ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিরাট কোহালি হচ্ছেন ক্রিকেটের ডোনাল্ড ট্রাম্প

প্রকাশিত: ২২:১৩, ২৩ মার্চ ২০১৭

বিরাট কোহালি হচ্ছেন ক্রিকেটের ডোনাল্ড ট্রাম্প

অনলাইন ডেস্ক ॥ বাইশ গজের যুদ্ধ থেকে বাকযুদ্ধ— দুইয়ে মিলে একেবারে জমে ক্ষীর হয়ে গিয়েছে ভারত-অস্ট্রেলিয়া টেস্ট সিরিজ। চলতি সিরিজে যেন ব্যাট-বলের থেকে মুখ বেশি কথা বলেছে। ক্রিকেটের মতো জেন্টেলম্যানস গেমে দুই দলকেই প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে তাদের ‘অক্রিকেটীয়’ আচরণের জন্য। এর আগে অস্ট্রেলিয়ায় মাটিতে মাংকিগেট নিয়ে ক্রিকেট বিশ্ব সরগরম হয়েছিল। এ বার যেন সেটাকেও ছাপিয়ে গিয়েছে রিভিউ কাণ্ড এবং স্লেজিং বিতর্ক। কী নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক? তার একটি টাইমলাইন এক ঝলকে দেখে নেওয়া যাক। ১৪ ফেব্রুয়ারি, মুম্বই - ভারতে পা রেখেই অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক স্টিভ স্মিথ বলে দিলেন, ‘‘প্রয়োজনে স্লেজ করতে আমরা তৈরি। কেউ যদি মাঠে কথা বলে নিজেদের তাতিয়ে সেরাটা বার করে আনতে পারে, তা হলে আমার কোনও আপত্তি নেই।’’ ১৮ ফেব্রুয়ারি, মুম্বই - ভারত ‘এ’ দলের ব্যাটসম্যান শ্রেয়স আইয়ার অভিযোগ করলেন, প্রস্তুতি ম্যাচে তাঁকে স্লেজ করেন ম্যাথু ওয়েড ও ডেভিড ওয়ার্নার। বেজে গেল বাগ্‌যুদ্ধের দামামা। ৩ মার্চ, বেঙ্গালুরু- দ্বিতীয় টেস্ট শুরুর আগের দিন স্মিথ বলেন, ‘‘ভারত খুব চাপে আছে। আর এক ম্যাচ জিতলেই ট্রফি আমাদেরই থাকবে। তাই ওরা চাপে।’’ উত্তরে কোহালি বলেন, ‘‘দেখে কি মনে হচ্ছে আমরা চাপে? আমি তো হাসছি, দিব্যি আছি। ওরা যা পারে বলুক।’’ ৫ মার্চ, বেঙ্গালুরু- স্লেজিং যুদ্ধ যে দিন চরম আকার নেওয়ার হুঙ্কার দিল। স্টিভ স্মিথ ব্যাট করতে এলে তাঁকে আক্রমণ শুরু ভারতীয়দের। স্মিথকে নকল করে ভেংচি কাটলেন ইশান্ত শর্মা। ভাইরাল হয়ে গেল ইশান্তের সেই বিরল ছবি । ৬ মার্চ, বেঙ্গালুরু- বেঙ্গালুরু টেস্টের তৃতীয় দিন ড্রিঙ্কসে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের নিয়ে নিজেদের মধ্যে হাসি-মস্করা করতে থাকেন অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটারেরা। বেশ অপমানজনক মন্তব্যও করেন তাঁরা। অভিনব মুকুন্দ ও কেএল রাহুলকে শুনতে হল আপত্তিজনক কথা। ৬ মার্চ, বেঙ্গালুরু - স্লিপে স্মিথ অসাধারণ ক্যাচ নিয়ে কে এল রাহুলকে ফেরানোর পর বোলার ও’কিফ তাঁকে উল্টোপাল্টা কথা শুনিয়ে দিলেন। কোহালি ব্যাট করার সময় স্টাম্প মাইকে শোনা যাচ্ছিল ওয়েড তাঁকে নিয়ে সতীর্থদের বলছেন, ‘‘স্কিপার ইজ অ্যাংরি, স্কিপার ইজ অ্যাংরি।’’ মার্চ, বেঙ্গালুরু- নিজের আউটের রিভিউ নেওয়ার আগে স্মিথের ড্রেসিংরুমের দিকে তাকানো নিয়ে আম্পায়ারের কাছে নালিশ জানান কোহালি। স্মিথ পরে বলেন, ‘‘আমার মাথা কাজ করছিল না। আমারই ভুল’’। কোহালি উত্তরে বলেন, ‘‘মাথা কাজ করছিল না আবার কী! তিন দিন ধরে ওরা এটা করেছে। আমি ব্যাট করার সময়ই দু’বার এরকম করতে দেখেছি।’’ দুই বোর্ডের মধ্যে ঝামেলা শুরু হয়েও পরে সমঝোতা। বিতর্ক তবু চলল। ১৫ মার্চ, রাঁচী - রাঁচী টেস্ট শুরুর আগের দিন স্মিথের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে কোহালি বললেন, ‘‘আমি যা বলেছি ঠিকই বলেছি। কোনও আক্ষেপ নেই।’’ উত্তরে স্মিথ আবার বলেন, ‘‘আমি ভুল স্বীকার করে নেওয়া সত্ত্বেও যদি আবার একই অভিযোগ করে বিরাট, তা হলে বলব ও ভুল বলেছে। বাজে কথা বলছে ও।’’ ১৮ মার্চ, রাঁচী- দু’দিন আগে বাউন্ডারিতে ফিল্ডিং করতে গিয়ে কাঁধে চোট পান বিরাট কোহালি। কাঁধে হাত চেপে ড্রেসিংরুমে ফিরেছিলেন তিনি। একই ভাবে বাউন্ডারি লাইনে ডাইভ দিয়ে উঠে কোহালিকে নকল করে কাঁধে হাত চেপে হাসতে হাসতে নিজের জায়গায় ফেরেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। এই নিয়ে ফের শুরু হয় বিতর্ক। অস্ট্রেলিয়ার রিভিউ বাতিল হওয়ার পর কোহালির হাততালি দিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ নিয়েও চর্চা হতে থাকে। ৯ মার্চ, রাঁচী- ডেভিড ওয়ার্নারকে আউট করে বিরাট কোহালিও ফের কাঁধে হাত চেপে অস্ট্রেলিয়ার ড্রেসিংরুমের দিকে ইঙ্গিত করেন। গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে পাল্টা জবাব দেন। চেতেশ্বর পূজারা ও ঋদ্ধিমান সাহাকে স্লেজ করেন কামিন্স ও হেজ্‌লউড। ভারতীয় জুটিও পাল্টা জবাব দেন তাঁদের। ২০ মার্চ, রাঁচী- ইশান্ত শর্মা রান আপ নেওয়া শুরু করার পরে সাইটস্ক্রিনে ব্যাঘাত ঘটায় ক্রিজ থেকে ম্যাট রেনশ সরে গেলেন। যা দেখে প্রচণ্ড উত্তেজিত ইশান্ত বলটা ছুড়ে দিলেন। এ নিয়ে পরিস্থিতি ফের অগ্নিগর্ভ। সেখানেই শেষ নয়। ভারতীয় দলের ফিজিও প্যাট্রিক ফারহার্টকে নিয়েও কটূ মন্তব্য করেন অস্ট্রেলীয়রা, বলে অভিযোগ জানান কোহালি। সেই অভিযোগ অস্বীকার করেন স্মিথ। পরের দিন অস্ট্রেলিয়ার একটি কাগজ লিখল, বিরাট কোহালি হচ্ছেন ক্রিকেটের ডোনাল্ড ট্রাম্প। সুত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
×