ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

হিমাগার খালি নেই, মাঠে সিন্ডিকেট

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ২৮ মার্চ ২০১৭

হিমাগার খালি নেই, মাঠে সিন্ডিকেট

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ অতিরিক্ত আলুর ফলনই যেন বিপাকে ফেলেছে রাজশাহীর কৃষকদের। আগেই হিমাগার ভর্তি হয়ে যাওয়ায় বিপুল পরিমাণ আলু নিয়ে চরম বেকায়দায় পড়েছেন তারা। অনেক আলু বাড়ির আঙ্গিনা ও ক্ষেতেই স্তূপ করে রেখে পাহাড় বসিয়েছেন। হিমাগারে জায়গা সঙ্কুলান না হওয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন এ অঞ্চলের প্রান্তিক চাষীরা। আর এ সুযোগে কম দামে আলু কিনতে মাঠে নেমেছে আলু সিন্ডিকেটের সদস্যরা। হিমাগারে জায়গা নেই এমনÑ ইঙ্গিত দিয়ে কম দামে আলু কিনে মজুদের ধান্ধায় নেমেছে তারা। ফলে এরই মধ্যে অনেক কৃষক পানির দরে বিক্রি করে দিচ্ছেন আলু। রাজশাহীর তানোর উপজেলার চিমনা গ্রামের আলুচাষী আবদুল হানিফ দুলু জানান। তিনি অনেক আশা নিয়ে বর্গা নেয়া ৬ বিঘা জমিতে চলতি মৌসুমে আলু চাষ করেন। লাভের স্বপ্ন বুকে নিয়ে অনেক খরচা করেছেন তিনি। বীজ, কীটনাশক, সার ও শ্রমিকের মজুরিসহ আরও অনেক ঝামেলা পেরিয়ে মাঠের আলু উঠিয়েছেন। তবে ফলন ভাল হলেও তার মাথায় হাত পড়েছে। সীমিত সংখ্যক হিমাগারে জায়গা সঙ্কট। তাই মাঠে রাস্তার পাশে বস্তায় ভরে কয়েক দিন খোলা আকাশের নিচে আলুগুলো রেখেছিলেন। কিন্তু শেষে কোন উপায় না পেয়ে ৭৮০ টাকা দরে আলুগুলো অন্যের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। কৃষক দুলু জানান, তার ছয় বিঘা জমিতে ২৩৯ বস্তা (প্রতি বস্তা আলু ৮৫ কেজি) আলু উৎপাদন হয়েছে এবার। বিঘাতে খরচ হয় ২৭ থেকে ২৮ হাজার টাকা। মাঠেই আলু প্রতি বস্তা ৭৮০ টাকায় বিক্রি করতে হয়েছে তাকে। এতে প্রতি বিঘায় ৩১ হাজার টাকা পাচ্ছেন তিনি। এতে কোনভাবে আসলটা উঠে এসেছে তার। তবে লাভের অঙ্ক মিলছে না। হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করতে পারলে এ অবস্থার সৃষ্টি হতো না। শুধু আবদুল হানিফ দুলুই নয়, আলু নিয়ে এমন বিপাকে পড়েছেন জেলার প্রান্তিক কৃষকরা। জেলার বাগমারা, পবা, মোহনপুর, গোদাগাড়ী, দুর্গাপুর, চারঘাটসহ অন্য উপজেলাগুলোর একই অবস্থা। হিমাগারে জায়গা সঙ্কুলান না হওয়ায় কৃষকরা মাঠেই কম দামে আলু বিক্রি করে দিচ্ছেন। অনেকে ভাল দামের আশায় ১০ থেকে ১২ দিন ধরে আলু বস্তা ভর্তি করে মাঠে ও রাস্তার পাশে রেখে অপেক্ষা করছেন। তারা বলছেন, এবার বাম্পার আলুর ফলনের কারণে হিমাগারগুলো আগেই লোড হয়ে গেছে। রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, এবার জেলায় আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩৪ হাজার ৩৫০ হেক্টর। তবে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে মাঠে চাষ হয়েছে ৩৫ হাজার ৬০০ হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আলু উৎপাদিত হলেই এ বছর পরিমাণ হতো প্রায় ৯০ লাখ বস্তা। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আলু বেশি চাষ হওয়ায় এবার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা এক কোটি বস্তা ছাড়িয়েছে। জানা গেছে, রাজশাহী জেলায় সরকারী-বেসরকারী ২৭টি হিমাগার আছে। হিমাগারগুলোতে আলু সংরক্ষণ করা যাবে প্রায় সাড়ে ৩৪ লাখ বস্তা। বাকি তিন ভাগের দুই ভাগ আলু নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন চাষীরা। তবে অনুসন্ধানে জানা গেছে, আরও অনেক বেশি রাখেন এসব হিমাগারে। কৃষক ও আলু ব্যবসায়ীরা জানান, আলুর উৎপাদন বেশি এ কারণে সংরক্ষণের সমস্যায় পড়েছেন তারা। অনেকেই বিক্রিও করে দিচ্ছেন। আলু নিয়ে এক রকম জিম্মি হয়ে পড়েছে কৃষকরা। মাঠেই বিক্রি করে দেয়ার কারণে ভাল দামও পাওয়া যাচ্ছে না। পবা উপজেলার কৃষক আবদুর রহিম সরকার জানান, একটু উৎপাদন বেশি হলেই নানা ঝামেলা পোহাতে হয় প্রান্তিক চাষীদের। আবার প্রতিটি হিমাগার কর্তৃপক্ষ নিজেরাই ব্যাপক জমিতে আলু চাষ করে থাকেন। তিনি বলেন, প্রথম দিকে প্রান্তিক চাষীদের কিছু আলু হিমাগারে নেয়ার পরে বন্ধ করে দেন। তাদের আলুতে হিমাগার ভর্তি না হলে আবারও তারা আলু নিয়ে থাকে। আবার অনেক বড় বড় চাষী কাম ব্যবসায়ীরা হিমাগার থেকে ঋণ নিয়ে আলু চাষ করে থাকেন। তাদের আলু না নিলে ঋণ পরিশোধ করতে পারবেন না চাষীরা। তিনি এই জেলায় আরও হিমাগারের প্রয়োজন আছে বলে জানান। রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক দেব দুলাল ঢালী ও অতিরিক্ত উপ-পরিচালক হযরত আলী বলেন, এবার অনুকূল আবহাওয়া এবং আলু ক্ষেতে অন্যান্য বছরের মতো মড়ক না থাকায় ব্যাপক উৎপাদন হয়েছে।
×