ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জঙ্গী সন্ত্রাসসহ নানা অপকর্মে রোহিঙ্গা সংগঠন সাতুল্লাজিম

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ২৪ মার্চ ২০১৭

জঙ্গী সন্ত্রাসসহ নানা অপকর্মে রোহিঙ্গা সংগঠন সাতুল্লাজিম

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা সরকারের মানবিক দিকটির সুযোগ নিয়ে ক্রমাগতভাবে বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে যাচ্ছে। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের যেসব সশস্ত্র গ্রুপ রয়েছে সেগুলো বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে চিহ্নিত। অনুরূপ প্রক্রিয়ায় এদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা নতুন একটি সংগঠন গড়ে তুলেছিল, যার নাম সাতুল্লাজিম। এ সংগঠনটির সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে জঙ্গীসহ সন্ত্রাসীদের। জানা গেছে, এ সংগঠনটির মূল উদ্দেশ্য দেশী-বিদেশী সাহায্য ও দাতা সংস্থার কাছ থেকে মানবিক সহায়তার নামে অর্থ হাতানো। যে কারণে এ সংগঠনটির নেতারা এদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত না যেতে উদ্বুদ্ধকরণ প্রক্রিয়ায় নেমেছে। শুধু তাই নয়, যারা নিজ দেশে যেতে আগ্রহী তাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের দুরবস্থার চিত্র তুলে ধরে এ সংগঠনটি বিদেশে প্রচার চালাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে বিদেশী ত্রাণ ও অনুদান আসছে বিচ্ছিন্নভাবে। রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প ও বস্তি এবং বিচ্ছিন্নভাবে থাকা মিয়ানমার থেকে আসা এ জনগোষ্ঠীর সদস্যদের স্থানীয় লোকজন, নিরাপত্তা বাহিনী এবং প্রশাসনের পক্ষে নির্যাতন চালানো হচ্ছে বলেও তারা বহির্বিশ্বে প্রচার চালাচ্ছে। সংগঠন করে বহির্বিশ্বে প্রচার কাজে সহযোগিতা দিচ্ছে হল্যান্ডভিত্তিক চ্যারিটি সংস্থা এমএসএফ, ফ্রান্সভিত্তিক এসিএফ এবং যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মুসলিম এইড ইউকে। এছাড়া রোহিঙ্গা রিফিউজি বয়েজ ফর হিউম্যান রাইটস (আরআরবিএইচআর) এর সংক্ষিপ্ত নাম দেয়া হয়েছে সাতুল্লাজিম। এটিকে স্থানীয়ভাবে ‘রোহিঙ্গা আওয়াজ’ বলা হচ্ছে। এ সংগঠনের ১৫ সদস্যের কেন্দ্রীয় একটি কমিটি কাজ করছে। সংগঠনটির চেয়ারম্যান হয়েছে মাওলানা আবু আনোয়ার ওরফে আনোয়ার সাদেক, কো চেয়ারম্যান মাওলানা মনজুর, সেক্রেটারি মৌলবি হামিদ, কো জেনারেল সেক্রেটারি মৌলবি ফরিদুল ইসলাম, অফিস সহকারী মৌলবি মোঃ সফি, ফাইন্যান্স সেক্রেটারি হাফেজ হামিদ, কো ফাইন্যান্স সেক্রেটারি মৌলবি বদরুল ইসলাম ও ট্রেজারার মৌলবি জানে আলম। এছাড়া সদস্য হিসেবে রয়েছে আক্তার হোসাইন, মোঃ সেলিম, আইয়ুব মাঝি, মাস্টার মেমা. নুর, মাস্টার এনাম, ডাঃ খাইরুল আমিন, মাস্টার কামাল, আবু সিদ্দিক, হাজী ফজল আহমদ, মোঃ ইউনুস ও মোঃ ইদ্রিস। এরা রোহিঙ্গাদের মানবিক দিকটি তুলে ধরে মূলত নগদ অর্থ ও সাহায্য নেয়ার পাশাপাশি এদের একটি অংশকে বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়ার সুযোগ করে দিচ্ছে। চট্টগ্রামের একটি ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ইতোপূর্বে বিপুল পরিমাণ ত্রাণ সামগ্রি ও আর্থিক অনুদান পেয়েছে রোহিঙ্গারা। এসব সাহায্য ও অর্থের লোপাট হচ্ছে দেদার। জানা গেছে, তুর্কী রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, তুর্কী দিনায়াত ফাউন্ডেশন, কুয়েতের আবদুল্লাহ নুর চ্যারিটি, ইন্টারন্যাশনাল চ্যারিটেবল অর্গানাইজেশন, আবদুল্লাহ আল মোতাওয়া, চ্যারিটি ফাউন্ডেশন, আল জামিল, আরব আমিরাতের শারজাস্থ চ্যারিটি হাউস, সে দেশের দাতা আবদাল রহমান মোহাম্মদ আত্ তামিমি, ওমানের আবদুল্লাহ আল ফাইমিসহ মধ্যপ্রাচ্য ও পশ্চিমা দেশের বিভিন্ন মুসলিমদাতা ও সাহায্য সংস্থার কাছ থেকে ইতোমধ্যে বিপুল পরিমাণ অর্থ ও সাহায্য সামগ্রি এরা পেয়েছে। কিন্তু এসব সাহায্য অসহায় রোহিঙ্গাদের ভাগ্যে জুটছে না। এদিকে দেশে নতুন করে জঙ্গী সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছে রোহিঙ্গা যুবকদের বড় একটি অংশ। কারণ, আশ্রয় শিবির ও বস্তি এলাকা থেকে অবাধে আসা-যাওয়ার সুযোগ অবারিত হয়ে আছে। নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে কোন ধরনের কাটা তারের বেড়া বা বাউন্ডারি নেই। ফলে কে কখন কোথায় যাচ্ছে, কেন যাচ্ছে এর কোন তথ্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে নেই। পুলিশ সূত্রে বৃহস্পতিবার জানানো হয়েছে, রোহিঙ্গা নর-নারীদের একটি অংশ এদেশে বিয়ের সম্পর্কও গড়ে তুলছে। আত্মীয়তা গড়ে তোলার সুবাদে বেশকিছু পরিবার নব্য জেএমবির সঙ্গে জড়িত হয়েছে। জঙ্গী সন্ত্রাসীদের টার্গেট করেছে রোহিঙ্গা নারীদের বেশি। সীতাকু-ের সাধন কুঠির আস্তানা থেকে গ্রেফতারকৃত আরজিনার বোন মরজিনা ঢাকায় গিয়ে নিখোঁজ রয়েছে বলে বলা হলেও মূলত সে নব্য জেএমবির ক্যাডার আয়াতকে বিয়ে করেছে বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে। অপরদিকে, কুমিল্লার চান্দিনায় আটক হাসানের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় হচ্ছে জহিরুল। যাকে সীতাকু-ের সাধন কুঠির থেকে গ্রেফতার করেছে। জহুরুলের বোন জোবাইদা ও বোন জামাই কামাল উদ্দিন আত্মঘাতী হামলা চালাতে গিয়ে ছায়ানীড় ভবনে প্রাণ হারিয়েছে। এছাড়া ঢাকার মিরপুর থেকে নিখোঁজ হওয়ার পর দুই খালাত ভাই আয়াত ও রাফাত সীতাকু-ের ছায়ানীড় ভবনে আত্মঘাতী বোমার বিস্ফোরণে প্রাণ হারিয়েছে। এদিকে, নব্য জেএমবির নেতা দিনাজপুর থেকে নাইক্ষ্যংছড়ির বাইশারিতে আসা সোহেল রানা ও তার স্ত্রী এবং সন্তানদের সঙ্গে রেখে এখনও গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে। এ সোহেল রানা বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে নব্য জেএমবির শীর্ষ পর্যায়ের নেতা হিসেবে রয়েছে বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে। এর পাশাপাশি তার সঙ্গে থাকা সুইসাডাল স্কোয়ার্ডের আরেক সদস্য মূসাকে এখনও গ্রেফতার করা যায়নি। অন্য যে ১১ সদস্য সোহেল রানার সঙ্গে রয়েছে তাদের নাম ঠিকানা বা পরিচয় জানার জন্য পুলিশ তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।
×