ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

উৎসব আয়োজনে উদ্যাপিত বিশ্ব নাট্য দিবস

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ২৮ মার্চ ২০১৭

উৎসব আয়োজনে উদ্যাপিত বিশ্ব নাট্য দিবস

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সোমবার ছিল বিশ্ব নাট্য দিবস। গোটা পৃথিবীর সঙ্গে বাংলাদেশেও সাড়ম্বরে উদ্্যাপিত হয়েছে দিবসটি। নাট্যকর্মীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে উৎসবমুখরতায় রাজধানীতে বের হয়েছে আনন্দ শোভাযাত্রা। সেই সঙ্গে অনুষ্ঠিত হয়েছে ঢাকার মঞ্চের নিবেদিত কুশীলবদের প্রীতি সম্মিলনী ও আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রদান করা হয়েছে নাট্য দিবস সম্মাননা। ‘জয় হোক নাটকের’ প্রতিপাদ্যে যৌথভাবে বিশ্ব নাট্য দিবসের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউট (বাংলাদেশ কেন্দ্র), বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন এবং পথনাটক পরিষদ। কয়েক পর্বে বিভক্ত আয়োজনের শুরুতেই বের হয় আনন্দ শোভাযাত্রা। বেইলি রোডের মহিলা সমিতির সামনে থেকে সূচনা হয় শোভাযাত্রার। নানা নাট্যসামগ্রী, মুখোশের সঙ্গে কণ্ঠে গান নিয়ে নাট্যকর্মীদের এ শোভাযাত্রা শেষ হয় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার সামনে এসে। এরপর ছিল প্রীতি সম্মিলনী। সন্ধ্যায় ছিল মূল আনুষ্ঠানিকতা। যেখানে বিশ্ব নাট্য দিবস সম্মাননা প্রদান করা হয় সদ্য প্রয়াত ব্রাজিলে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শিল্প-সমালোচক মিজারুল কায়েসকে। বিশ্ব নাট্য দিবস বক্তৃতা করেন নাট্যজন ড. ইনামুল হক। বক্তব্য রাখেন আইটিআইয়ের বাংলাদেশ কেন্দ্রের সভাপতি নাসির উদ্দীন ইউসুফ, শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক ও গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী লাকী এবং পথনাটক পরিষদের সভাপতি মান্নান হীরা। বিশ্ব নাট্য দিবসকে উপলক্ষে খ্যাতিমান ফরাসী অভিনেত্রী ইজাবেল হুপেয়ার এবং নাট্যজন আতাউর রহমান প্রদত্ত বাণী পাঠ করা অনুষ্ঠানে। নাট্য দিবসের বাণীতে ইজাবেল হুপেয়ার বলেন, সময়কে অতিক্রম করার এক অলৌকিক ক্ষমতা আছে থিয়েটারের। অতি সাম্প্রতিক উপাদানগুলোর মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায় গত শতাব্দীর সকল অর্জনের। এমন কি সবচেয়ে চিরায়ত রেপার্টারিও নতুন মঞ্চায়নের সঙ্গে সঙ্গে আধুনিক জীবনঘনিষ্ঠ হয়ে উঠে। থিয়েটার সর্বদাই তার জন্ম থেকে পুনর্জাত হয় নতুন এক মাত্রায়, নতুন এক অবয়বে। এভাবেই সে হয়ে উঠে চিরায়ত।’ আতাউর রহমান বলেন, নাট্যক্রিয়া হচ্ছে এক অবিনাশী শিল্পধারা, যার ওপর বারবার আঘাত এসেছে। চলচ্চিত্র, টেলিভিশন এবং বিভিন্ন ডিজিটাল মাধ্যম উদ্ভাবন কখনও অবদমিত করতে পারেনি সভ্যতার সমবয়েসী এই নাট্য কৃত্যকে। নাটক হচ্ছে একমাত্র শিল্প যার মধ্যে দিয়ে প্রেক্ষাগৃহের জীবিত মানুষেরা সমভাবে ভাগাভাগি করে নেয় মঞ্চ কৃত্যে নিয়োজিত মানুষদের সঙ্গে সুখ-দুঃখের হালখাতা, যেখানে যুগপৎ মিলিত হয় আমাদের পার্থিব ও অপার্থিব জীবন। আলোচনা শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে শিল্পকলা একাডেমির প্রযোজনায় নৃতনাট্য ‘দেবদাসী কমলা’ পরিবেশনার মধ্য দিয়ে বিশ্ব নাট্য দিবসের দিনব্যাপী আয়োজনের সমাপ্তি হয়। জাদুঘরে একাত্তরের গণহত্যা শীর্ষক আলোচনা ॥ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সোমবার জাতীয় জাদুঘরের আয়োজনে একাত্তরের গণহত্যা শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত আয়োজনে আলোচনা করেন ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, শহীদ বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতার মেয়ে অধ্যাপক মেঘনা গুহঠাকুরতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনের তত্ত্বাবধায়ক মধুদার পুত্র অরুণ কুমার দে। স্বাগত বক্তব্য দেন জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন জাদুঘর বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সভাপতি বরেণ্য শিল্পী হাশেম খান। অরুণ কুমার দে একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে জগন্নাথ হলের হত্যাযজ্ঞ এবং তাঁর বাবা মধুদা, বড়দা ও বৌদিকে তার সামনে নির্মমভাবে হত্যা করার সেই দৃশ্য বর্ণনা করেন। মেঘনা গুহঠাকুরতা পঁচিশে মার্চ তাঁর পিতা শহীদ বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতাকে হত্যার স্মৃতি বর্ণনা করেন এবং পরিবারের প্রধান সদস্যের মৃত্যুতে একটি পরিবার কিভাবে একলা হয়ে যায় তা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ওই রাতে মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়। অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন একাত্তরের গণহত্যার স্বীকৃতি পাওয়ার বিষয়ে আন্তর্জাতিক উদ্যোগ গ্রহণ প্রয়োজন মনে করে বলেন, পাকিস্তান সরকার সব সময় চাইবে বিষয়টি বাঙালী জাতি ভুলে যাক। আমরা যদি ভুলে যাই তাহলে ত্রিশ লাখ শহীদ দুই লাখ নির্যাতিত নারীর প্রতি অসম্মান জানানো হবে। পাশাপাশি আমাদের স্বাধীনতাকেও অসম্মান করা হবে। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের স্বাধীনতা উৎসব ॥ গত ২২ মার্চ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রতিষ্ঠার একুশ বছর পূরণ করছে। একবিংশতিতম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও স্বাধীনতা দিবস উদযাপন উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী উৎসব আয়োজন করা হয়েছে। যার ষষ্ঠ দিন ছিল সোমবার। এদিন মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করেন মুক্তিযোদ্ধা সরকার আলী আসগর। দলীয় আবৃত্তি পরিবেশন করে স্বরশ্রুতি ও ঢাকা স্বরকল্পন, দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে বহ্নিশিখা ও পঞ্চভাস্কর, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে মিতালী বিদ্যাপীঠ ও ঢাকা কমার্স কলেজ এবং পথনাটক ‘বোধোদয়’ মঞ্চস্থ করে সুবচন নাট্য সংসদ।
×