ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

- এলিজাবেথ ডুয়োস্কিন

ফেসবুক নজরদারির কাজে পুলিশকে তথ্য দেবে না

প্রকাশিত: ০৬:২১, ২৫ মার্চ ২০১৭

ফেসবুক নজরদারির কাজে পুলিশকে তথ্য দেবে না

ফেসবুক তার বিপুল তথ্য উপাত্ত পুলিশকে নজরদারির কাজে ব্যবহার করতে দেবে না। সম্প্রতি সামাজিক নেটওয়ার্কটি এই পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করে। নির্যাতনকারী ও এ্যাকটিভিস্টদের ওপর নজরদারির কাজে এসব তথ্য ক্রমবর্ধমান হারে ব্যবহার করা হচ্ছে এমন অভিযোগের পটভূমিতে ফেসবুক এই পদক্ষেপ নেয়। বিশেষ করে মিসৌরির ফার্গুসন এবং বাল্টিমোরের মতো স্থানগুলোতে বিক্ষোভকারীদের সোশ্যাল মিডিয়া এ্যাকাউন্টগুলোর ওপর আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর নজরদারি নিয়ে যথেষ্ট উদ্বেগ সৃষ্টি হয় এবং তার পরই আসে ফেসবুকের সিদ্ধান্ত। এর পাশাপাশি ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ বলেছেন যে তিনি কোম্পানির মিশন সম্প্রসারিত করে বিশ্বকে বন্ধু মহলের নেটওয়ার্কে সংযুক্ত করা থেকে এখন নিরাপত্তার প্রসারে কাজে লাগাতে চান। সামাজিক নেটওয়ার্কটির মূল ব্যবসা হলো বিজ্ঞাপন প্রচার। তথাপি টুইটার ইনস্ট্রাগ্রামের সঙ্গে ফেসবুক ডেভেলপারদের ব্যবহারকারীর পাবলিক ফিডগুলো লাভের সুযোগ করে দেয়। ডেভেলপাররা তখন পাবলিক ঘটনাবলী ও প্রবণতাগুলো নজরদারি করার জন্য সেই তথ্য উপাত্ত ব্যবহার করে। দৃষ্টান্ত দিয়ে বলা যায় কোন্ কোন্ ভোক্তা কিভাবে তাদের পণ্য নিয়ে আলোচনা করছে বিজ্ঞাপনীরা তার হদিস বের করে ফেলেছে। অন্যদিকে রেড ক্রস ম্যারিকেন স্যান্ডির মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময় রিয়েল টাইম তথ্য লাভের জন্য সামাজিক তথ্য উপাত্ত ব্যবহার করছে। তবে সামাজিক নেটওয়ার্কগুলো এমন সব তৃতীয় পক্ষের সঙ্গে কাজ করার জন্য সমালোচিত হয়েছে যারা নাকি তথ্য উপাত্ত আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে বিক্রি করে দেয়। গত বছর ফেসবুক, ইনস্ট্রাগ্রামও টুইটার আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন (এসিএলইউ) পরিচালিত এক তদন্তে সাড়া দিয়ে জিওফিডিয়া নামে এমনি একটি তৃতীয় পক্ষকে ড্যাটা লাভের সুযোগ বন্ধ করে দেয়। জিওফিডিয়া একটি স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান। এটি ফেসবুক, টুইটার ও ইনস্ট্রাগ্রামের তথ্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে তুলে দিত। এসিএলইউর প্রকাশিত দলিলে উল্লেখ আছে যে ২০১৫ সালে বাল্টিমোরে ফ্রেডি গ্রে নামে এক কৃষ্ণাঙ্গ যুবকের পুলিশের হেফাজতে থাকাকালে মৃত্যুর এবং তারও আগে ২০১৪ সালে মিসৌরিয়া ফার্গুসনে পুলিশের গুলিতে মাইকেল ব্রাউন নামে আরেক কৃষ্ণাঙ্গ যুবক নিহত হওয়ার পর অনুষ্ঠিত বিক্ষোভের নেতাকর্মীদের ওপর নজরদারি করার জন্য সামাজিক নেটওয়ার্কের তথ্য ব্যবহার করা হয়েছিল। অতি সম্প্রতি ফেসবুক ডেভেলপারদের জন্য তার নির্দেশনাবলী আপডেট করে বলেছে যে, নজরদারির কাজে ব্যবহৃত হওয়ার মতো হাতিয়ার যোগানোর জন্য তারা আমাদের এক ব্লগ পোস্টে আরও বলেছে যে, জিওফিডিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার পর থেকে ফেসবুক অন্যান্য ডেভেলপারের সঙ্গেও সম্পর্ক চুকিয়ে তুলছে। ব্যবহারকারীরা যেসব তথ্য জনসমক্ষে পোস্ট করছে সেই তথ্য কি কাজে লাগাতে পারে না, পারে সে ব্যাপারে ফেসবুক সুন্দরভাবে কিছু বলেনি। সেই তথ্যের মধ্যে থাকতে পারে কোন্ ব্যক্তির ফ্রেন্ডলিস্ট কোথায় থাকে, জন্মদিন, প্রোফাইল ছবি, শিক্ষা বিষয়ক ইতিহাস, সম্পর্কগত স্ট্যাটাস এবং রাজনৈতিক আনুগত্য। ক্যালিফোর্নিয়ার এসিএলইউর প্রযুক্তি ও নাগরিক অধিকার বিষয়ক পরিচালক নিকোল ওজের এক বিবৃতিতে বলেন, নিজেদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলী এবং দেশের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ও সামাজিক ইস্যুগুলো নিয়ে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ ও মতের আদান প্রদানের জন্য আমরা সামাজিক নেটওয়ার্কগুলোর ওপর নির্ভর করি। এখন আগের যে কোন সময়ের চেয়ে আমরা আশা করব যে নজরদারি চালানোর মতো কোন পার্শ্ব দরজা থাকলে সোশ্যাল নেটওয়ার্কগুলো যেন তা বন্ধ করে দেয় এবং এটা নিশ্চিত করে তোলে যে অশ্বেতাঙ্গ লোকজন ও নেতাকর্মীদের টার্গেট করে কেউ যেন তাদের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করতে না পারে। কেউ কেউ বলে যে ফেসবুক এ ব্যাপারে যতটা যা করার করেনি। সেন্টার ফর মিডিয়া জাস্টিসের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক মালকিয়া সিরিল বলেন ‘প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো তাদের প্ল্যাটফর্ম ও ডিভাইসগুলোকে রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও টার্গেট করা জনগোষ্ঠীর ওপর গণনজরদারি চালানোর জন্য কাজে লাগাতে দিলে গণতান্ত্রিক পন্থায় ভিন্নমত প্রকাশের পথ রুদ্ধ হয়ে যায় এবং স্বৈরাচারী প্রবণতা টিকে থাকার লাইসেন্স পেয়ে যায়। অনুবাদ ॥ এনামুল হক সূত্র ॥ ওয়াশিংটন পোস্ট
×