ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

‘আতিয়া মহল’ থেকে ৭৮ জনকে উদ্ধার, শেষ হয়নি অভিযান

প্রকাশিত: ০২:৪০, ২৫ মার্চ ২০১৭

‘আতিয়া মহল’ থেকে ৭৮ জনকে উদ্ধার, শেষ হয়নি অভিযান

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ী এলাকায় জঙ্গি আস্তানা ‘আতিয়া মহল’ ঘিরে অভিযান ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’ অব্যাহত থাকবে। শনিবার সকালে সেনাবাহিনীর ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’ শুরুর নয় ঘণ্টা পর সন্ধ্যায় ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান অভিযানে থাকা সেনা সদর দপ্তরের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান। তিনি বলেন, অভিযানে আতিয়া মহল থেকে ৭৮ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩০ জন পুরুষ ছাড়াও বাকিরা নারী এবং শিশু রয়েছে। প্রেস ব্রিফিংয়ে সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান আরো জানান, ৫ তলা বিশিষ্ট আতিয়া ভবনে ৩০টি ফ্ল্যাটে ১৫০টি কক্ষ রয়েছে। এসব কক্ষ, সিঁড়িঘর ও আনাচে কানাচে বিস্ফোরক ছড়ানো ছিটানো রয়েছে। জঙ্গিরা বিস্ফোরক দিয়ে কমান্ডোদের প্রবেশে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেছে। এজন্য অপারেশনটি অনেক সতর্কতার সঙ্গে পরিচালনা করতে হচ্ছে। তাই অনেক সময় লাগছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল ওই ভবনে আটকে পড়া নিরীহ পরিবারগুলোকে উদ্ধার করে আনা। সে লক্ষ্যে আমরা সফল হয়েছি। কিন্তু জঙ্গিরা এখনও ভেতরে আছে। আমরা খুব সতর্কতার সঙ্গে একটি করে কক্ষ ‘ক্লিয়ার’ করে যাচ্ছি।’ এ অভিযান কখন শেষ হবে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে এই সেনা কর্মকর্তা জানান, ‘অভিযান কখন শেষ হবে সেবিষয়ে এখনই আমরা সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারছি না।’ অভিযান রাতেও চলবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে অভিযানের কমান্ডার সিদ্ধান্ত নেবেন।’ এদিকে, ‘আতিয়া মহলের’ কাছে শনিবার সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় আশপাশের কয়েকজন আহত হন। আহতের সংখ্যা প্রাথমিকভাবে ৬ জন বলে জানা গেলে কোন কর্মকর্তার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে যে স্থানে এটি বিস্ফোরণ হয়েছে এর থেকে একটু দূরে কয়েক মিনিট আগেই সেনাবাহনীর পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করা হয়েছিল। এর আগে জঙ্গিবিরোধী এ অভিযানের শুরুতে ওই ভবনে আটকে ব্যক্তিদের উদ্ধার করা হয় দুপুর ২টা পর্যন্ত। এরপর শুরু হয় মূল অভিযান। দুপুর ২টা থেকে শুরু হয় মুহুর্মুহু গুলির শব্দ। এক পর্যায়ে সাউন্ড গ্রেনেড ও গ্রেনেডের শব্দও শোনা যায় ভবনের আশপাশের এলাকা থেকে। পৌনে ৩টার দিকে ভবনটির পাঁচতলা থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখা যায়। দুপুর আড়াইটার দিকে তিনজন সেনা সদস্যকে আহত অবস্থায় অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যেতে দেখা যায়। দুপুর ২টায় গুলি-বোমার আওয়াজ শোনার আগে একটি অ্যাম্বুলেন্সকে পুলিশ বেষ্টনি অতিক্রম করে ভেতরে ঢোকানো হয়। পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, ওই জঙ্গি আস্তানায় অন্তত একজন নারী ও একজন পুরুষ জঙ্গি রয়েছেন বলে তারা ধারণা করছেন। আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অভিযান শুরুর পর ওই ভবনে আটকে পড়া ব্যক্তিদের উদ্ধারের চেষ্টা চলে। সেনাবাহিনী এই অভিযানের নাম দিয়েছে ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’; এর আগে ঘটনাস্থলে সোয়াত এই অভিযানের নাম দিয়েছিল ‘অপারেশন স্প্রিং রেইন’। শনিবার সকালে অভিযান শুরুর আগেই গণমাধ্যমকর্মীসহ আশপাশের লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া হয় নিরপাদ দূরত্বে। বন্ধ করে দেওয়া হয় বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ। ফায়ার ব্রিগেডের দুটি গাড়ি রাতেই ঘটনাস্থলে এনে রাখা হয়েছিল। সকালে সাঁজোয়া যান ও অ্যাম্বুলেন্স দেখা যায়। অভিযানের সরাসরি সম্প্রচার না করতে আইএসপিআরের পক্ষ থেকে সংবাদ মাধ্যমকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। এরআগে শুক্রবার সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ী এলাকায় জঙ্গি আস্তানা আতিয়া মহলের চারিদিকে সোয়াত ও বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দল অবস্থান নেয়। অভিযানে সহযোগিতা করার জন্য সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ দল সেখানে পৌঁছে। শুক্রবার রাতে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার গোলাম কিবরিয়া বিষয়টি নিশ্চিত করেন। শুক্রবার ওই ভবন থেকে জঙ্গিদের বের হয়ে আত্মসমর্পণ করতে পুলিশের পক্ষ থেকে মাইকিং করে আহ্বান জানানো হলেও তাতে সাড়া মেলেনি। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে শিববাড়ির উস্তার মিয়ার আতিয়া মহলের নামের বাড়িতে তল্লাশির সময় নিচ তলা থেকে পুলিশ ও র্যা বকে লক্ষ্য করে বোমা নিক্ষেপ করা হয়। পরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বাড়িটি ঘিরে অভিযান শুরু করে বলে জানান সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার রোকনউদ্দীন।
×