ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মাথা গোজার ঠাঁই নেই মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মানের

প্রকাশিত: ০১:২৬, ২৬ মার্চ ২০১৭

মাথা গোজার ঠাঁই নেই মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মানের

নিজস্ব সংবাদদাতা, রংপুর ॥ ১৯৭১ সালে পহেলা এপ্রিল দশম শ্রেণীতে অধ্যায়নরত অবস্থায় কয়েকজন বন্ধু মিলে হঠাৎ চলে যান ভারতের ত্রি-মহনী মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে। সেখানে ৩ মাস প্রশিক্ষণ শেষে দিনাজপুরের হিলিস্থল বন্দর, দাউদপুর ও মিঠাপুকুরের চৌধুরী গোপালপুর এলাকায় ৬ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার জয়নাল আবেদীনের নেতৃত্বে অংশ গ্রহন করেছেন সম্মুখযুদ্ধে। কয়েকবার নির্যাতনের শিকার হয়েছেন পাক সেনাদের হাতে। তারপরও চালিয়ে গেছেন যুদ্ধ। অবশেষে যুদ্ধে জয়লাভ করলেও জীবনযুদ্ধে পরাজিত মুক্তিযোদ্ধা শেখ মো. সোলায়মান মিয়া। ১১ সদস্যকে নিয়ে তাঁর সংসার চলে অন্যের করুণায়। ৬ মেয়ে ও ২ ছেলে সন্তানকে নিয়ে দিশেহারা তিনি। শেখ মো. সোলায়মান মিয়া উপজেলার বালুয়া মাসিমপুর ইউনিয়নের হেলেঞ্চা গ্রামের মৃত. শেখ বাহার উদ্দিনের ছেলে। সোলায়মান মিয়া বলেন, ‘৬ নম্বর সেক্টরে দিনাজপুরের হিলি ও দাউদপুর এলাকায় যুদ্ধ শেষ করে আমরা চলে আসি মিঠাপুকুরের চৌধুরী গোপালপুর এলাকায়। এসময় সহযোদ্ধারা আমাকে পাঠায়, গ্রামের বাড়িতে খাবার নিয়ে আসার জন্য। বাড়িতে প্রবেশ করলেই পাক সেনারা আমাকে ঘিরে ফেলে। সেনাদের হাতে ধরা খেয়ে বাবা-মায়ের সামনেই নির্মম নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। অবশেষে কৌশলে পালিয়ে আবারও চৌধুরী গোপালপুর এলাকায় সহযোদ্ধাদের সাথে মিলিত হই। ক’দিন পরেই স্বাধীন হয় দেশ।’ তিনি আরও বলেন, ‘যুদ্ধে জয়লাভের পর আমাকে বাড়িতে আটকে রাখে পরিবারের সদস্যরা। কোথাও যেতে দেননি বাবা-মা। খোঁজ খবরও রাখিনি কোন বিষয়ে। অভাবেব সংসারের হাল ধরতে হয়েছে।’ শনিবার দুপুরে সরেজমিনে শেখ মো. সোলায়মান মিয়ার বাড়িতে গিয়ে প্রথমেই চোখে পড়েছে ভেঙ্গে যাওয়া দু’টি ঘর। সেখানেই সন্তানদের নিয়ে থাকেন তিনি। ২ স্ত্রী ও ৮ সন্তানদের খাবারে জন্য তিনি বাড়িতেই দর্জির কাজ করেন। পাশের শাল্টিরহাট বাজারে ব্রয়লার মুরগি জবাই করে পান সামান্য কিছু টাকা। তা দিয়ে চলে তাঁর সংসার। সরকারীভাবে এ পর্যন্ত মেলেনি তাঁর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি। সরকারী স্বীকৃতির জন্য শেখ মো. সোলায়মান মিয়া আবেদন করেও লাভ হয়নি। সহযোদ্ধা, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ রংপুর ও মিঠাপুকুর ইউনিট কমান্ড, মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ এবং স্থানীয় সরকারের প্রত্যয়নপত্র থাকলেও অর্ন্তভুক্ত হতে পারেনি মুক্তিযোদ্ধার তালিকায়। সহযোদ্ধাদের মধ্যে হাশেম আলী, সেকেন্দার আলী ও আবু বক্কর জানান, সোলায়মান মিয়াসহ আমরা এক সঙ্গে প্রশিক্ষণ গ্রহন করেছি। পরে দিনাজপুর ও মিঠাপুকুরের অনেক এলাকায় পাকসেনাদের বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ গ্রহন করি। এলাকার কয়েকজন প্রবীন ব্যক্তি জানান, ১৯৭১ সালে সোলায়মান মিয়া কয়েকজন বন্ধু মিলে ভারতে চলে যায়। ৪/৫ মাস তাঁর কোন খোঁজ-খবর ছিল না। হঠাৎ একদিন সে বাড়িতে এলে পাক সেনারা তাকে ঘিরে ফেলে ও নির্মম নির্যাতন করে। তারপরও কৌশলে সে পালিয়ে যায়। এর কয়েকদিন পরে দেশ স্বাধীন হয়। স্থানীয় বাসিন্দা ওয়াজেদ আলী বলেন, জম্মের পর থেকে আমরা শুনে আসছি সোলেমান মিয়া মুক্তিযোদ্ধা। তিনি আমাদের কাছে মুক্তিযুদ্ধের নানা গল্প বলেছেন। তিনি আরও বলেন, তাঁর পরিবারের ১১ সদস্যকে নিয়ে তিনি মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তাঁর বসবাসের ঘরগুলো দেখলেই বোঝা যায়, তিনি কতটা অসহায়।
×