ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপি প্রার্থী সাক্কুর ২৭ দফা ইশতেহার ঘোষণা

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ২৫ মার্চ ২০১৭

বিএনপি প্রার্থী সাক্কুর ২৭ দফা ইশতেহার ঘোষণা

মীর শাহ আলম, কুমিল্লা থেকে ॥ কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন (কুসিক) নির্বাচনকে সামনে রেখে আগামী দিনে কুমিল্লা নগরীকে বিশ্বমানের শহর ও শান্তি-সমৃদ্ধির এক আদর্শ নগর হিসেবে গড়ে তুলতে আবারও নগরবাসীর কাছে ভোট চেয়ে সদ্য বিদায়ী মেয়র বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ মনিরুল হক সাক্কু তার ২৭ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন। শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে নগরীর ধর্মসাগর পাড়ে তার নির্বাচনী কার্যালয় প্রাঙ্গণে তিনি এ ইশতেহার ঘোষণা করেন। ইশতেহারে কুমিল্লা শহরে যানজট ও জলাবদ্ধতা সমস্যাকে অগ্রাধিকার দিয়ে আগামী ২-৩ বছরের মধ্যে তা সমাধান করবেন বলে উল্লেখ করেন। এছাড়া আগামীতে হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধি কিংবা নতুন করে বর্ধিত করের বোঝা নগরবাসীর ওপর চাপিয়ে দেয়া হবে না। শিক্ষা খাতের উন্নয়নে ১০টি পরিকল্পনার মধ্যে নগরীতে একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, একটি প্রকৌশল অথবা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয়, একটি সঙ্গীত কলেজ, নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর জন্য একটি মাতৃভাষা কেন্দ্র স্থাপনসহ বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন। ইশতেহার ঘোষণার সময় বিভিন্ন প্রিণ্ট, ইলেক্ট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ার প্রতিনিধিসহ বিএনপি ও ২০ দলের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় বিভিন্ন পর্যায়ের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। বিএনপি প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু তাঁর নির্বাচনী ইশতেহারে আরও উল্লেখ করেন, কুমিল্লা একটি পুরাতন শহর। অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা এ শহরে জলাবদ্ধতা ও যানজট সমস্যা দীর্ঘকালের। তার সময়ে অগ্রাধিকারভিত্তিতে কাজ করায় এ সমস্যা কিছুটা কমেছে। যানজট নিরসনে শাসনগাছা এলাকায় একটি ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ ৭৫ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে, আরও ২টি ফ্লাইওভার নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আগামী ৫ বছরে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ, ফুটপাথগুলোকে জনগণের চলাচলের জন্য আরও উপযোগী করে গড়ে তোলা হবে। শিক্ষাখাতের উন্নয়নের জন্য আগামী ৫ বছরে বিদ্যমান স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের পাশাপাশি নতুন করে কুমিল্লা নগরীর সদর দক্ষিণ এলাকার কোটবাড়িকে কেন্দ্র করে একটি শিক্ষা নগরী গড়ে তোলা হবে। নওয়াব ফয়জুন্নেছার নামে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, লালমাই ময়নামতি পাহাড়ে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জন্য মাতৃভাষা কেন্দ্র, কিংবদন্তী সঙ্গীতজ্ঞ শচীন দেব বর্মণের নামে নগরীতে একটি সঙ্গীত কলেজ, একটি প্রকৌশল অথবা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয়, নগরীর দক্ষিণাঞ্চলে মেয়েদের জন্য ২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পশ্চিমাংশে ছেলেদের জন্য একটি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ও ভিক্টোরিয়া কলেজের অবকাঠামোর উন্নয়ন করে আসন সংখ্যা বৃদ্ধিসহ শিক্ষা ক্ষেত্রে অনেকগুলো পরিকল্পনার কথা তার নির্বাচনী ইশতেহারে তুলে ধরা হয়। এছাড়া নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিকসহ সমাজের কীর্তিমান ব্যক্তিদের নামে একটি করে পাঠাগার স্থাপন, দুস্থ মুক্তিযোদ্ধা, শিল্পী, সংগঠক, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের জন্য বিশেষ বরাদ্দ দেয়া হবে। লালমাই, ময়নামতি ও গোমতী নদীকে কেন্দ্র করে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। মা ও শিশু চিকিৎসার জন্য নগরীতে ৮টি নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে, পর্যায়ক্রমে প্রত্যেক ওয়ার্ডে আধুনিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, কর্মজীবী নারীদের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত নিরাপদ হোস্টেল স্থাপন করা হবে। নিউমার্কেটের বেজমেন্টে হকার পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, পর্যায়ক্রমে সকল হকারের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নতি ও বর্জ্যকে সম্পদে পরিণত করতে ২টি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি চূড়ান্ত হয়েছে। নগরীতে ভবন নির্মাণের নক্সা অনুমোদনে স্বচ্ছতা আনা হয়েছে। নগরীর দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নে একশ’ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে, আরও ৩শ’ কোটি টাকার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এ এলাকায় একটি স্টেডিয়াম ও শিশুপার্ক নির্মাণ করা হবে। সাবেক মেয়র সাক্কু গত ৫ বছরে উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরে নির্বাচনী ইশতেহারে আরও উল্লেখ করেন, নগরের অনেক সড়কে পর্যাপ্ত সড়কবাতি লাগিয়ে রাতে আলোকিত করা হয়েছে। খ্যাতিমান ব্যক্তি ও মুক্তিযোদ্ধাদের নামে সড়ক ও স্থাপনার নামকরণ করা হয়েছে। বস্তিবাসীদের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত সেনিটেশন, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও চলাচলের জন্য রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। গত কয়েক বছরে সিটি কর্পোরেশনে সেবা বৃদ্ধির ফলে নতুন কয়েকশ কর্মীর কর্মসংস্থান, নতুন মার্কেট, দোকানপাট, ক্ষুদ্র শিল্প, পরিবহন খাতে কয়েক হাজার বেকার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। নিউমার্কেট আধুনিকায়ন করা হয়েছে এবং চকবাজার, রানীর বাজার, রাজগঞ্জ বাজারের আধুনিকায়নের নক্সা চূড়ান্ত হয়েছে। এছাড়া তার সময়ে কান্দিরপাড় নিউমার্কেট জামে মসজিদসহ অনেক নতুন জামে মসজিদ নির্মাণ, ১৬টি নতুন মন্দির নির্মাণ, কবরস্থান ও শ্মশানঘাট তৈরি ও সংস্কার করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের হোল্ডিং ট্যাক্স ও পানির বিল হ্রাস করা হয়েছে, আগামীতে তা মওকুফের ব্যবস্থা করা হবে। মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত নগর গঠনে জিরো টলারেন্স নীতিতে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে নগরীতে সন্ত্রাস চাঁদাবাজি ঠেকবাজি গোলাগুলি লাশ গুমসহ অস্থিরতা প্রতিরোধে ভবিষ্যতে আরও কঠোর হওয়ার ঘোষণা দেন। তিনি তার ইশতেহারের সবশেষে প্রস্তাবিত কুমিল্লা বিভাগের নাম পরিবর্তনের যে কোন অপচেষ্টা প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে নগরবাসীর কাছে ভোট প্রার্থনা করেন।
×