ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অন বডি এ্যান্ড সোল বধ্যভূমিতে প্রেমের গল্প

প্রকাশিত: ০৬:১৬, ২৩ মার্চ ২০১৭

অন বডি এ্যান্ড সোল  বধ্যভূমিতে প্রেমের গল্প

সবাইকে চমকে দিয়ে এবছর ইউরোপের প্রথম উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র পুরস্কার ‘গোল্ডেন বিয়ার’ ছিনিয়ে নিলÑ ‘অন বডি এ্যান্ড সোল।’ অথচ সবাই তাকিয়ে ছিলেন জাপানী কিংবদন্তি চলচ্চিত্র নির্মাতা আকি কাউরিসমাকির ‘দ্য আদার সাইড অফ হোপে’র দিকে। ছবিটিকে নিশ্চিত বিজয়ী বলেই ধরে নেয়া হচ্ছিল। তাই হাঙ্গেরীর নারী চলচ্চিত্র নির্মাতা ইলডিকো এনায়েডির ‘অন বডি এ্যান্ড সোল’-এর এই বিজয়কে চমক বলতেই হয়। উল্লেখ্য, ইনডিকোর ১৮ বছরের চলচ্চিত্র জগতে বিচরণের এটি প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। ইলডিকো তার পুরস্কার প্রাপ্তিতে সবাইকে ধন্যবাদ জানান কিন্তু সঙ্গে যোগ করেন হাঙ্গেরীতে প্রধানমন্ত্রী ডিক্টর ওরবানের রাজত্বে কাজের পরিবেশ দিনকে দিন কঠিন হয়ে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এক অদ্ভুত সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। আর রাষ্ট্রীয় অনুদানে চলচ্চিত্র নির্মাণ যেন বিচ্ছিন্ন দ্বীপে বসবাস। শর্ত মানতে রাজি থাকলে আপনি শান্তি ও স্বস্তিতে কাজ করতে পারবেন।’ অন বডি এ্যান্ড সোল-এর শুরু তুষারাচ্ছন্ন কাব্যিক দৃশ্যপটে মৃগের উপস্থিতি নিয়ে, যা শুরুতেই আপনাকে ছিটকে দেবে এক ভিন্ন জগতে। এই উপস্থিতি ছবির গল্পে উঠে এসেছে ভালোবাসার প্রতীক হয়ে। মধ্য বয়স্ক কসাইখানার ম্যানেজার এন্ড্রি (গেজা মর্কসেনি) আর তার তরুণী কর্মচারী মারিয়াকে (আলেক্সান্ডা বর্বলি) ঘিরে প্রেমের গল্পে। ছবির শুরুটা প্রতীকী হলেও এর বাকি অংশ মাটির কাছাকাছি। ছবিতে ইলডিকো তার মতো করেই চিত্রায়ন করেছেন অসাধারণ সব দৃশ্যপট যা হৃদয় ছুঁয়ে যায় ভালবাসার ভাষায়। ছবির গল্প প্রেমের কিন্তু প্রকাশভঙ্গি স্বতন্ত্র আর এখানেই ইলডিকোর সার্থকতা। ইলডিকো হয়ত বিশ্বজুড়ে সিনেমামোদী মহলে খুব পরিচিত নাম নন কিন্তু তিনি দৃশ্যপটে আছেন দীর্ঘদিন ধরে এবং তা ভালভাবেই। সেই ১৯৮৯তে তার প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি ‘মাই টুয়েন্টিখ সেঞ্চুরী’ অর্জন করেছিল গোল্ডেন বিয়ার। যা আলোচিত ছিল তার সুররিয়ালিস্টিক প্রকাশের জন্য। আর ’অন বডি এ্যান্ড সোল’কে তার প্রকাশ ভঙ্গির জন্য তুলনা করা হচ্ছে মাইকেল গলড্রিস এর ‘ইটারনাল সানশ্ইন অব দ্য স্রটলেস মাইন্ড’ ও ‘দি সায়েন্স অব সিøপ’-এর সঙ্গে। ছবির গল্পে মাটি ছোঁয়া পারফরমেন্সে দেখানো হয়েছে কর্মব্যস্ত সময়ের মানসিক নিঃসঙ্গতা যা ছবির নায়ক নায়িকা দুজনকে এনে মিলিয়েছে এক অপ্রত্যাশিত বিন্দুতে। ছবিতে পাথরমুখো নায়ক এন্ড্রিুকে দেখে ধারণা হতেই পারে তার জীবনে ঠাঁই নেই প্রেম নামক শব্দটির। তিনি একটি কসাইখানা চালান যেখানে মৃত পশুর ঠা-া মাংস যান্ত্রিক জীবনকেই প্রতিফলিত করে। আর কিছুটা লাজুক মারিয়া হতাশ নিজেকে নিয়ে তার কর্মক্ষেত্রে, নিজেকে মানিয়ে নিতে সমস্যা তার সহকর্মীদের সঙ্গে। শিকার হয় যৌন হয়রানির। কিন্তু পরিস্থিতি আমূল বদলে যায় তাদের মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার এক উদ্যোগে। যেখানে তাদের নিজের স্বপ্ন নিয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়। কাছাকাছি চলে আসে এন্ড্রি আর মারিয়া। শুরু হয় সারা রাত জেগে গল্প ।পরবর্তীতে এক সঙ্গে থাকা। সামাজিক অবস্থানগত বৈষম্য থাকলেও এ নিয়ে তারা ভাবিত নয়। যদিও জানে এ সমস্যা তাদেরই সমাধান করতে হবে। সঙ্গে ইলডিকো যোগ করেছেন মৃদু হিউমার। এ ছবি নিয়ে শেষ কথা বলা যায় এভাবে- এক অসম বয়সী, ভিন্ন সামাজিক অবস্থানে থাকা, বিচিত্র পরিবেশে গড়ে ওঠা প্রেম আর কল্পনার গল্প। অসাধারণ চিত্রায়ন যাকে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা। এবারের উৎসবে সেরা পরিচালকের সিলভার বিয়ার বিজয়ী জাপানী চলচ্চিত্র নির্মাতা কাউরিসমাকি। আর দ্বিতীয় সেরা ছবি মনোনীত হয়েছে এলিয়ান গোমিলের ফেলিসিট। সেরা অভিনেতার পুরস্কার বিজয়ী জর্জ ফ্রেডরিক আর অভিনেত্রী কিম মিন হি। উল্লেখ্য, ৬৭তম বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা স্ক্রিন প্লে সেবাস্টিয়ান লেনিওর ‘এ ফ্যান্টাস্টিক ওমেন’ আর সেরা ডকুমেন্টারি যা এবারই প্রথম দেয়া হলো যার বিজয়ী ফিলিস্তিনের পরিচালক রেইড এনডনি তার ‘ঘোস্ট হান্টিং’-এর জন্য।
×