ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

টুটুল মাহফুজ

বায়ু দূষণ প্রতিরোধে কবুতর

প্রকাশিত: ০৬:৪৪, ২৪ মার্চ ২০১৭

বায়ু দূষণ প্রতিরোধে কবুতর

প্রতিনিয়ত বায়ু দূষণের মাত্রা বাড়ছে। এর ফলে বাড়ছে ক্যান্সার, হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং নানা ধরনের শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত গুরুতর রোগের ঝুঁকি। বায়ু দূষণের শিকার হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে লাখ লাখ মানুষ অকালে প্রাণ হারাচ্ছে। বায়ু দূষণের জন্য দায়ী কিছু গ্যাস ও কণা। কণাগুলো এতই ছোট যে খালি চোখে দেখাই যায় না। একটি বালুকণাও এর চেয়ে বিশগুণ বড়। কণা বড় হলে সেটি নাকের ভেতর আটকে যায় কিন্তু খুবই সূক্ষ্ম কণা ঢুকে যায় মস্তিষ্কে স্নায়ুর ভেতরে। এসব কণা মস্তিষ্কের বিভিন্ন কোষের মধ্যে সংযোগ নষ্ট করে ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রম ঘটাতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্ক করে দিয়েছে, জনস্বাস্থ্যের জন্য অন্যতম সবচেয়ে বড় হুমকি হয়ে উঠেছে বায়ু দূষণ। সংস্থাটির মহাপরিচালক বলেছেন, দূষিত বায়ু থেকে মানবজীবনের যে ঝুঁকি সেটা এইডস বা ইবোলার ঝুঁকির থেকেও মারাত্মক। পৃথিবীর ৯০ শতাংশ মানুষ যে বায়ুতে নিঃশ্বাস নিচ্ছে তাতে দূষণের মাত্রা স্বাস্থ্য সংস্থাটির বেঁধে দেয়া মাত্রার থেকেও বেশি। বায়ু দূষণ প্রতিরোধে এবার ব্যবহার করা হচ্ছে কবুতর। এসব কবুতরের সাহায্যে দেখার চেষ্টা চলছে, বায়ু দূষণ শহরে কিভাবে ছড়িয়ে পড়ে। যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, গাড়ির ইঞ্জিন থেকে যে বায়ু দূষণের ঘটনা ঘটে সেটা বাড়ির ছাদ পর্যন্ত উঁচুতে চলে যায়। কিন্তু বিজ্ঞানীরা এখন জানতে চেষ্টা করছেন এরপর এই দূষণ-কণার কি হয়। কোথায় যায়? মাটি থেকে এটি বোঝা খুব কঠিন। এজন্য তারা কিছু কবুতরকে নিয়োগ দিয়েছেন যারা খুঁজে বের করবে দূষিত এই বায়ু যখন আকাশে চলে যায় তখন এর কি পরিণতি হয়? এসব পাখির গায়ে বিজ্ঞানীরা ক্ষুদ্র আকারের সেন্সর ফিতে দিয়ে বেঁধে দিয়েছেন। ফলে এসব কবুতর যেখানেই উড়ে যাবে সেখান থেকেই বায়ু দূষণের তথ্য রেকর্ড করতে পারবে। ওই তথ্য থেকে বোঝা যাবে সেখানকার বায়ু কতটা উষ্ণ বা ঠাণ্ডা। আমাদের আশপাশে কত কবুতরকে দেখি। বাড়ির ছাদে, কার্নিশে, রাস্তায়। খাবারের খোঁজে সারাক্ষণই দৌড়ে বেড়াচ্ছে। যুক্তরাজ্যে বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা এখন এই পাখিটিকেই কাজে লাগাচ্ছেন বায়ু দূষণ বিষয়ে তাদের গবেষণায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গবেষক রিক টমাস বলেছেন, ‘আমাদের তখন মনে পড়ল পাখির কথা। আরে- পাখি তো সব জায়গাতেই উড়তে পারে। তাহলে এই কবুতরই তো আমাদের সেন্সরগুলো বহন করতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘এসব সেন্সর আকারে এবং ওজনে খুবই ছোট। এর ভেতরে আছে ছোট্ট একটি ক্যামেরাও। একটা কবুতরের পক্ষে এটা বহন করা কোন সমস্যা নয়। এর মাধ্যমে আমরা যেসব তথ্য সংগ্রহ করতে পারব সেখান থেকে বোঝা সম্ভব হবে কোন শহরে বায়ু দূষণ কিভাবে ছড়িয়ে পড়ে।’ প্রথম দিন বিজ্ঞানীরা একটু নার্ভাস ছিলেন। তারপরেও কিছু কবুতরের পাখায় ক্যামেরাসহ সেন্সর বেঁধে দিয়ে উড়িয়ে দিলেন আকাশে। কিছুক্ষণ পর একসময় তারাও ফিরেও এলো বাড়িতে। সেন্সরগুলোর গায়ে তখনও বাতি জ্বলছে। এই সেন্সর থেকে বিজ্ঞানী রিক টমাস দেখতে পেলেন কবুতরটি কোন কোন পথ ধরে উড়ে গিয়েছিল। ওই পথে কত ছিল বায়ুর তাপমাত্রা। এসব তথ্য থেকে বিজ্ঞানীরা এখন জানতে পারবেন বড় শহরের শহরে বায়ু দূষণ কিভাবে ছড়ায়। সূত্র : বিবিসি, ন্যাশনাল জিওগ্রাফি
×