ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

যক্ষ্মা মুক্ত দেশ হোক

প্রকাশিত: ০৪:০১, ২৮ মার্চ ২০১৭

যক্ষ্মা মুক্ত দেশ হোক

যক্ষ্মা একটি প্রাণঘাতী মারাত্মক ব্যাধি। ২০১৬ সালের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক রিপোর্টে উঠে আসে বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রতি লাখে ৪৫ জন যক্ষ্মা রোগী এই মরণব্যাধির আক্রমণে মারা যায়। আর প্রতিবছরই ২২৫ জন নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছে সর্বগ্রাসী এই রোগে। ’২৪ মার্চ বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস’ উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় এসব তথ্য বের হয়ে আসে। তবে আক্রান্ত রোগী সুস্থ হওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্য প্রায় ৯৪%। আর প্রতিষেধক ওষুধ সেবন করে যক্ষ্মা চিকিৎসার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্য উল্লেখ করার মতো। কারণ সারা বিশ্বে এই সাফল্যের হার ৫২% হলেও বাংলাদেশে এই হার প্রায় ৭০%। যক্ষ্মা দিবস উদযাপন উপলক্ষে এই সমাবেশে নতুন করে এক বার্তা সামনে নিয়ে আসা হয়Ñ ‘ঐক্যবদ্ধ হলে সবে, যক্ষ্মা মুক্ত দেশ হবে।’ যক্ষ্মা বিশেষজ্ঞদের মতে বিশ্বে প্রতি সেকেন্ডে একজন মানুষ ফুসফুসের এই রোগে আক্রান্ত হয়। কফে জীবাণুযুক্ত ফুসফুসের যক্ষ্মা আক্রান্ত রোগীকে মারাত্মক বিপদের ঝুঁকিতে নিয়ে যায়। তবে নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ এবং যথার্থ ওষুধ সেবনের মাধ্যমে এই রোগ সম্পূর্ণরূপে নিরাময় হয় বলে সংশ্লিষ্টরা অভিমত ব্যক্ত করেন। বর্তমানে পৃথিবীর এক-তৃতীয়াংশ মানুষ এই মারাত্মক রোগে সংক্রমিত হচ্ছে। তিন সপ্তাহের বেশি কাশি চলতে থাকলে তা এই রোগের প্রাথমিক উপসর্গ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তার পরেও চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে এই রোগ নির্ণয়ে নিশ্চিত হতে হবে। রোগ ধরা পড়লে ধারাবাহিকভাবে চিকিৎসা করা অত্যন্ত জরুরী। উল্লেখ্য, শারীরিকভাবে দুর্বল এবং যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তারাই যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয় বেশি। তাই প্রতিটি নাগরিককে শারীরিকভাবে সুস্থ থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন এই রোগ নির্মূলে এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা বা এমডিআর যক্ষ্মা। এই ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মার অন্যতম প্রধান কারণ আক্রান্ত রোগীর অনিয়মিত ওষুধ ব্যবহার। আরও একটা বিপজ্জনক আশঙ্কা থাকে, শিশুদের ক্ষেত্রে এই রোগ নির্ণয়ের জটিলতা। প্রথমত, এক্স-রে মেশিন এবং জিন এক্সপার্টের সীমাবদ্ধতার কারণে যক্ষ্মা রোগ শনাক্ত করার ব্যাপারে অনেক ধরনের সমস্যা তৈরি হয়। মানুষের মধ্যে সচেতনতা বোধের অভাবও এই রোগ নির্ধারণে বাধার সৃষ্টি করে। যেহেতু রোগটি সংক্রামক সেই কারণে অধিক জনসংখ্যা এবং ঘনবসতি এই রোগের প্রকোপ বেশি দেখা দেয়। আর এই আক্রান্ত রোগীদের সিংহভাগই শিশু। বাংলাদেশের অন্যান্য জায়গার তুলনায় ঢাকা শহরে শিশু যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা তুলনামূলক বেশি বলে বিভিন্নজনের বক্তব্যে উঠে আসে। বর্তমানে প্রযুক্তির অব্যাহত অগ্রযাত্রায় এই রোগ শনাক্ত করণের হারও ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর এবং জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচীর বিশেষজ্ঞদের মতে ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে যক্ষ্মা এবং শিশু যক্ষ্মা রোগী চিহ্নিতকরণ অনেক বেড়েছে। রোগ শনাক্ত করতে পারলে এর যথার্থ এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসায় আক্রান্ত ব্যক্তিকে সারিয়ে তোলা কোন ব্যাপারই নয়। কারণ আধুনিক যন্ত্রপাতি যেমন রোগ নির্ণয়ের সহায়ক তেমনি চিকিৎসা বিজ্ঞানের সফল অভিযাত্রা আরও আধুনিক ওষুধ তৈরিতে অনবদ্য ভূমিকা রাখে যা যক্ষ্মার মতো ঘাতক রোগকে নির্মূল করতে বিশেষ অবদান রাখবে। কোমলমতি শিশুরা যেন জীবনের শুরুতে এই মারাত্মক ব্যাধির কবলে না পড়ে সেটা লক্ষ্য করা প্রতিটি সচেতন বাবা-মায়ের আবশ্যকীয় দায়বদ্ধতা। শরীর সুস্থ রাখতে হবে। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে, রোগ নির্ণীত হলে উপযুক্ত এবং যথার্থ চিকিৎসার মাধ্যমে তা সারাতেও হবে। ‘বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস’ উপলক্ষে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা এই আহ্বান জানান সাধারণ মানুষের কাছে।
×