ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কুসিক নির্বাচন ॥ জমে উঠেছে দুই জোটের লড়াই

সীমার প্রচারে মাঠে ১৪ দলের নেতারা, সাক্কুর পক্ষে ২০ দল

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ২৪ মার্চ ২০১৭

সীমার প্রচারে মাঠে ১৪ দলের নেতারা, সাক্কুর পক্ষে ২০ দল

নিজস্ব সংবাদদাতা, কুমিল্লা, ২৩ মার্চ ॥ কুমিল্লা সিটি নির্বাচন সামনে রেখে ভোটের মাঠে চলছে দুই জোটের জোর লড়াই। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমার পক্ষে বৃহস্পতিবার থেকে মাঠে নেমেছেন ১৪ দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এবং বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুর পক্ষে কাজ করছেন ২০ দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। সমানতালে চলছে প্রচার। বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার দিকে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় প্রাঙ্গণে ১৪ দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ সংবাদ সম্মেলন করেন। এ সময় তারা বিএনপি প্রার্থী সাক্কুর বিরুদ্ধে দুর্নীতির নানান অভিযোগ উত্থাপন করেন এবং সীমাকে সৎ ও যোগ্য প্রার্থী উল্লেখ করে তাকে নির্বাচিত করার জন্য নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। নির্বাচনে নিজ দলের মেয়র প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করতে ব্যাপক প্রচার চালাচ্ছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতৃবৃন্দ। ঢাকা থেকে উভয় দলের শীর্ষ নেতারাও সার্বক্ষণিক নির্বাচনের বিষয়টি মনিটরিং করছেন। এদিকে শুক্রবার বিএনপির প্রার্থী নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করবেন বলে জানা গেছে। জানা যায়, বিএনপি প্রার্থী সাক্কুও প্রথম নির্বাচনের মতো ভোটের মাঠে বাজিমাত সৃষ্টি করতে কৌশলী ভূমিকায় রয়েছেন। ক্ষমতাসীনদের তুলনায় শোডাউন ও প্রচারে নানা কৌশল অবলম্বন করে চলছেন তিনি। অন্যদিকে, কুসিকের প্রথম নির্বাচনে দলীয় কোন্দলের কারণে সাক্কুর সঙ্গে বিজয়ী হতে না পারা কুমিল্লার প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যক্ষ আফজল খানের মেয়ে আঞ্জুম সুলতানা সীমা এবার দলীয় প্রতীক নৌকার প্রার্থী। দলীয় সরকার ক্ষমতায়। তাই নৌকার বিজয়কে সরকার দলীয়রা নিজেদের মর্যাদার লড়াই হিসেবে দেখছেন। তাদের নির্বাচনী প্রস্তুতি, শোডাউন ও কর্মপরিকল্পনাসহ নির্বাচনী ইশতেহার তাই প্রমাণ করে। গত মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের আঞ্জুম সুলতানা সীমা ২৯ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণার মধ্য দিয়ে তার পরিকল্পনার চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর বিগত ৫ বছরের কর্মকা-ের সমালোচনা করতেও পিছিয়ে ছিলেন না। অপরদিকে, সীমার নির্বাচনী ইশতেহারের সমালোচনায়ও মুখর ছিলেন সাক্কু। ইতোমধ্যে বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শুক্রবার সাক্কু তার নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করবেন। আইনগত জটিলতার কারণে ভোটের মাঠে আসতে না পারলেও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এবং রেলমন্ত্রী ও সাধারণ সম্পাদক মুজিবুল হক মুজিব সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছেন। অপরদিকে, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার নির্দেশে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ও ২০ দলের নেতারা সাক্কুর পক্ষে মাঠে প্রচার চালালেও কৌশলগত কারণে এ মুহূর্তে জোটের প্রার্থী সাক্কুর পাশে নেই জামায়াত। সীমার পক্ষে ১৪ দলের সংবাদ সম্মেলন ও গণসংযোগ শুরু ॥ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমার পক্ষে গণসংযোগে কুমিল্লায় এসে বৃহস্পতিবার বেলা ১২টায় কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় প্রাঙ্গণে সংবাদ সম্মেলন করেছে ১৪ দল। এ সময় ১৪ দলীয় জোটের প্রতিনিধিদলের নেতা ও সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া কুমিল্লা সিটির সাবেক মেয়র ও বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুর বিরুদ্ধে দুর্নীতির নানান অভিযোগ তুলে ধরেন এবং সমৃদ্ধ নগর প্রতিষ্ঠায় সীমার পক্ষে ভোট চান। তিনি বলেন, কুমিল্লা নগরীর উন্নয়নের জন্য আওয়ামী লীগের দুই মন্ত্রী ও এমপি প্রচুর অর্থ বরাদ্দ দিয়েছেন, কিন্তু উন্নয়নের ছিটেফোঁটাও হয়নি। তাহলে এ টাকা গেল কোথায়, পিঁপড়ায় খেয়ে ফেললো কি না। তিনিই বিএনপির একমাত্র ভাগ্যবান মেয়র, যিনি জেলে যান নাই, তিনি কিসের জন্য জেলে যান নাই তা আমরা জানি না। সাক্কু কারাগারে থাকলে হয়ত বলা যেত সরকারী বরাদ্দের টাকা তিনি আত্মসাত করেন নাই, কিন্তু তিনি তো কারাগারে যাননি। কুমিল্লা নগরীর উন্নয়নের পরিবর্তে সরকারী বরাদ্দের টাকায় সাক্কু নিজের উন্নয়নের জোয়ার সৃষ্টি করেছেন। তিনি আরও বলেন, মেয়র প্রার্থী সাক্কুর বিরুদ্ধে দুর্নীতিসহ ১০টি মামলা রয়েছে। এছাড়া খুনের মামলাও নাকি রয়েছে। তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী সীমাকে সুশিক্ষিত ও ফুলের মতো পবিত্র, তার বিরুদ্ধে কোন দুর্নীতির অভিযোগ কিংবা কোন মামলা নেই উল্লেখ করে ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী সীমাকে বিজয়ী করার জন্য নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীম বলেন, বিএনপি প্রার্থী সাক্কুর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। নগরীর উন্নয়নের জন্য দুই মন্ত্রী ও এমপি শত শত কোটি টাকা এনে দিয়েছেন। তিনি কোন কাজ করেননি। কুমিল্লা শহর আজ যানজট আর জলাবদ্ধতার শহর। শহরের সৌন্দর্য বলতে কিছু নেই। অপরদিকে, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সীমাকে সৎ যোগ্য শিক্ষিত আখ্যা দিয়ে তার পক্ষে ভোট চান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সবুর, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, জাসদের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ফজলুর রহমান, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক ডাঃ শাহাদৎ হোসেন, তরিকত ফেডারেশনের সাংগঠনিক মোহাম্মদ আলী ফারুকী, কেন্দ্রীয় কমিউনিস্ট পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক অসিত বরুন রায়, ন্যাপের (মোজাফফর) সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ নজরুল মজিদ বেলাল, গণ আজাদী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউল্লাহ, কুমিল্লা জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক ও কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সহ-সভাপতি আলহাজ ওমর ফারুক, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের কর্ণধার ও পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের মেয়ে নাফিসা কামাল, কেন্দ্রীয় ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা মাহমুদুল হাসান মানিক, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন স্বপন, সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম রতন, জেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক সাইমুল হকসহ ১৪ দলীয় জোটের কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতৃবৃন্দ। এদিকে নগরীর নজরুল এভিনিউ এলাকায় কুমিল্লা মডার্ন কমিউনিটি সেন্টারে বঙ্গবন্ধুর ৯৭তম জন্মবার্ষিকী ও কুমিল্লাস্থ মুরাদনগর সমিতির সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন মুরাদনগর আসনের এমপি ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন। এ সময় অনুষ্ঠানে যোগ দেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমা। সভাটি বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী পালন উপলক্ষে আয়োজন করা হলেও শেষ পর্যন্ত তা আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সীমার ভোট চাওয়া অনুষ্ঠানে পরিণত হয়। আওয়ামী লীগের গণসংযোগ ॥ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমা স্থানীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে নগরীর নজরুল এভিনিউ এলাকায় স্থানীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে গণসংযোগ করেন। পরে তিনি দুপুরে কুমিল্লা জিলা স্কুল ও পরে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে পৃথক ২টি টেলিভিশন চ্যানেলের জনতার মুখোমুখি অনুষ্ঠানে যোগ দেন। এ সময় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতা তার সঙ্গে ছিলেন। এদিকে ১৪ দলীয় জোটের প্রতিনিধিদলের নেতা ও সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়ার নেতৃত্বে ঢাকা থেকে আগত ১৪ দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ নগরীর বজ্রপুর, মৌলভীপাড়া, তেলিকোনা, সংরাইশসহ বিভিন্ন এলাকায় নৌকার প্রার্থীর পক্ষে গণসংযোগ চালান। বিকেলে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি আলহাজ মোঃ মাইনুল হোসেন খান নিখিলের নেতৃত্বে আওয়ামী যুবলীগ নেতা শেখ মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, মোজাম্মেল হক, মাকছুদুল আলম মাকছুদ, মোক্তার হোসেন কামাল, নাজমুল হাসান আরিফসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ নগরীর টমছমব্রিজ, উনাইসার, মধ্যম আশ্রাফপুরসহ বিভিন্ন স্থানে সীমার পক্ষে গণসংযোগ করেন। এছাড়া কুমিল্লাস্থ আমরা চৌদ্দগ্রামবাসীর পক্ষে চৌদ্দগ্রামের পৌর মেয়র মিজানুর রহমান, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান এবিএমএ বাহার, এ্যাডভোকেট আবুল খায়ের, জাহিদ হোসেন টিপু, মীর হোসেন মীরু, আলমগীর হোসেন বিপ্লব, ইদ্রিস মিয়াজী, নিজাম চৌধুরী, জাকির হোসেন চৌধুরী, এমএ কুদ্দুস, আনোয়ার হোসেন, এ্যাড. খোরশেদ আলমসহ নেতৃবৃন্দ নগরীর চকবাজার, তেলিকোনা, সাহাপাড়াসহ বিভিন্ন স্থানে নৌকার প্রার্থী সীমার পক্ষে ভোট চেয়ে গণসংযোগ করেন। বিএনপির পক্ষে গণসংযোগ ॥ বিএনপির মনোনীত প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু স্থানীয় নেতৃবৃন্দকে নিয়ে নগরীর ঠাকুরপাড়া, গোবিন্দপুর, পাথুরিয়াপাড়া, টিক্কারচরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় গণসংযোগ চালান। ২০ দলীয় জোটের পক্ষে নির্বাচন সমন্বয়ক এলডিপি মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল আদালত, মোগলটুলী, রাজগঞ্জ, ছাতিপট্টি, চকবাজার এলাকায় ধানের শীষের পক্ষে গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করেন। এ সময় অন্যদের মধ্যে ছিলেন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম বীর প্রতীক, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গণি, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি) চেয়ারম্যান খোন্দকার গোলাম মুর্তুজা, এলডিপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিমসহ এ জোটের বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতা। এছাড়া কেন্দ্রীয় নেতা নজরুল ইসলাম খান, এমরান সালেহ প্রিন্স, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, হাজি আমিনুর রশীদ ইয়াছিন, আবদুল আউয়াল খান, মোস্তাক মিয়া, বেলাল আহমেদ, সালাহ উদ্দিন শিবির, একরামুল হক বিপ্লব, নগরীর ঠাকুরপাড়া, অশোকতলা, উত্তর চর্থা, নানুয়া দীঘিরপাড়, বজ্রপুর, তামুকিয়াপাড়া এলাকায় গণসংযোগ চালান। এছাড়া সাক্কুর পক্ষে নগরীর হারুন স্কুল চত্বরে উঠান বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
×