ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রীর দিল্লী সফর সামনে রেখে আসছেন ভারতীয় সেনাপ্রধান

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ২৪ মার্চ ২০১৭

প্রধানমন্ত্রীর দিল্লী সফর সামনে রেখে আসছেন ভারতীয় সেনাপ্রধান

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লী সফর সামনে রেখে প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনার জন্য ঢাকায় আসছেন ভারতের সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াত। তিনি আগামী ৩০-৩১ মার্চ দুদিন ঢাকা সফর করবেন। তার এই সফরের মধ্য দিয়েই দুই দেশের প্রতিরক্ষা সহযোগিতার বিষয়ে সমঝোতা স্মারক চূড়ান্ত হতে পারে। সূত্র জানায়, সেনাপ্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হকের আমন্ত্রণে ঢাকা আসছেন জেনারেল রাওয়াত। তিনি নেপালের কাঠমান্ডুতে এক অনুষ্ঠান শেষে সেখান থেকে ঢাকা আসবেন। ঢাকা সফরকালে তিনি শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বিষয়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর সামনে রেখেই ঢাকা আসছেন ভারতীয় সেনাপ্রধান। এই সফরে দুই দেশের মধ্যকার প্রতিরক্ষা সহযোগিতা স্মারক চূড়ান্ত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে জেনারেল বেলালের ভারত সফরের ফিরতি হিসেবে ঢাকায় আসছেন ভারতীয় সেনাপ্রধান। তবে দ্বিপাক্ষিক সামরিক সহযোগিতা উন্নত করার লক্ষ্যে এবারের সফরটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আগামী ৭-১০ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফর করবেন। সে সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির একটি বৈঠক হবে। বৈঠকে যেসব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হবেÑ তার মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা সংক্রান্ত একটি সমঝোতা স্মারক রয়েছে। প্রতিরক্ষা সহযোগিতার সেই বিষয়টি চূড়ান্ত করতেই আসছেন জেনারেল রাওয়াত। সফরে জেনারেল রাওয়াত রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করবেন। এছাড়া বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক সুদৃঢ় করার জন্য সশস্ত্র বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর গত ২৩-২৪ ফেব্রুয়ারি দুদিনের ঢাকা সফরকালে দুই দেশের মধ্যে যেসব বিষয়ে আলোচনা প্রাধান্য পায় তার মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার বিষয়টিও ছিল। গত ৩০ নবেম্বর ঢাকায় এসে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা জোরদারের বার্তা দিয়ে যান তৎকালীন ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর গোপালকৃষ্ণ প্রভু পারিকর। সে সময় দুই দেশের সামরিক সহযোগিতা একটি কাঠামোর মধ্যে আনার প্রস্তাব দেয় ভারত। ৪৫ বছরের ইতিহাসে সেটাই ছিল প্রথম কোন ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বাংলাদেশ সফর। ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সফরের মূল লক্ষ্য ছিল, প্রতিবেশী বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত নিবিড় সহযোগিতার সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় দু’দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষরের পটভূমি তৈরি করাও ছিল ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রীর ঢাকা সফরের মূল লক্ষ্য। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত দীর্ঘমেয়াদে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার বিষয়ে চুক্তি করতে আগ্রহ প্রকাশ করলেও বাংলাদেশ এ বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সইয়ের প্রস্তাব দেয়। সে অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লী সফরকালে দুই দেশের প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতার জন্য সমঝোতা স্মারক সই হবে। তবে দুই দেশের পক্ষ থেকে প্রতিরক্ষা খাতে যে সমঝোতা স্মারক সইয়ের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে, তার মেয়াদ হবে ৫ বছর। এছাড়া চুক্তির প্রাথমিক খসড়ায় দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে সহযোগিতা, বাংলাদেশের কাছে সমরাস্ত্র বিক্রি এবং সরবরাহ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। একই সঙ্গে হুমকি মোকাবেলায় সম্মিলিতভাবে অভিযান চালানোর বিষয়টি রয়েছে। দুই দেশের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা খাতে যে সমঝোতা স্মারক সই হবে, সেখানে বাংলাদেশকে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কেনার জন্য ৫০ কোটি ডলার লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি) ঋণও দেবে ভারত। নিকটতম প্রতিবেশী ও বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবে ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নে আগ্রহী বাংলাদেশ। ব্যবসা, বাণিজ্য, আন্তঃযোগাযোগ, বিদ্যুত সহযোগিতা বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ছে। এছাড়া দক্ষিণ এশিয়ায় জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় উভয় দেশই একযোগে কাজ করছে। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার বিষয়েও এখন প্রাধান্য দিচ্ছে উভয় দেশ। সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ও ভারতের সেনাবাহিনী তাদের পরস্পরের সাংগঠনিক অবকাঠামো ও কৌশল সম্পর্কে পরিচিত হওয়ার লক্ষ্যে দুই দেশ ’১০ সাল থেকে যৌথ মহড়ার আয়োজন করে আসছে। গত বছর ৫-৮ নবেম্বর টাঙ্গাইলে যৌথ মহড়া হয়। বাংলাদেশ-ভারত প্রতিরক্ষা সহযোগিতার অংশ হিসেবে ‘সম্প্রীতি ’১৬’ নামে যৌথ সামরিক প্রশিক্ষণ মহড়া হয়। সেই মহড়ায় জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসী হামলা প্রতিরোধের বিষয়টিও যুক্ত ছিল। প্রতিবছর একবার বাংলাদেশে ও একবার ভারতে এই সামরিক যৌথ মহড়া হয়ে থাকে। প্রথম যৌথ মহড়াটি হয়েছিল ভারতের অসমের জোড়হাটে। দুই দেশের প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতা বাড়াতে অনেক আগে থেকেই এই ধরনের যে উদ্যোগ রয়েছে, সেটাই এখন সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে চায় উভয় দেশ। উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ১৫ জুন ভারতের তৎকালীন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল দলবীর সিং দু’দিনের সফরে বাংলাদেশে এসেছিলেন। সমসাময়িক সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়ার আমন্ত্রণে তিনি ঢাকা সফর করেছিলেন।
×