ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী

রাজশাহীতে নগরজুড়ে ফের আবর্জনার স্তূপ

প্রকাশিত: ০৪:৫০, ২৫ মার্চ ২০১৭

রাজশাহীতে নগরজুড়ে ফের আবর্জনার স্তূপ

পরিচ্ছন্ন নগরী হিসেবে রাজশাহী নগরীর খ্যাতি ধরে রাখত পারছে না সিটি কর্পোরেশন। শহরের প্রধান কয়েকটি সড়কে সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা হলেও বেশিরভাগ সড়ক ও আন্তঃসংযোগ সড়কসমূহের বেহাল দশা। যেখানে সেখানে আবর্জনার স্তূপ, পরিপাটি ফুটপাথ ভেঙ্গে একাকার, ড্রেন উপচে ময়লার দুর্গন্ধ ও আবর্জনায় যেন ভরেছে নগরীর বিভিন্ন সড়ক। এছাড়া পরিপাটি ফুটপাথ দখল করে দীর্ঘদিন নির্মাণসামগ্রী ফেলে রাখায় রাজশাহী শহরের সৌন্দর্য ক্রমেই ম্লান হয়ে পড়েছে। নগর সেবা সংস্থা রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন এসব বিষয়ে কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারছে না। ফলে দিনে দিনে বাড়ছে নাগরিক বিড়ম্বনা। অথচ এক বছর আগেই বিশে^ ধূলিকণামুক্ত শহরের তালিকায় সেরা শহরের নাম উঠেছিল রাজশাহী। সময়ের ব্যবধানে সেই সুনাম আর ধরে রাখতে পারছে না সিটি কর্পোরেশন। নগরীর শিরোইল এলাকায় রাস্তার ধারে এখন ফেলা হচ্ছে ময়লা আবর্জনা। এতে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। তবে রাসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তার দাবি অস্থায়ীভাবে সেখানে ফেলা হচ্ছে আবর্জনা। আর রাসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলছেন, পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে যত্রতত্র ফেলে রাখা আবর্জনা। সম্প্রতি সরেজমিনে নগরীর বিভিন্ন সড়ক ও এলাকা পরিদর্শন করে যত্রতত্র আবর্জনার স্তূপ লক্ষ করা গেছে। আগে ময়লা-আবর্জনা সরাসরি ভাগাড়ে ফেলা হলেও এখন আগে সড়কের বিভিন্ন স্থানে স্তূপ করা হচ্ছে। সেখানে কয়েকদিন থেকে দুর্গন্ধ ছড়ানোর পর নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ভাগাড়ে। ফলে রাস্তা দিয়ে যাতায়াতকারীদের পোহাতে হচ্ছে ভোগান্তি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীর শিরোইল এলাকার রেলওয়ে রেস্ট হাউসের মূল ফটকের কাছে রাস্তার পার্শে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের ১৩, ২০ ও ২১ নন্বর ওয়ার্ডসহ আশপাশের বিভিন্ন ওয়ার্ডের ময়লা আবর্জনা ফেলা হয়। আগে ময়লা আবর্জনাগুলো ফেলা হতো নগরীর শিরোইলের মঠ পুকুর এলাকায়। তবে সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দারা এতে বাধা দেয়ার সেখানে আর ময়লা আবর্জনা ফেলা হয় না। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা শেখ মোঃ মামুন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নকর্মীরা দিনের বেলায় ময়লা আবর্জনা ফেলেন। তবে রাতের মধ্যেই পরিচ্ছন্নকর্মীরা ময়লাবাহী বড় গাড়ি নিয়ে এসে সেখান থেকে ময়লা আবর্জনা অপসারণ করে নিয়ে অন্যত্র চলে যায়। তবে তার এ কথার মিল পাওয়া যায়নি। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ এ এফ এম আঞ্জুমান আরা বেগম বলেন, ‘বর্জ্য অবশ্যই পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক। এর ফলে পরিবেশ দূষিত হয়। আর নিউমোনিয়া, এ্যাজমা, ডায়রিয়াসহ নানা ধরনের রোগ ছড়ায়। এদিকে নগরীর উৎসব সিনেমা হল মোড় থেকে সাগরপাড়া মোড় পর্যন্ত রাস্তাটি এখন আবর্জনার স্তূপে পরিণত হয়েছে। রাস্তার দুই ধারের ড্রেনের ময়লা আবর্জনা রাস্তার ওপর পড়ে থাকলেও তা পরিষ্কার করা হচ্ছে না। কোথাও কোথাও রাস্তার অর্ধেক অংশজুড়েই তা পড়ে থাকায় যানবাহন ও সর্বসাধারণের চলাচলে বিঘœ সৃষ্টি হচ্ছে। শুধু ড্রেনের ময়লা নয়, বাড়ির ময়লা ও মাটিও অনেকে ফেলছেন যেখানে সেখানে। ফলে দুর্গন্ধ ও রোগ-জীবাণু ছড়াচ্ছে চারদিকে। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে ড্রেনের পানি উপচে পড়ছে। এর সঙ্গে নগরজুড়ে নির্মাণসামগ্রী রেখে মাসের পর মাস দখল করে রাখা হচ্ছে বিভিন্ন এলাকার ফুটপাথ। অথচ সিটি কর্পোরেশন এসব বিষয়ে কোন ভূমিকা রাখতে পারছেন না। সিটি কর্পোরেশনের একাধিক কাউন্সিলরের দাবি রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন এখন নগর উন্নয়ন তো দূরের কথা নগরীর যে সুনাম রয়েছে তা ধরে রাখতে পারছে না। একজন কাউন্সিলর দীর্ঘদিন ধরে মেয়রের দায়িত্ব পালন করায় আসলে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না সিটি কর্পোরেশনে। এ অবস্থা চলতে থাকলে পরিচ্ছন্ন নগরী হিসেবে রাজশাহীর যে খ্যাতি আছে তা আর থাকবে না। খোদ সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলরদের দাবি এখন বাড়ি থেকে বেরিয়েই শহরের রাস্তাঘাটে আবর্জনার যে দৃশ্য চোখে পড়ে তা ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়। কোন এলাকা আর পরিচ্ছন্ন নেই। সিটি কর্পোরেশনের কোন চেইন অব কমান্ড নেই। কেউ কারও কথা শুনে না। পরিচ্ছন্ন কর্মীরা ইচ্ছেমতো দায়িত্ব পালন করেন। ড্রেনের ময়লা আবর্জনা দীর্ঘদিন সড়কের ওপর পড়ে থাকায় সিটি কর্পোরেশনের নাগরিক সেবা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন চালাচ্ছেন এখন একজন কাউন্সিলর। তার কথা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা শোনেন না। সিটি কর্পোরেশন মূলত, এখন সেবাহীন সংস্থায় পরিণত হয়েছে। ফলে কোন উন্নয়ন তো দূরের কথা নগর পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম সঠিকভাবে পালন করতে পারছে না। এসব বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে রাসিকের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক বলেন, এসব বিষয়গুলো রাসিক কর্তৃপক্ষের নজরে আছে। ইতোমধ্যে ময়লা-আবর্জনা অপসারণের কাজ শুরু হয়েছে। সড়ক ও ফুটপাথে নির্মাণসামগ্রী রাখায় বিভিন্ন নির্মাণাধীন প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক করা হয়েছে।
×