ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিমানবন্দরে পুলিশ চেকপোস্টের কাছে বিস্ফোরণ

নিজ বোমায় জঙ্গী নিহত

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ২৫ মার্চ ২০১৭

নিজ বোমায় জঙ্গী নিহত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সামনে পুলিশ চেকপোস্টে নিজ বোমা বিস্ফোরণে একজন নিহত হয়েছে। তার নাম আয়াত আল হাসান বলে গোয়েন্দা সংস্থা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে। আয়াত আল হাসান মিরপুর থেকে দেড় বছর আগে নিখোঁজ রিয়াদ আল হাসানের খালাত ভাই। শুক্রবার সন্ধ্যায় এই ঘটনা ঘটে। বিমানবন্দর থানার ওসি নূরে আজম মিয়া জনকণ্ঠকে বলেছেন, হঠাৎ পথচারীর ছদ্মবেশে ওই যুবক এসে কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই বিস্ফোরণ ঘটায় নিজের সঙ্গে থাকা বোমা। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু ঘটে। আয়াত আল হাসান যাত্রীবেশে ট্রলি ব্যাগ হাতে বিমানবন্দর এলাকায় আসে। নিহত হওয়ার পর গোয়েন্দা বিভাগের বম্ব ডিসপোজাল টিম তার শরীরে আরও একটি তাজা বোমা দেখতে পায়। রাত সাড়ে দশটায় বোমাটি নিষ্ক্রিয় করা হয়। পরে তার ট্রলি ব্যাগে পাওয়া অন্য বোমাটি নিষ্ক্রিয় করা হয়। ঘটনার পর পুরো এলাকাটি ঘিরে রাখা হয়েছে। এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশের অধিনায়ক রাশেদুল ইসলাম খান জানান, সন্ধ্যা আনুমানিক সাড়ে সাতটার দিকে বিমানবন্দর গোলচত্বরের পূর্ব পাশের পুলিশ বক্সের সামনের ফুটপাথে হঠাৎ ওই যুবক আত্মঘাতী বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে তার পেটের ভুঁড়ি উড়ে যায়। এটা কোন হামলা নয়, ওর হয়তো টার্গেটই ছিল এখানে এসে আত্মঘাতী হওয়ার। এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, বোমা বিস্ফোরণের আগে নিহত যুবককে সেখানে কিছু সময় পথচারীর ছদ্মবেশে ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে। হঠাৎ বিস্ফোরণের পর রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে তার দেহ। এরপর পুলিশ এসে তাকে ঘিরে ফেলে। এয়ারপোর্ট পুলিশ বক্সের ইনচার্জ এসআই মোস্তাফিজুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, পুলিশ বক্স ও ট্রাফিক চেকপোস্টের মাঝামাঝি জায়গায় যেখানে পুলিশের হোন্ডাগুলো রাখা হয়, ঠিক সেখানে এসেই সঙ্গে থাকা বোমা বিস্ফোরণ ঘটায় ওই যুবক। সে কি হামলা করতে উদ্যত হয়েছিল নাকি শুধু আত্মঘাতী হতেই এ বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে এসআই মোস্তাফিজ বলেন, তার গতিবিধি দেখে মনে হয়েছে সে পুলিশের কাছাকাছি আসার টার্গেট নিয়েই এখানে আসে। কিন্তু পুলিশের উপস্থিতি ও পজিশন দেখে সে আর সাহস করেনি। কোন কিছু না বলেকয়েই আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। এতে তাৎক্ষণিক তার মৃত্যু ঘটে। রাতে এ রিপোর্ট লেখার সময় নিহতের লাশ ঘটনাস্থলেই পড়েছিল। পুলিশের ওই জোনের বেশ ক’জন কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শনে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। একই সময় চলে নিহতের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরির কাজ। এ ঘটনার পর গোটা বিমানবন্দর ও আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে জানান এপিবিএন অধিনায়ক রাশেদুল ইসলাম খান। গোল চত্বর থেকেই বিমানবন্দরগামী যাত্রী ও যানবাহনে ব্যাপক তল্লাশি চালানো হচ্ছে। এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সহকারী কমিশনার তানজিলা আক্তার জানান, শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে ওই ‘হামলার ঘটনায় কোন পুলিশ সদস্য হতাহত হননি। এ সম্পর্কে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান জানিয়েছেন, মূল সড়কে এক ব্যক্তি বোমা বিস্ফোরণে নিহত হয়েছে। আমরা ধারণা করছি ওই ব্যক্তি বোমা বহন করছিল। ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া রাতে ঘটনাটি ‘আত্মঘাতী হামলা’ নয় বলে জানান। বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন রাতে বলেন, বিস্ফোরণটি ঘটেছে বিমানবন্দরের বাইরে। বিমান চলাচল স্বাভাবিক নিয়মেই হচ্ছে। উল্লেখ্য, গত শুক্রবারও ঘটনাস্থল থেকে কয়েক গজ দূরে আশকোনায় র‌্যাবের ব্যারাকে আত্মঘাতী বিস্ফোরণে একজন নিহত হওয়ার পর দেশের সব বিমানবন্দর ও কারাগারে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। কিন্তু এক সপ্তাহের মাথায় মাত্র কয়েকশ মিটার দূরে স্পর্শকাতর বিমানবন্দর এলাকায় আবারও একই ঘটনা ঘটল। র‌্যাবের ব্যারাকে আত্মঘাতী বিস্ফোরণকে জঙ্গী হামলা বলেছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিমানবন্দরের সামনে চেকপোস্টের এই ঘটনায় কারা জড়িত- সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এ সম্পর্কে র‌্যাবের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, এখনও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারছি না। এদিকে বিস্ফোরণের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আইএসের মুখপত্র ‘আমাক নিউজ এজেন্সি’র বরাত দিয়ে জঙ্গী পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ জানায় আইএস এ ঘটনার দায় স্বীকার করেছে।
×