ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জাহিদুল ইসলাম

জানতে হবে, জানাতে হবে

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ২৩ মার্চ ২০১৭

জানতে হবে, জানাতে হবে

১৭৫৭ সালে পলাশী যুদ্ধের মাধ্যমে এদেশের স্বাধীনতার শেষ সূর্য অস্তমিত হলে পরবর্তীতে প্রায় দু’শ বছর ইংরেজ, ব্রিটিশ ও পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী এদেশ শাসন করে। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের শাসন অবসানের পর এদেশের নাম হয় পূর্ব পাকিস্তান। পশ্চিম পাকিস্তানীরা বাঙালীদের বিভিন্ন ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করত এবং বাঙালীদের কষ্টার্জিত অর্থের সিংহভাগ পশ্চিম পাকিস্তানের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে ব্যয় করত। পাকিস্তানের এসব অন্যায় অত্যাচার দেখে তীব্র প্রতিবাদ গড়ে তোলেন বিপ্লবী ও সাহসী নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি জীবন দিতে প্রস্তুত, কিন্তু কখনও অত্যাচার ও জুলুমকারীদের কাছে মাথা নিচু করতে শেখেনি। তাই তো জাতি তাকে উপাধি দিয়েছে বঙ্গবন্ধু। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয় অর্জন করলে পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতা দেয়ার নামে নানা টালবাহানা করে সময়ক্ষেপণ করতে থাকে। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানীদের ষড়যন্ত্র বুঝতে পেরে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চে মাত্র ১৯ মিনিটের ঐতিহাসিক ভাষণে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার যে দিক-নির্দেশনা দিয়েছিলেন- তাতে লাখ লাখ বাঙালী তাঁদের জীবনবাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ইয়াহিয়া খানের নির্দেশে পাকিস্তানী সামরিক বাহিনী ২৫ মার্চ রাতে পরিকল্পিতভাবে ঢাকায় নিরীহ সাধারণ মানুষের ওপর নির্বিচারে মর্মান্তিক গণহত্যা চালায় এবং ওই রাতে শেখ মুজিবুর রহমানকে বন্দী করে নিয়ে যায় পাকিস্তানে। পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী ভেবেছিল শেখ মুজিবকে বন্দী করলে হয়ত বাঙালীরা তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে সাহস পাবে না, কিন্তু তাদের সে ধারণা ছিল ভুল। এরপর দীর্ঘ নয় মাস বাঙালী মুক্তিবাহিনীরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গেরিলা পদ্ধতিতে পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে তীব্র সম্মুখযুদ্ধে লীপ্ত হয়। অবশেষে পাকিস্তানী সামরিক বাহিনী তাদের পরাজয় নিশ্চিত জেনে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে তিরানব্বই হাজার সৈন্য নিয়ে মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। পাকিস্তানীদের এই আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে সূচিত হয় আবার বাঙালীর বিজয় ও স্বাধীনতা। মুক্তিযুদ্ধ তথা স্বাধীনতা প্রকৃত সত্য ঘটনা আমাদের বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মকে জানতে হবে, জানাতে হবে। ভবিষ্যত প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সঠিকভাবে উদ্বুদ্ধ ও জাগরিত করতে না পারলে অদূর ভবিষ্যতে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলে স্বাধীনতাকে করবে প্রশ্নবিদ্ধ। শুধু তাই নয়, স্বাধীনতার এই পবিত্র সূর্যকে অস্তমিত করতে কত নাম না জানা মীর জাফরের জন্ম নেবে স্বাধীন এই দেশে! রামপুরা, ঢাকা থেকে
×