ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রথমবারের মতো জাতীয়ভাবে গণহত্যা দিবস পালিত

সাম্প্রদায়িকতা রুখে দেয়ার প্রত্যয়

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ২৬ মার্চ ২০১৭

সাম্প্রদায়িকতা রুখে দেয়ার প্রত্যয়

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ জাতীয় সংসদে স্বীকৃতির পর এবারই প্রথম ২৫ মার্চ জাতীয়ভাবে গণহত্যা দিবস পালন করেছে বাংলাদেশ। মশাল প্রজ্বালন, আলোর মিছিল, বিভীষিকাময় সেই কালরাতের স্মৃতিচারণ আর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে শনিবার ঢাকাসহ সারাদেশে পালিত হয়েছে ২৫ মার্চ ভয়াল কালরাত্রি স্মরণে নানা অনুষ্ঠানমালার। রাতে মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ পরিবারের সদস্য ও নতুন প্রজন্মের হাতের মশাল আর হাজারো প্রজ্বলিত মোম থেকে ছড়িয়ে পড়া আলোতে আলোকিত হয়ে উঠেছিল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকা। আলোর মিছিল করে হাজার হাজার মানুষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। গণহত্যা দিবসের প্রতিটি অনুষ্ঠানেই সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে যে কোন মূল্যে রুখে দেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়। দিবসটি পালনে আয়োজিত সকল অনুষ্ঠানে ২৫ মার্চকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার দাবি ছিল প্রচ-। পাকি হন্তারকদের ঘৃণা-ধিক্কার জানানোর পাশাপাশি একাত্তরের গণহত্যা নিয়ে পরাজিত পাকিস্তানের নতুন ষড়যন্ত্রের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে মুক্তিযুদ্ধের গবেষক, বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিক এবং শহীদ পরিবারের সদস্যরা বলেছেন, একাত্তরের ২৫ মার্চের কালরাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গণহত্যার কোন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি নেই। একাত্তরের গণহত্যার কথা এখনও অস্বীকার করে পাকিস্তান। বাঙালীর জাতির আত্মপরিচয় ও মর্যাদার ইতিহাস প্রতিষ্ঠার জন্য এবং মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে পাকিস্তানের মিথ্যাচারের জবাব দিতেই ২৫ মার্চের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির প্রয়োজন। গণহত্যা দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রীয়ভাবে বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করা হয়। রাষ্ট্রীয় কর্মসূচীর মধ্যে ছিল গণহত্যার ওপর আলোকচিত্র প্রদর্শনী, আলোচনা সভা এবং মুক্তিযুদ্ধ ও গণহত্যা বিষয়ক গীতিনাট্য/সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সরকারের উদ্যোগে শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ প্রাঙ্গণে ‘রক্তাক্ত ২৫ মার্চ : গণহত্যা ইতিবৃত্ত’ শিরোনামে আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, শিল্পকলা একাডেমি, শিশু একাডেমি, জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসব অনুষ্ঠান বাস্তবায়ন করেন। গণহত্যা দিবস উপলক্ষে আলোর মিছিল করেছে সিপিবি। সন্ধ্যা ছয়টায় সিপিবির পুরানা পল্টনের মুক্তিভবন থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিখা চিরন্তন পর্যন্ত ‘আলোর মিছিল’ অনুষ্ঠিত হয়। বিকেল ৪টায় ওয়ার্কার্স পার্টির অফিস চত্বরে আলোচনা সভা ও প্রদীপ প্রজ্বালন, প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করেছে ঢাকা মহানগর কমিটি। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আলোচনা করে ঐক্য-ন্যাপ। গণহত্যা দিবস স্মরণ করেছে বিকল্প ধারাও। বিকেলে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত স্মরণ সভায় দলের সভাপতি ও সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। এদিকে গণহত্যা দিবস উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করেছে। এ উপলক্ষে জগন্নাথ হলে গতকাল সকাল ১০টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত হল প্রাঙ্গণে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কর্মসূচীর মধ্যে ছিল চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, শহীদদের স্মরণে স্থাপনাশিল্পের প্রদর্শন, সন্ধ্যা সাতটায় নাট্যানুষ্ঠান, রাত আটটায় দেশাত্মবোধক গান ও কবিতা আবৃত্তি, রাত ১১টায় মশাল প্রজ্বালন, ১১টা ৫৯ মিনিটে গণসমাধিতে মোমবাতি প্রজ্বালন এবং শ্রদ্ধা নিবেদন। পাকিস্তানের গণহত্যা বিশ্বে বিরল- রাষ্ট্রপতি ॥ বঙ্গভবনের মাঠে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আয়োজনে ‘শহীদস্মৃতি বৃক্ষরোপণ’ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। ২৫ মার্চ কালরাতের স্মরণে ২৫টি গাছের চারা রোপণ করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদের স্মৃতি ‘চিরসবুজ’ রাখতে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে ৩০ লাখ গাছ লাগানোর এই কর্মসূচী হাতে নিয়েছে নির্মূল কমিটি। অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি বলেন, একাত্তরের ২৫ মার্চ কালরাতে এ দেশের নিরস্ত্র বাঙালীর ওপর পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী যে নৃশংস গণহত্যা চালিয়েছিল তা বিশ্বে বিরল। এ গণহত্যাকে বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরতে এবং এর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে এই উদ্যোগ অনন্য ও অসাধারণ। দেরিতে হলেও জাতীয় সংসদে ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এজন্য তিনি সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সব সংসদ সদস্যের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, পাকিস্তানী বাহিনী ও তাদের দোসররা বাংলাদেশে ৩০ লাখ নিরীহ মানুষকে হত্যা করে। বাঙালীর হৃদয়ের সে কান্না কোন দিন বন্ধ হবে না। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গ ধরে রাষ্ট্রপতি বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার গণহত্যাকারীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু এবং বিচারের রায় কার্যকর করে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ পরিবারসহ গোটা জাতির দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ করেছেন। ‘শহীদস্মৃতি বৃক্ষরোপণ’ কর্মসূচীর প্রশংসা করে তিনি বলেন, শহীদদের স্মরণ করার পাশাপাশি গণহত্যাকে নিরুৎসাহিত করতে এ উদ্যোগ দেশ-বিদেশে জনমত ও জনসচেতনতা সৃষ্টি করবে। সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বানও আবদুল হামিদের। নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক-সাংবাদিক শাহরিয়ার কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের অন্যান্যর মধ্যে শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব) হেলাল মোর্শেদ খান, ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলাও বক্তব্য রাখেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর রাষ্ট্রপতি ও অন্য অতিথিরা বঙ্গভবনের উত্তর-পশ্চিম কোনে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত ২৫ জন শহীদের স্মরণে ২৫টি গাছে চারা রোপণ করেন। নির্বাচনে ঘাতকের দোসররা চূড়ান্ত পরাজিত হবে- মোহাম্মদ নাসিম ॥ আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য, কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একাত্তরের ঘাতকের দোসরদের চূড়ান্তভাবে পরাচিত করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন হবে একাত্তরের ঘাতকদের চূড়ান্তভাবে পরাজিত করার নির্বাচন। এই নির্বাচনে ঘাতকের দোসরদের পরাজিত করতেই হবে। পাকিস্তানের দোসরদের আগামী নির্বাচনে ক্ষমতায় আসতে দেয়া যাবে না। বাংলাদেশ থেকে এই বঙ্গীবাদের দোসরদের মূলোৎপাটন করতে হবে। ২৫ মার্চ জাতীয় গণহত্যা দিবস উপলক্ষে মিরপুর বধ্যভূমি প্রাঙ্গণে কেন্দ্রীয় ১৪ দল আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। মনোয়ারুল ইসলাম বিপুলের সঞ্চালনায় সভায় ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার এমপি, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তরের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পংকজ দেবনাথ এমপি, ন্যাপ নেতা ইসমাইল হোসেন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। দেশবিরোধী চক্রান্তকারীরা এখনও ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে মন্তব্য করে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, চক্রান্তকারীরা এখনও রয়েছে। পাকিস্তান পরাজিত হয়েছে, পরাজয় মেনে নিয়েছে। কিন্তু তাদের এদেশীয় দোসররা এখনও পরাজয় না মেনে দেশের বিরুদ্ধে একের পর এক ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। তাই ১৪ দলসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। রাশেদ খান মেনন বলেন, ২৫ মার্চের গণহত্যা ছিল পৈশাচিকতার এক ভয়াবহ উদাহরণ। এই গণহত্যা ছিল পাকিস্তান সরকারের চূড়ান্ত বিশ্বাস ঘাতকতার বহির্প্রকাশ। ২৫ মার্চের গণহত্যার সংখ্যা নিয়ে যারা বিতর্ক করেন তাদের মতলব হলো বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কিত করা। এর আগে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের নেতারা মিরপুর বদ্ধভূমিতে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এদিকে দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে ডেমোক্রেটিক এ্যালায়েন্স আয়োজিত ‘পঁচিশে মার্চ গণহত্যা ও লাখো প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন মোহাম্মদ নাসিম। সংগঠনের সভাপতি আলমগীর মজুমদারের সভাপতিত্বে সভায় ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সাম্যবাধী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। নয় মাস ধরেই গণহত্যা চালিয়েছে পাকিস্তান- দেশের বিশিষ্টজন ॥ গণহত্যা দিবসে জাতীয় প্রেসক্লাবের আলোচনা সভায় জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও বিশিষ্টজনরা বলেছেন, শুধু ২৫ মার্চ নয়, মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস ধরে গণহত্যা হয়েছে। আর এ গণহত্যা কেবল ৩০ লাখে সীমাবদ্ধ নয়। এর চেয়ে বেশি মানুষকে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা করা হয়েছে। গণহত্যা দিবসটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতির জন্য দেশে-বিদেশে প্রতি বছরই পালন করতে হবে। প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহাম্মদ শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে ও ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্তের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন, প্রবীণ সাংবাদিক সৈয়দ আবুল মকসুদ, আবেদ খান, মতিউর রহমান, আমিনুল ইসলাম বেদু, হারুন হাবীব, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য মোজাফফর হোসেন পল্টু, সাংবাদিক স্বপন কুমার সাহা, এম শাহজাহান মিঞা, সাইফুল আলম, শাহীন রেজা নূর, কামরুল ইসলাম চৌধুরী, নাসিমুন আরা মিনু, কুদ্দুস আফ্রাদ, মাঈনুল আলম, তরুণ তপন চক্রবর্তী প্রমুখ। আলোচনার পর জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে সাংবাদিকসহ ২৫ জন শহীদের নামে ২৫টি গাছ রোপণ করা হয়। শিল্পী হাশেম খান, শাহরিয়ার কবির, মুনতাসীর মামুন, বিচারপতি শামসুল হুদা, স্থপতি রবিউল হুসেইন, বিচারপতি শামসুদ্দীন চৌধুরী মানিকসহ অন্য অতিথিরা গাছগুলো রোপণ করেন। আলোচনায় অংশ নিয়ে অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, গণহত্যার দায় পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দায়। পৃথিবীতে অনেক গণহত্যার ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এত অল্প সময়ে এত বেশি মানুষ হত্যার ঘটনা ইতিহাসে নেই। এটি শুধু এখানে হয়েছে। তিনি বলেন, আমেরিকা, চীন, সৌদি আরব বাংলাদেশের পক্ষে ছিল না। তাই কেউ এ গণহত্যার কথা বলে না। বললে এর দায় তাদের ওপরও বর্তাবে। যদি গণহত্যা না হতো, তাহলে এত কম সময়ে এক কোটি লোকের চলে যাওয়া বা আবার ফিরে আসার ঘটনা ঘটত না। সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, পৃথিবীতে গণহত্যার কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। তবে কালরাত একটিই। সেটি হচ্ছে ২৫ মার্চ। এ দিনটিকে জাতিসংঘ পালন করল কি করল না, আমরা পালন করে যাব। তারা পালন না করলেও কিন্তু এটিকে মানতে হবে। স্বীকৃতিও দিতে হবে। আবেদ খান বলেন, শুধু ২৫ মার্চ নয়, নয় মাস ধরে গণহত্যা অব্যাহত ছিল। ২৫ মার্চ রাতে আমি ইত্তেফাক অফিসে আটকে ছিলাম। যারা আটকে ছিলাম, তাদের মধ্যে এখন কেবল তিনজন বেঁচে আছি। গণহত্যার পরে পুরো ঢাকা শহরে সাইকেল চালিয়ে গণহত্যা ও তা-বের দৃশ্য দেখেছি। এ গণহত্যা আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে সামগ্রিকভাবে পরিচিতি দিয়েছে। আলোর মিছিলে উদ্ভাসিত শহীদ মিনার ॥ ২৫ মার্চ স্মরণে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। অনুষ্ঠানে আসা মুক্তিযোদ্ধা, একাত্তরের রণাঙ্গণের সেক্টর কমান্ডার, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক রাজনীতিক, শহীদ পরিবারের সদস্য ও নতুন প্রজন্মের প্রতিটি সদস্যের মুখে ছিল স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী ও প্রগতিবিরোধী অপশক্তির বিষদাঁত ভেঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের আলোকবর্তিকা সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়ার অঙ্গীকার। ভয়াল কালরাত্রি স্মরণে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে স্বাধীনতা ও গণহত্যার ৪৬তম বার্ষিকীতে ৪৬টি মশাল প্রজ্বালন করা হয়। এ সময় সবার কণ্ঠে ভেসে উঠে ‘আগুনের পরশমণি ছোঁওয়া প্রাণে’ গানটি। পরে বের করা হয় আলোর মিছিল। মিছিলে নেতৃত্ব দেন মহান মুক্তিযুদ্ধের অধিনায়করা। আলোর মিছিলের শুরুতে মুক্তিযুদ্ধের মহান শহীদদের স্মরণে এক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের সভাপতিত্বে আলোচনা সভার শুরুতেই সূচনা বক্তব্য রাখেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক-সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির। বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের বক্তব্যের পর স্বাধীনতার ৪৬তম বার্ষিকী উপলক্ষে ৪৬ জন বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা মশাল জ্বালিয়ে আলোর মিছিলের সূচনা করেন। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে আলোর মিছিল করে জগন্নাথ হলের বধ্যভূমিতে গিয়ে ওই ভয়াল কালরাত্রিতে আত্মোৎসর্গকারী বীর শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান তাঁরা। শুধু এই অনুষ্ঠানই নয়, নানা বিভিন্ন সংগঠন কালরাত্রি স্মরণে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে যে কোন মূল্যে রুখে দেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়। কালরাত্রি স্মরণে শনিবার বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এ সময় গণহত্যায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন সংগঠন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল এবং রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সের স্মৃতিসৌধে প্রদীপ প্রজ্বালন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। প্রজ্বলিত মোমবাতি নিয়ে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা জগন্নাথ হল স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। একইভাবে ঢাকাসহ সারাদেশেই ২৫ মার্চ জাতীয় গণহত্যা দিবসে বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে শহীদদের স্মরণ করা হয়। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাবই- মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রী ॥ রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গণহত্যা দিবস উপলক্ষে ‘রক্তাক্ত ২৫ মার্চ গণহত্যার ইতিবৃত্ত’ শীর্ষক এক আলোচনা সভার আয়োজন করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, আমাদের কাছে একাত্তরের গণহত্যার যত ভিডিও আছে তা আমরা সব বিদেশী কূটনৈতিকদের দেব। আমরা চাই ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস হিসেবে বিশ্ব পালন করুক। আমাদের যেসব তথ্য-প্রমাণ আছে তা অন্য দেশের নেই। কাজেই আমরা বিশ্বাস করি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করব। মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ মাহমুদ রেজা খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য দেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতি ক্যাপ্টেন এবিএম তাজুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি শাহজাহান কামাল ও ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া প্রমুখ।
×