য দিয়েছেন তা যদি সত্য হয় তাহলে ৩০ লাখ শহীদের সাথে প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয় এবং আইনজীবী হিসেবে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি একজন স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার হলে তার অধীনে আদালতে যে সমস্ত আইনজীবী আইন পেশায় আছেন যা সমস্ত আইনজীবী ও আইন পেশার মানহানী পর্যায় পড়ে। যা আইনজীবী হিসেবে নোটিসদাতার সম্মান নষ্ট হয়েছে। এর জবাবে ২৩ মার্চ এ্যাডভোকেট মুহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, আপনি আপনার নোটিসের নিম্নলিখিত বক্তব্য ‘একটি সাংবিধানিক পদে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি যদি রাজাকার হয়ে থাকে তাহলে এই বিজয়ের মাসে ৩০ লাখ শহীদের সাথে বিশ্বাসঘাতক বলে বিবেচিত হয়। আমি বাংলাদেশের সুপ্রীমকোর্টের একজন নিয়মিত আইনজীবী হিসেবে একজন রাজাকারের অধীনে দেশের সমস্ত বিচার বিভাগ প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে বলে মনে করি এবং বার ও বেঞ্চের মধ্যে যে সুসম্পর্ক সেটাও বিঘœ ঘটার সম্ভাবনা থাকে। এমনকি আইনজীবী হিসেবে উক্ত আদালতে পেশাগত দায়িত্ব পালন করাও বিব্রতকর’ তার সাথে আমার মোয়াক্কেল সম্পূর্ণরূপে একমত এবং তিনি আপনার আবেগ এবং অনুভূতিকে যৌক্তিক বলে মনে করেন। কেননা একজন কুখ্যাত শান্তি কমিটির সদস্য, যিনি এ দেশের অস্তিত্বই স্বীকার করেননি এবং করেন না। তিনি বিচার বিভাগের সর্বোচ্চ পদে আসীন থাকতে পারেন না। লিগ্যাল নোটিসের জবাবে এ্যাডভোকেট মুহাম্মদ মিজানুর রহমান আরও বলেন, আপনি আমার মক্কেলের বক্তব্যের ভিত্তি জানতে চেয়েছেন। একজন এ্যাডভোকেট হিসেবে আপনার অজানা থাকার কথা নয় যে, বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা নিজেই প্রকাশ্যে আদালতে স্বীকার করেছেন যে ১৯৭১ সালে তিনি শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন। এটা তার নিজের স্বীকারোক্তি বিধায় আমার মক্কেলের নিজস্ব মতামত নয়। গত ২০১৪ সালের ১০ সেপ্টেম্বর (১০-০৯-২০১৪) আমার মক্কেলসহ মোট চারজন বিচারপতির সমন্বয়ে আপীল বিভাগের বেঞ্চ (যেখানে এস কে সিনহা প্রিজাইডিং জজ ছিলেন) যখন যুদ্ধাপরাধী মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের আপীল শুনছিলেন তখন প্রকাশ্য এবং জনাকীর্ণ আদালতে (বিপুল সংখ্যক সাংবাদিক, আইনজীবী এবং বিচারপ্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন) বিচারপতি এসকে সিনহা প্রকাশ্যে, সুস্পষ্ট ও জোরালোভাবে স্বীকার করেন যে, তিনি ১৯৭১ সালে শান্তি কমিটির একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন। তিনি এক পর্যায়ে আরও বলেন, ‘আমি নিজেও পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর জন্য কাজ করেছি’। আইনজীবী জবাবে আরও বলেন, তার এ আত্মস্বীকৃত বক্তব্য পরেরদিন অর্থাৎ ২০১৪ সালের ১১ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। বিশেষ করে ডেইলি ঢাকা ট্রিবিউন পত্রিকায় ১ম পৃষ্ঠায় ২য় শীর্ষ সংবাদ হিসেবে এটি প্রকাশিত হয় যার শিরোনামে ছিল ‘লঁংঃরপব ংরহযধ ফরংপষড়ংবং যরং ৎড়ষব রহ ১৯৭১’ যেহেতু বিচারপতি এসকে সিনহা প্রকাশ্য আদালতে প্রকাশ্যে স্বীকার করেছেন যে তিনি ১৯৭১ সালে শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন তাই আমার মুক্তিযোদ্ধা মোয়াক্কেলের বক্তব্য প্রত্যাহার করার কোনরূপ প্রশ্নই ওঠে না। আমার মোয়াক্কেলের নিকট প্রেরিত ১৬ মার্চ নোটিস যা আমার মোয়াক্কেল ২০ মার্চ প্রাপ্ত হয়েছেন, তা আপনি প্রত্যাহার করতে আইনত বাধ্য।
×