ভিন্ন আদলের মানুষ
সাইয়িদ আতীকুল্লাহ (১৯৩৩-১৯৯৮) কবি, গল্পকার ও সাংবাদিক হিসেবে পরিচিত। এই পরিচয়ের ভিত্তিমূলের মানুষটি কেমন ছিলেন? তা বিভিন্নজন বিভিন্নভাবে বিশ্লেষণে তুলে ধরতে পারেন। তাঁর পাঠক হিসেবে ব্যক্তিগত সম্পর্কের দূরবর্তী অবস্থানে থেকেও কি আমি তাঁর আদলটি খুঁজে পাই না? পাই। একজন পাঠক হিসেবে তিনি আমার কাব্যপাঠের সাথে সম্পর্কিত ও ঘনিষ্ঠ অন্যতম একজন কবি। পাঠক হিসেবে একজন কবির সামাজিক-ভূমিকা, চালচলন ও কর্মকা-ের প্রতি আগ্রহমূলক পর্যবেক্ষণ কি থাকে না? থাকে। একজন পাঠক তার প্রিয় বা পাঠ্যাভাসের সঙ্গে সম্পর্কিত সবল ও সমকালীন কবিকে অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে কি দেখেন না? আমি তো দেখি, দেখি কাছের বা প্রিয় কবি বা সমকালীন কবিকে। আর এভাবে সেই কবির আবরণ, তাঁর সমাজ-বাস্তবতার সঙ্গে ভূমিকা, তাঁর ব্যক্তিগত মূল্যবোধ, তাঁর নৈতিকতা ইত্যাদি খ--খ-ভাবে তৈরি হয়ে অখ- এক প্রতিকৃতি তৈরি করতে সাহায্য করে।
কবি-গল্পকার-সাংবাদিক সাইয়িদ আতীকুল্লাহ ক’বছর আগে লোকান্তরে চলে গেলেন। কিন্তু লোকান্তরের পূর্বেই তাঁর সম্পর্কে আমার ব্যক্তিগত ধারণা গড়ে উঠেছিল। মাঝে মাঝে সমকালীন বিভিন্ন কবির কর্মকা- বিশ্লেষণে নিজস্ব বিবেচনায় আগ্রহী হয়ে উঠতাম, তখন কবি সাইয়িদ আতীকুল্লাহর প্রতিকৃতি পর্যবেক্ষণে আর অনুভবে থাকতো বিশেষ ভাবেই। বেঁচে থাকার প্রয়োজনীয় অর্থ উপার্জনের জন্য চাকরি করেছেন, সেই চাকরির বাইরে তিনি শুধু কবিতার জন্য জীবনের শক্তি-সামর্থ্যকে আস্থার সঙ্গে বিনিয়োগ করেছেন বলেই নিজ সময়ে তিনি একজন বৈশিষ্ট্যপূর্ণ সবল কবি ছিলেন। প্রচুর কবিতা লিখেছেন। নিয়মিত লিখেছেন, ধারাবাহিকতা ক্ষুণœ হতে দেননি। কিন্তু কবি-পরিচিতি নিয়ে সামাজিক, আর্থিক ও চাকরিগত কোনো সুযোগ-সুবিধা বা প্রচার মগ্নতায় নিজেকে সমর্পিত করেননি; এই সময়কালে এই বৈশিষ্ট্য এক ভিন্ন ধরনের মানুষকেই চিহ্নিত করে। পর্যবেক্ষণে মনে হয়েছে এটা তাঁর নিজের নৈতিক শক্তিতে গড়ে ওঠা আপন বৈশিষ্ট্যপূর্ণ শক্ত অবস্থান। এই অবস্থান এই সময়ের কবিদের মধ্যে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। জেনেছিÑব্যাংকের উচ্চপদের চাকরিও নৈতিক কারণে ছেড়েছেন। কবি হয়ে উঠার জন্য তিনি কখনো কাঙালিপনা করেননি। যখন কোনো কোনো কবিকে নিজের যশপ্রাপ্তির জন্য বিভিন্ন ধরনের কূটকৌশল ও ভেক ধারণের জন্য তৎপর হতে দেখা যায়! পর্দার আড়ালে রাজনৈতিক ও সরকারী সুযোগ-সুবিধা ব্যক্তিগত লোভে টেনে নিয়ে আত্মহারা হয়ে মর্যাদাহীনভাবে পঙ্কিল ¯্রােতে গা ভাসিয়ে চলেন, তখন একজন কবি সাইয়িদ আতীকুল্লাহ বিপরীত ¯্রােতে চলেছেন। একজন মানুষ হিসেবে তাঁর এই মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান ভিন্নমাত্রাকে উজ্জ্বল করে। সেই উজ্জ্বলতা নিয়ে এই সমাজে অবস্থান করা যেমন কঠিন, তেমনি এঁদের সংখ্যাও কম অথচ এঁদের সংখ্যা না বাড়লে সমাজের কল্যাণ ও শুভচেতনা সংহত হবে না।
তাঁকে দেখেছি একা একা ঢাকার রাজপথে সাধারণ মানুষের মতো হেঁটে চলতে। দেখেছিÑবাংলা একাডেমির বই মেলায়, আলোচনা অনুষ্ঠানের শেষ সীমানায় কোনো এক চেয়ারে বসে থেকে আলোচনা মনোযোগ সহযোগে শুনতে। খুব সাধারণভাবে বাংলা একাডেমির বইমেলা আসতেন, বিভিন্নখানে খ্যাত-অখ্যাত তরুণদের মাঝে বসতেন। আমিও বিচ্ছিন্নভাবে তাঁর সঙ্গে বসেছি। মৃদুস্বরে কম কথা বলতেন। এভাবে তাঁর হাঁটা-বলা-বসা ছিল খুবই সাধারণ। কিন্তু সাধারণ হয়ে অসাধারণ দৃষ্টি দিয়ে পরিবেশ-পরিস্থিতি দেখতেন বলে আমার প্রতীয়মান হয়েছে। আর এই পর্যবেক্ষণই তার নিজস্ব-ধারায় কবিতায় বিষয় হয়ে মূর্তমান হয়ে উঠতো।
জাতীয় কবিতা উৎসবের প্রস্তুতির দিনগুলোতো তাঁকে দেখা যেত কবি ও কবিতাকর্মীদের ভিড়ের মাঝে বসে থাকতে। উৎসবের প্রাক্কালে সাংবাদিক সম্মেলনে ও উৎসবের সময় বিভিন্ন অধিবেশনে দাঁড়িয়েÑবসে, শুনতেÑ দেখতে তাঁকে দেখেছি। কিন্তু মঞ্চে উঠতে দেখেনি! সভা-মঞ্চ-বিবৃতি এসব তিনি সচেতন ভাবে পরিহার করতেন। তিনি তাঁর সময়ে একমাত্র মাত্র কবি যিনি এসব থেকে একজন বড় কবি হয়েও সবার চেয়ে বেশি নিস্পৃহ থেকেছেন। এই ভূমিকা তাঁর নিজস্ব বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আচরণ। এ ধরনের আচরণ হয়তো অনেকের সমর্থন পায়নি। তবে আমার মনে হয়েছেÑব্যক্তির দ্বন্দ্ব ও ভেদবুদ্ধিতে কখনো কখনো আমাদের সাহিত্য-সাংস্কৃতিক ধারা চোরা¯্রােতে গিয়ে পৌঁছে; এ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে সচেতন ভাবে দোষ-দূষণ থেকে তিনি মুক্ত থাকতে হয়তো চেয়েছেন। এই নয় যে, তিনি সুবিধাবাদী অবস্থানে থেকে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি, সাহিত্যেও রুচিও নৈতিকতা অসৎভাবে মধ্যযুগীয় অবস্থানে নিয়ে বন্দী করে ফেলেছেন। বরং ঋজু হয়ে বাংলাদেশের অগ্রসরমান সাহিত্যধারায় নিজের অবস্থানের মর্যাদা দৃঢ় করেছেন, হেলাফেলাভাবে নষ্ট করে দোলাচলচিত্তে সুবিধাবাদী প্রবণতায় নিজের দৃষ্টিভঙ্গি বার বার বদলিয়ে ফেলেননি। এভাবে একজন দৃঢ়চেতা মানুষ হিসেবে তাঁর কর্মকা-ের সাজুয্যে গড়ে উঠেছেÑ কাব্যকৃতি, সাহিত্য-ভূমিকা ও জীবনের দর্শন-নৈতিকতা। ব্যক্তি মানুষ ও সৃজনশীলতায় গড়ে ওঠা ভূমিকা সাইয়িদ আতীকুল্লাহর ক্ষেত্রে পরস্পর হাত ধরে চলেছে।
সাংবাদিকতায় অবদান
সাইয়িদ আতীকুল্লাহ দৈনিক সংবাদের বিশেষ সংবাদদাতা হিসেবে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। তাঁর বৈশিষ্ট্যপূর্ণ প্রতিবেদনের একজন আগ্রহী পাঠক ছিলাম আমরা অনেকে। তাঁর নামে প্রকাশিত বহু প্রতিবেদন এক ধরনের আকর্ষণে মনকে টানতো, বিশেষ ব্যঞ্জনা অনুরণিত করতো। বিশেষ করে সাংস্কৃতিক পরিম-লের প্রতিবেদন, সংসদ বিষয়ক প্রতিবেদন, ঋতু পরিবর্তনের প্রতিবেদন তিনি রচনা করেছেনÑ আপন বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ভাষায় ও শৈলীতে। এসব প্রতিবেদনের গভীরতায় কখনো কখনো শ্লেষ, প্রতীক ও রূপকের ব্যঞ্জনা আমরা লক্ষ্য করেছি। এরশাদের শাসনামলে বা প্রতিকূল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আবহাওয়া বা ভিন্ন প্রসঙ্গের প্রতিবেদন রচনা করে তিনি রূপক তার প্রতীকী ব্যঞ্জনায় পাঠকের বোধকে ভিন্ন দিক-নির্দেশনায় নিয়ে যেতে পারতেন। এই ধরনের প্রতিবেদন, লেখার শক্তি সমকালীন সময়ে সংবাদপত্রে প্রায় দুর্লভ। তাঁর এই ধরনের প্রতিবেদন সাহিত্য মূল্য নিয়ে বা ভিন্ন ধারার প্রতিবেদনের দৃষ্টান্ত হিসেবে সংরক্ষিত হতে পারে। এখানে বলা অপ্রাসঙ্গিক হবে না যে, জাতীয় কবিতা পরিষদ আয়োজিত জাতীয় কবিতা উৎসবের সবচেয়ে দীর্ঘ-অতলস্পর্শী প্রতিবেদন তিনি বহুবার রচনা করেছেন। সাংবাদিকতা পেশায় তিনি সৃজনশীল সাহিত্যের প্রখরতা দিয়ে সফলতা ছুঁয়ে ছিলেন।
কবিতায় ভিন্নমাত্রা
সাইয়িদ আতীকুল্লাহ-এর প্রথম গ্রন্থটি গল্পের; নাম: বুধবার রাতে (১৯৭৩)। এরপর প্রকাশিত হয়েছে একটির পর একটি কাব্যগ্রন্থ: আমাকে ছাড়া অনেক কিছু (১৯৮০): আঁধির যতো শত্রু মিত্র (১৯৮০); অদম্য পথিকের গান (১৯৮২); এই যে তুমুল বৃষ্টি (১৯৮৪); সবখানেই চড়া রোদ (১৯৮৫); শাসন নেই, ধমক নেই (১৯৮৭); যদি কিছু পাই (১৯৮৭); রোজ তোমাকে বেরুতে হয় (১৯৮৭); এই যে আমার বৃদ্ধাঙ্গুলি দ্যাখো (১৯৮৯) এবং চেয়ে দেখি কত কিছু (১৯৯৪)। তথ্যমতে তাঁর উল্লিখিত ১০টি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে বলে জানি। এছাড়াও অনুবাদ-কবিতার দুটি গ্রন্থ রয়েছে: সোনঝেনিৎসেনের কবিতা (১৯৮০) ও খায়রিল সানোয়ারের নির্বাচিত কবিতা (১৯৮৪)। আরও অনেক কবিতা গ্রন্থভুক্ত হয়নি ও অপ্রকাশিত থেকেছে অনেক কবিতা।
তাঁর প্রকাশিত শেষ কাব্যগ্রন্থ (?) ‘চেয়ে দেখে কতকিছু’ সন্ধানী প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়। সমকালীন কবিতার ধারায় ভিন্নমাত্রা নিয়ে, ভিন্নবোধ নিয়ে ও ভিন্ন সৌকর্যে তাঁর কবিতা দেদীপ্যমান। তাঁর কাব্যগ্রন্থের নাম নিয়ে উচ্চকিত করে বলতে চাই: তাঁর কবিতায়Ñ ‘চেয়ে দেখি কত কিছু’।
‘চেয়ে দেখি কত কিছু’ কাব্যগ্রন্থের কানা খোঁড়া বাজ চিল’ নামের কবিতায় বলেছেন :
‘তাল রাখতে খোঁড়াদের সঙ্গে হোঁচট খেতে হয়।’
হ্যাঁ সাইয়িদ আতীকুল্লাহ সমাজে যারা চেতনারহিত, সুস্থ নয়, বোধ নিয়ে শিরদাঁড়া সোজা করে চলতে পারেন না, তারা তো খোঁড়া; খোঁড়াদের সাথে তো কবি তাল রাখতে পারেন না।
‘অবশ্য রয়েছে বেশ কিছু শ্রম এবং ঘাম
ফলে চোখের সামনে থামা আকাক্সক্ষার এক
বিশাল বাগান দ্যুতিময়।’
কবি আশাবাদী হয়েছেন ‘তাই না!’ নামক কবিতায়
আশ্চর্যবোধ নিয়ে।
সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধি আর ধর্মোন্মাদ পিশাচেরা যে নিষ্ঠুর-কুটিল এ শুভবোধ বিরোধী তা তাঁর কবিমানসকে উচ্চকিত করেছে, তাঁর ‘ওয়াক-থু’ কবিতায় বিশেষভাবে আমরা লক্ষ্য করি:
‘কী হয়েছে দূর অযোধ্যায়
ভেঙ্গেছে মসজিদ এক ঐতিহাসিক পবিত্র প্রার্থনাময় উজ্জ্বল গম্ভীর
ধর্মোন্মাদ পিশাচেরা।
ক্ষ্যাপা ঢেউ ভয়ংকর লেজ আছড়ায়
বিষণœ ঢাকাতে দেখি এখন দৈনিক
ছোটখাটো পিশাচেরা এখানেও হয়েছে অস্থির
এখানেও
ধর্মান্ধরা, দাঙ্গাবাজ, তাবৎ লুটেরা।
‘খুনীদের সঙ্গে নিয়ে নিস্তরঙ্গ শাখারী বাজারে
ভেঙ্গেছে মন্দির এক ধুন্দুমার রাতের আঁধারে
ভেঙ্গেছে দোকানপাট, বাড়িঘর, কিছু গ্রন্থাগার
পুড়িয়েছে বইপত্র প্রকাশ্য রাস্তায়
শীতের ভীষণ মিষ্টি দুপুর বেলায়
আকাশে উড়ছে ছাই, ভাঙ্গা কিছু মন্দিরের গুঁড়ো
ধূলিকণা
সারাদেশে এই নিয়ে আতংকিত তাও আলোচনা
গালে হাত রেখে খুব উল্টোপাল্টা কতো কিছু
ভাবে কতো বুড়ো
বুকে দুঃখ, ভয় আর লজ্জায় মুখ নীচু।
ধর্মান্ধরা যেই হোক মুসলমান কি হিন্দু
তারা নষ্ট, তারা ভ্রষ্ট, দুশ্চরিত্র, কুঠিল, নিষ্ঠুর
আগুন লাগায় দেশে উপাসনালয় করে ভাঙচুর
তাদের মুখের ওপর আমি ছিটিয়ে দিচ্ছি ময়লা, গরম থু থু
ওয়াক-থু, ওয়াক-থু, ওয়াক-থু, ওয়াক-থু।’
উল্লিখিত কবিতায় কী ঘৃণা আর কী চেতনা একাকার হয়েছে। তপ্ত এক দৃষ্টিভঙ্গির সাযুজ্যে নিজের কালকে ধারণ করেছেন। তিনি দূরবর্তী বদ্বীপের বাসিন্দা হয়ে থাকেননি। প্রকৃত কবিতা নিজের সময়-কাল থেকে কখনো পালিয়ে থাকতে পারেন না, বরং নিজের বোধকে পাঠকের বোধে সঞ্চরণ করেন।
সুবিধাভোগী, ভ-, সুযোগসন্ধানী, আত্মসর্বস্ব সুখবাদে যারা অস্থির; তাদেরই দখলে সমাজ হয়েছে বিষবাষ্প পূর্ণ, সেই বোধ ‘দিনরাত কারো মাস’ কবিতায় উচ্চকিত:
‘পাছা নড়ে চড়ে, মাংসপেশী মাঝে মাঝে চমকায়
গাধাগুলো তবু গুড় খায়
গুড় খাওয়া গাধার ঢেকুরে
চারদিকে পুড়ে যাচ্ছে সমস্ত বাতাস।’
এই কবিতায় আমরা শ্লেষ আর রূপকের উপস্থিতি লক্ষ্য করি। কবি সাইয়িদ আতীকুল্লাহর কবিতায় শ্লেষের বিচিত্র রকম ব্যবহার দেখা যায়।
‘টেকসই সূর্যোদয় চাই’ নামক কবিতায় সাইয়িদ আতীকুল্লাহ-এর সমাজচেতনা গভীরভাবে আমরা খুঁজে পাই, খুঁজে পাই বাইরে আপাত ধীরস্থির অবয়বের একজন মানুষের ভেতরে সমাজমনস্ক পরিবর্তনকামী চেতনাদীপ্ত এক কবিকে, তাই তিনি বলতে পারেন:
‘বৃষ্টি পালিয়ে বেড়ায়
প্রাত্যহিক অমাবস্যায়
দেশান্তরী বৃষ্টি
গুমোট বাড়ায় তাছাড়া অনেক অনাসৃষ্টি
ঘন ঘন হয়
দেশময়, দেশময়
হে মানুষ, সাড়া দাও, আজ বলো
সূর্যোদয় স্থায়ী হোক, হাত তোলো
কতবার সূর্যোদয় হলো কিছুতে টেকে না
মুখ থুবড়ে পড়ে বারবার, অন্ধকার কেউ কিছু
দু’হাত দূরেও দেখে না
লজ্জায় হতাশায় মাথা হয় নিচু
টেকসই সূর্যোদয় চাই বৃষ্টি চাই আশীর্বাদ চাই
কি করে সাজাবো বলে বিদঘুটে এই আকাক্সক্ষাটাই
আর এদের অনেক ভূত পিশাচের ঝাঁকা মুটে হয়ে
মাথায় কেবলি অভিশাপ বয়ে
বেড়াচ্ছে এদিক ওদিক দিশেহারা
এদেশের সবাই আমরা, আমরা।’
সাইয়িদ আতীকুল্লাহ ‘তীরন্দাজ নই’ কবিতায় তাঁর আত্মজীবনের সারমর্ম উচ্চকিত করে বলেছেন:
‘আমি কোনো তীরন্দাজ নই
কখনো খবর লিখি কখনো কবিতা লিখি
বাকী সময়টা পড়ি কোনো ছোটবড়ো বই
চোখ খোলা, কান খোলা, মনটাও খোলা
রোজ কিছু শিখি
কিছুতে যায় না ভোলা
আমি কোনো বীর নই, সুখী বা অসুখী
রোজ কিছু লিখি আর পড়ি কিছু বই
এ কাজে শিশির জমে মনে, কুয়াশাও জমে
বস্তু দু’টি কম বেশী বাড়ে এবং কমে’
নিভৃতচারী কবি বলে আত্মঅহংকার নিয়ে সমাজ-জীবন-পারিপাশির্^কতা থেকে কখনো তিনি দূরে থাকেননি। বরং চেতনার গভীরতায় উৎসারিত হয়েছে তাঁর কবিতার পঙক্তি।
সাইয়িদ আতীকুল্লাহ এমন একজন কবি; যাকে সাহিত্য-সমালোচক-পাঠককে মনোযোগ ও বোধের সম্মিলনে আবিষ্কার করে নিয়ে কাছে টানতে হয়। তিনি মনোযোগী পাঠক ও সমালোচকের শিল্পবোধের দাবী পূরণে শুধু উল্লেখযোগ্য কবি নন, বোধ-দর্শন-নৈতিকতায় একজন শক্তিশালী ভিন্নধারায় কবি হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছেন। ‘চেয়ে দেখি কত কিছু’ নামক একটি কাব্যগ্রন্থের ওপর চোখ মিললেই তা মনে হয়। আরও বহু কাব্যগ্রন্থ ও বহু অগ্রন্থিত কবিতা তো আছেই।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: