ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

উড়ে গেল লঙ্কা

প্রকাশিত: ০৬:২৬, ২৬ মার্চ ২০১৭

উড়ে গেল লঙ্কা

মোঃ মামুন রশীদ ॥ ‘অতি দর্পে হত লঙ্কা’- প্রবাদটি শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দলের বিরুদ্ধে গেছে! বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আগের ৩৮ ম্যাচে যে ফলাফল তাতে লঙ্কানদের দর্পই দেখা গেছে। কারণ ৩৩ বারই জিতেছিল তারা, মাত্র ৪ বার বাংলাদেশ। কিন্তু এবার প্রথম ওয়ানডেতেই ৯০ রানে হারিয়ে লঙ্কানদের দর্প চূর্ণ করল মাশরাফি বিন মর্তুজার দল। শনিবার রনগিরি ডাম্বুলা আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে আগে ব্যাট করে তামিম ইকবালের অনবদ্য ১২৭ রানের ইনিংসের সুবাদে ৫ উইকেটে ৩২৪ রানের বড় সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। বিদেশের মাটিতে এটাই বাংলাদেশের ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ দলীয় ইনিংস। জবাবে ৪৫.১ ওভারে ২৩৪ রান করতে সক্ষম হয় শ্রীলঙ্কা। এ জয়ের ফলে ৩ ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল টাইগাররা। টস জিতেই বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছে স্বাগতিকরা। ইনিংসের পঞ্চম ওভারেই সৌম্য সরকারকে (১০) সাজঘরে ফিরিয়ে সাফল্য পায় তারা। তবে সেই সাফল্যের হাসি ম্লান করে দেন তামিম-সাব্বির। দ্বিতীয় উইকেটে ১০১ বলে ৯০ রানের দারুণ এক জুটি গড়েন দু’জনে। ভাল একটি সংগ্রহের ভিত পেয়ে যায় বাংলাদেশ। ক্যারিয়ারের চতুর্থ ফিফটি হাঁকিয়ে উপুল থারাঙ্গার দুর্দান্ত ক্যাচে সাজঘরে ফিরতে বাধ্য হন সাব্বির। ৫৬ বলে ৫৪ রানের ইনিংসটিতে ছিল ১০ চার। সাব্বির বিদায় নেয়ার পর মুশফিকুর রহীম (১) মাত্র দুই বল মোকাবেলা করেই সাজঘরে ফিরলে বিপদের ডঙ্কা বেজে উঠেছিল। কিন্তু সাকিব উইকেটে এসে একেবারেই ব্যতিক্রমী ইনিংস খেলেন। চার-ছক্কা হাঁকানোর দিকে মনোযোগী না হয়ে সিঙ্গেলস রানের দিকেই বেশি নজর দিয়েছেন। সে কারণে চতুর্থ উইকেটে ১৪৪ রানের দুর্দান্ত একটি জুটি গড়ে ওঠে তামিম-সাকিবের। তামিম ক্যারিয়ারের অষ্টম, বিদেশের মাটিতে তৃতীয় ও শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় শতক হাঁকান। তার সেঞ্চুরি উদযাপনের কিছু পরেই সাকিব সাজঘরে ফেরেন। ৭১ বলে ৪ চার ও ১ ছক্কায় ৭২ রান নিয়ে আউট হয়ে যান তিনি। ১৪৪ রানের জুটি দু’দলের লড়াইয়ে চতুর্থ উইকেটের নতুন রেকর্ড। তামিম থামেননি। ৪৮তম ওভারে কুমারার বলে থামেন ১৪২ বলে ১৫ চার ও ১ ছক্কায় ১২৭ রান করে। ওয়ানডেতে এর ফলে ৫২৪৭ রান জমা করেছেন তিনি। ছাড়িয়ে গেছেন রান করার দিক থেকে গর্ডন গ্রীনিজ, রোশান মহানামা, গৌতম গাম্ভীর, রোহিত শর্মা ও মিসবাহ-উল-হকের মতো ব্যাটসম্যানদের। সবমিলিয়ে তিন ফরমেটে ১০ হাজার ১২৬ রান। পরে তা-ব চালান তরুণ মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। তার ৯ বলে ৩ চার ও ১ ছক্কায় করা অপরাজিত ২৪ রানে সোয়া তিন শ’ ছুঁয়ে ফেলে বাংলাদেশ। ৫ উইকেটে ৩২৪ রান বিদেশের মাটিতে এবং শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দলীয় ইনিংস। এর আগে লঙ্কানদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ৯ উইকেটে ২৬৫ (মোহালি, ২০০৬) রান ছিল বাংলাদেশের। বিশাল সংগ্রহ তাড়া করতে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খেয়ে যায় লঙ্কানরা। ইনিংসের তৃতীয় বলেই ওপেনার দানুসকা গুণাতিলকাকে এলবিডব্লিউ করে প্রথম সাফল্য পান মাশরাফি। শুরুর ধাক্কা হজম করতে গিয়ে চুপসে যায় লঙ্কান ব্যাটসম্যানরা, তাদের চেপে ধরেন বাংলাদেশী বোলাররা। সেই চাপে দ্রুতই সাজঘরে ফেরেন কুসাল মেন্ডিস (৪) ও অভিজ্ঞ থারাঙ্গা (১৯)। চতুর্থ উইকেটে অবশ্য সাবলীল ব্যাটিং করে চাপ কাটানোর চেষ্টা করেন দিনেশ চান্দিমাল ও আসেলা গুণারতেœ। ৫৬ রানের জুটিও গড়েন। ওই সময় আঘাত হেনে সাকিব ফেরান গুণারতেœকে (২৪)। পরে তরুণ ডানহাতি অফস্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ অভিষেক ওয়ানডে খেলতে নেমে দ্বিতীয় আঘাত হানেন। ক্রমেই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে থাকা চান্দিমালকে (৭০ বলে ৬ চারে ৫৯) সাজঘরে পাঠানোর পর লঙ্কানরা পুরোপুরি ব্যাকফুটে চলে যায়। তবে শেষদিকে থিসারা পেরেরা ব্যাটে ঝড় তোলেন। সে কারণে দু’শ’ পেরিয়ে যায় লঙ্কানরা। তিনি মাত্র ২৮ বলে ফিফটি হাঁকান। শেষ পর্যন্ত তাঁকে সাজঘরে ফেরান মুস্তাফিজুর রহমান। থিসারা ৩৫ বলে ৪ চার ও ২ ছক্কায় ৫৫ রান করেছিলেন। ৪৫.১ ওভারে ২৩৪ রানে গুটিয়ে যায় লঙ্কানরা। এটি শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে পঞ্চম জয় বাংলাদেশের। এর আগের চারটি জয়ই ছিল পরে ব্যাট করে। ৯০ রানের এ জয়টি শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় জয় বাংলাদেশের।
×