ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অটোরিক্সা যাত্রীদের জিম্মি করে বাড়তি ভাড়া আদায় করা যাবে না

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ২৮ মার্চ ২০১৭

অটোরিক্সা যাত্রীদের জিম্মি করে বাড়তি ভাড়া আদায় করা যাবে না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীতে অটোরিক্সার নৈরাজ্য রোধে মিটারে যাত্রী পরিবহন নিশ্চিত করা, গ্যারেজে অভিযান চালানো, চালকদের পরিচয়পত্র ব্যবহারসহ বেশকিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। সোমবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় এ পরিবহন নিয়ন্ত্রণ সংস্থার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। অটোরিক্সার নৈরাজ্য রোধে করণীয় ঠিক করতে এ বৈঠকের আয়োজন করে বিআরটিএ। এতে মালিক ও শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দসহ বিআরটিএ কর্মকর্তারা যোগ দেন। অটোরিক্সাচালকদের মিটারে যাত্রী পরিবহন না করা, অল্প দূরত্বে যেতে অনীহা, যাত্রীদের থেকে বাড়তি অর্থ আদায়, হয়রানির বিষয়টি সব পক্ষ থেকেই আলোচনায় উঠে আসে। চালকদের দৌরাত্ম্য বন্ধে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা নিতে সহযোগিতায় আশ্বাস দেন মালিক-শ্রমিক প্রতিনিধিরা। বিআরটিএ কর্মকর্তারা বলেন, যাত্রীদের জিম্মি করে কোনক্রমেই বাড়তি অর্থ আদায় করা যাবে না। সরকারী আইন মেনে অটোরিক্সা চালাতে হবে। নইলে আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে মিটারে যাত্রী পরিবহন নিশ্চিত করা, মালিকদের অতিরিক্ত জমা আদায় বন্ধ, দুই শিফটে গাড়ি ভাড়া দেয়ার প্রবণতা রোধ, মিটারবিহীন অটোরিক্সা চলাচল বন্ধ, ঢাকার বাইরের অটোরিক্সা রাজধানীতে চলতে না দেয়া ও যাত্রী নিরাপত্তায় চালকের পরিচয়পত্র গলায় ঝোলানোসহ বিভিন্ন বিষয় আলোচনায় উঠে আসে। এসব সমস্যা সমাধানে বিআরটিএ কর্মকর্তারা বলেন, অটোরিক্সায় নৈরাজ্য অব্যাহত থাকলে তা যে কোন মূল্যে রোধ করা হবে। এ জন্য মোবাইল কোর্টের অভিযান বাড়ানো হবে। এ সময় শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে বলা হয়, ঢাকা মহানগরের ৯৯ গ্যারেজে চার হাজার ২৪৩ অটোরিক্সা থেকে বাড়তি জমা নেয়ার অভিযোগ মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় এসব অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে বিআরটিএকে আনুষ্ঠানিক চিঠি দেয়ার পরও কাজ হয়নি। মালিক পক্ষের শোষণ অব্যাহত রয়েছে। জবাবে বিআরটিএ কর্মকর্তারা বলেন, অতিরিক্ত জমা আদায়কারী ও দুই শিফটে গাড়ি ভাড়া দেয়ার সঙ্গে যুক্ত মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিআরটিএ’র কাছে আসা অভিযোগ তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়ারও আশ্বাস দেন কর্মকর্তারা। তারা বলেন, তদন্তে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে গ্যারেজগুলোতে মোবাইল কোর্টের অভিযান চালানো হবে। এরপর ঢাকার বাইরের নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, নরসিংদী ও গাজীপুরের প্রায় ১৫ হাজার অটোরিক্সা প্রাইভেটে গাড়ির নামে রাজধানীতে চলাচল বন্ধের দাবি জানানো হয় মালিক ও শ্রমিকদের পক্ষ থেকে। এ ব্যাপারেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। বাস্তবতা হলো, অটোরিক্সার নৈরাজ্য রোধে এ পর্যন্ত বিআরটিএ থেকে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় বহুবার বৈঠক করেছে। সর্বশেষ অটোরিক্সার ভাড়া বৃদ্ধির পর তা যথাযথ বাস্তবায়নে একটি মনিটরিং টিমও গঠন করেছিল। কিন্তু কোন কিছুতেই সফলতা আসেনি। অল্পদিনের মধ্যে অটোরিক্সার ভাড়া ও জমা আদায়ে নৈরাজ্য ফিরে এসেছে। যাত্রী কল্যাণ সমিতি বলছে, ৯০ ভাগ গাড়িচালক যাত্রীদের থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় করছেন। ৯৪ ভাগ গাড়ি মিটারে চলে না। এছাড়া গত বছরের আগস্টে বিআরটিএ কার্যালয়ে এক বৈঠকে যাত্রী নিরাপত্তায় চালকদের গলায় পরিচয়পত্র ঝোলানো, চালকদের মোবাইল নম্বর ও গ্যারেজের ঠিকানা অটোরিক্সার দৃশ্যমান স্থানে ঝোলানোসহ বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তা বাস্তবায়নে বিআরটিএ বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন বাবদ বিপুল অর্থ ব্যয় করেছে। কিন্তু সিদ্ধান্তের সিকি ভাগও কার্যকর হয়নি। সোমবারের বিআরটিএ কার্যালয়ে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন পরিচালক প্রশাসন নাজমুল আহসান মজুমদার, পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) নূরুল ইসলাম, পরিচালক (সেফটি) শেখ মোহাম্মদ মাহবুবে রব্বানী, এছাড়াও বিআরটিএ কর্মকর্তা মাসুদ আলম, শফিকুজ্জামান ভূঁইয়া, অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়ন নেতা হানিফ খোকন, মালিকপক্ষের প্রতিনিধি হিসেবে ছিলেনÑ বরকতউল্ল্যাহ বুলু, মোতালেব হোসেন, এ টি এম নাজমুল হাসান, মকবুল হোসেন প্রমুখ। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) বলছে, রাজধানীতে তালিকাভুক্ত অটোরিক্সার সংখ্যা ১৩ হাজার। মালিক সমিতির নেতারা বলছেন, এর মধ্যে সর্বোচ্চ ছয় থেকে সাত হাজার গাড়ি চলাচল করছে। পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে ২০১৫ সালের ১ নবেম্বর থেকে সিএনজিচালিত অটোরক্সিার ভাড়া ও জমা পুনর্নির্ধারণ করে সরকার। মালিকদের জমা বাড়িয়ে ৬০০ টাকার স্থলে করা হয় ৯০০ টাকা। নতুন ভাড়া অনুযায়ী প্রথম দুই কিলোমিটারে ভাড়া ২৫ টাকার স্থলে ৪০ টাকা করা হয়েছে। সর্বনিম্ন ভাড়াও তাই। পরবর্তী প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া সাত টাকা ৬৪ পয়সার স্থলে ১২ টাকা করা হয়। যানজট বা অন্য কোন কারণে রাস্তায় বিরতিকালে প্রতি মিনিটের ভাড়া এক টাকা ৪০ পয়সার স্থলে ২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে ২০১১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা ও চট্টগ্রামে গণপরিবহনে ভাড়া বাড়ানো হয়েছিল। বাস্তবচিত্র হলোÑ যতবার ভাড়া বাড়ানো হয়েছে ততবারই স্বার্থরক্ষা হয়েছে অটোরিক্সা মালিক ও চালকদের। তারপরও যাত্রীদের নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি গুনতে হয়েছে।
×