ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শীর্ষ জঙ্গী মুসাকে খুঁজে পেতেই আতিয়া মহলে অভিযান

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ২৮ মার্চ ২০১৭

শীর্ষ জঙ্গী মুসাকে খুঁজে পেতেই আতিয়া মহলে অভিযান

শংকর কুমার দে ॥ দেশের সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ব্যাপী ও বেশি সংখ্যক হতাহতের রক্তক্ষয়ী জঙ্গীবিরোধী অভিযানের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে সিলেটের শিববাড়ির আতিয়া মহলের জঙ্গী আস্তানাটি। এই আস্তানাটি ঘিরে শোনা যাচ্ছে নানা গুঞ্জনÑ কিভাবে এর সন্ধান পাওয়া গেল, কোন কোন জঙ্গী আছে ইত্যাদি নানা কথা। টানা চার দিন ধরে বিধ্বংসী অস্ত্র-গুলি ও গ্রেনেড-বোমার বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠা এই জঙ্গী আস্তানায় কোন শীর্ষ জঙ্গী অবস্থান করছে তা এখন ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’। নব্য জেএমবির শীর্ষস্থানীয় জঙ্গী মাঈনুল ইসলাম ওরফে মুসা, তার দ্বিতীয় স্ত্রী মর্জিনা ও সাগর অবস্থানের তথ্যের ভিত্তিতেই এই জঙ্গীবিরোধী অভিযান পরিচালনা শুরু হয়। আতিয়া মহল নামে জঙ্গী আস্তানাটির বিষয়ে প্রথম তথ্য পাওয়া যায় গত ১৫ মার্চ। চট্টগ্রামের সীতাকু-ের ‘সাধন কুঠির’ থেকে গ্রেফতার করা হয় জঙ্গী দম্পতি জহিরুল ইসলাম (সাংগঠনিক নাম জসিম) ও রাজিয়া সুলতানা (সাংগঠনিক নাম আরজিনা), যাদের গ্রামের বাড়ি বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায়। সাধন কুঠির থেকে এই জঙ্গী দম্পতিকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে ‘কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে সাপ’ বেরিয়ে আসে। জঙ্গী আস্তানা সাধন কুঠির থেকে দেড় মাইল দূরত্বের মধ্যে খোঁজ পাওয়া যায় আরেক জঙ্গী আস্তানার, যার নাম ‘ছায়ানীড়’। ছায়ানীড় জঙ্গী আস্তানায় প্রায় ১৯ ঘণ্ট০ার শ্বাসরুদ্ধকর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে নিহত হয় ৪ জঙ্গী ও এক শিশু, এরা সবাই আত্মঘাতী ছিল বলে পুলিশের দাবি। এর মধ্যে ছায়ানীড়ে নিহত নারী জঙ্গীর নাম জোবাইদা বেগম ও নিহত তিন পুরুষ জঙ্গী মধ্যে একজন জোবাইদার স্বামী কামাল। নিহত দুই বছরের শিশুটি এ জঙ্গী দম্পতির। গ্রেফতারকৃত রাজিয়া ও নিহত জোবাইদা আপন বোন। নিহতদের মধ্যে জসিমের বোন ও দুলাভাই রয়েছে। তাদের বাড়ি কক্সবাজারে। ছায়ানীড়ে নিহত অপর দুই জঙ্গী হলো রাজধানীর মিরপুর পূর্ব মণিপুর থেকে নিখোঁজ আহমেদ রাফিদ আল হাসান ও আয়াদ আল হাসান। সম্পর্কে এরা দুজন খালাতো ভাই। মূলত, জঙ্গী আস্তানা সাধন কুঠির থেকে জহিরুল ইসলাম ওরফে জসিম ও রাজিয়া সুলতানা ওরফে আরজিনাকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া যায় সিলেটের শিববাড়ির আছিয়া মহলের জঙ্গী আস্তানার খোঁজ মেলে। চট্টগ্রামের সীতাকু-ের জঙ্গী আস্তানা সাধন কুঠির ও ছায়ানীড়ের খোঁজ পাওয়ার পেছনে রয়ে গেছে আরেক কাহিনী। সেটা গত ৭ মার্চ বেলা ১১টার দিকের কথা। এর আগের দিন গত ৬ মার্চ ফাঁসির আসামি জঙ্গী সংগঠন হুজি প্রধান মুফতি আবদুল হান্নানকে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টার ঘটনা এবং এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ঘটনাস্থল থেকে গ্রেফতারকৃত জঙ্গী মোস্তফা কামালকে জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্ত নিয়ে ব্যস্ত তখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এই ব্যস্ততার মধ্যেই গত ৭ মার্চ বেলা ১১টায় কুমিল্লার চান্দিনায় শ্যামলী পরিবহনের একটি বাস পুলিশ চেকপোস্টে থামানোর পর দুই জঙ্গী পুলিশের ওপর হামলার চেষ্টাকালে স্থানীয় জনতার সহায়তায় গ্রেফতার হয় আহমেদ আজওয়াদ ইমতিয়াজ তালুকদার ওরফে অমি ও মাহমুদ হাসান নামে নব্য জেএমবির দুই জঙ্গী। তাদের সঙ্গে নিয়ে ওই রাতে চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ের একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে অস্ত্র ও বোমা উদ্ধার করে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। এরপরই ১৫ মার্চ সীতাকু- পৌর এলাকার আমিরাবাদের এক বাড়ি থেকে বিস্ফোরকসহ এক জঙ্গী দম্পতি জহিরুল ইসলাম ওরফে জসিম ও রাজিয়া সুলতানা ওরফে আরজিনাকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রেমতলা এলাকায় আরেক বাড়িতে অভিযানে যায় পুলিশ। ১৬ মার্চ দীর্ঘ ১৯ ঘণ্টা ঘেরাও করে রাখার পর প্রেমতলার ওই বাড়িতে শুরু হয় ‘অপারেশন এ্যাসল্ট সিক্সটিন’। আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ও গুলিতে এক নারীসহ চার জঙ্গী নিহত হন। চট্টগ্রামের সেই আত্মঘাতী বিস্ফোরণের বিস্ফোরক ও গুলির আলামতের সঙ্গে মিল দেখা যাচ্ছে সিলেটের শিববাড়ির আতিয়া মহলে, যা আরও ভয়াবহ ও ভয়ঙ্কর। কুমিল্লায় গ্রেফতারকৃত জঙ্গী অমি ও হাসানের দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে পাওয়া চট্টগ্রামের জহিরুল ইসলাম ওরফে জসিম ও রাজিয়া সুলতানা ওরফে আরজিনার নাম। তাদের গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যেই বের হয়ে আসে নব্য জেএমবির শীর্ষ জঙ্গী মুসা ও সাগরের নাম, যারা সিলেটের শিববাড়ির আতিয়া মহলের জঙ্গী আস্তানায় আছে বলে গোয়েন্দাদের দাবি।
×