ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র জুন মাস থেকে অনলাইনে

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ২৩ মার্চ ২০১৭

ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র জুন মাস থেকে অনলাইনে

মশিউর রহমান খান ॥ আগামী জুন মাস থেকে ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র, নকশা প্রদানসহ সকল প্রকার আবেদন গ্রহণ ও প্রদান অনলাইনে প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। ডিজিটাল বাংলাদেশের অংশ হিসেবে রাজউককে এনালগ থেকে ডিজিটালে রূপান্তরে এ উদ্যোগ নিয়েছে সংস্থাটি। সংস্থাটির মোট আটটি জোনের মধ্যে বর্তমানে জোন ৫ অর্থাৎ ধানম-ি ও লালবাগ থানা এলাকার বাসিন্দারা অনলাইনে ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র গ্রহণ করতে পারছেন। পাইলট প্রকল্প হিসেবে নেয়া এ প্রকল্পটি বর্তমানে চলমান রয়েছে। পাইলট প্রকল্পের বাস্তবায়নের মাধ্যমে সৃষ্ট সমস্যা দূর করে সকল জোনে এ উদ্যোগটি বাস্তবায়ন করতে চায় সংস্থাটি। নতুন উদ্যোগের অংশ হিসেবে প্রাথমিকভাবে জোন ৪ অর্থাৎ মহাখালী, গুলশান, বনানী ও পূর্বাচলের বাসিন্দারা এসব সুযোগ পাবেন। পরবর্তী সময়ে সকল জোনেই অনলাইনে সকল কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে বলে জনকণ্ঠকে নিশ্চিত করেছেন রাজউক চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) এম বজলুল কবির চৌধুরী। জানা গেছে, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিলের মাধ্যমে আবেদনকারীরা খুব সহজে তাদের কাক্সিক্ষত সেবা পাবেন। নতুন এ পদ্ধতিতে অনলাইনে কার্যক্রম সম্পন্ন করা সম্ভব হলে দালাল চক্রের দৌরাত্ম্য কমবে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা। তবে আবেদন থেকে শুরু করে সকল কাজ ইন্টারনেট নির্ভর হওয়ায় অনেক সাধারণ ও স্বল্প শিক্ষিত গ্রাহকরা দালালের হয়রানির শিকার হতে পারেন। রাজউক সূত্র জানায়, বর্তমানে পাইলট প্রকল্প হিসেবে চলমান ধানম-ি লাগবাগ এলাকাবাসীরা রাজউকের অনলাইন সেবা দেয়ার জন্য একজন ডাটা এন্ট্রি অপারেটর, একজন ট্রেসার ও একজন ড্রাফটম্যান রয়েছেন। প্রয়োজনের তুলনায় যে জনবল অত্যন্ত কম। এছাড়া তাদের সবার জন্য একটি মাত্র কম্পিউটার রয়েছে। আর দুর্বল ইন্টারনেটে এমন সেবা দেয়া দুষ্কর। অনেক সময় একজন কাজ করলে আরেকজনকে অপেক্ষা করতে হয়। এভাবে মাত্র এক কম্পিউটার দিয়ে নগরবাসীকে সঠিক সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন বলে জানা গেছে। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ৫ নম্বর জোনে পাইলট প্রকল্প হিসেবে এটি চালু করা হয়েছিল তাই সমস্যা সমাধানে নতুন করে সকল জোনে প্রকল্পটি চালু করতে প্রয়োজনীয় সকল প্রকার প্রস্তুতি নিচ্ছে রাজউক কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে রাজউকের পাঁচ নম্বর জোনে অনলাইন সেবা চলছে। এই জোনের নাগরিকদের বাড়ি নির্মাণে বাধ্যতামূলক ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্রের জন্য অনলাইনে আবেদন করতে হয়। পাঁচ নম্বর জোনের আওতাধীন কামরাঙ্গীরচর, লালবাগ, ধানম-ি, কলাবাগান, হাতিরপুল, ফার্মগেট, রাজাবাজার, মণিপুরীপাড়া, লালমাটিয়া, জাফরাবাদ, রায়েরবাজার, হাজারীবাগ, আজিমপুর, পলাশী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, আসাদগেটসহ আশপাশের এলাকাসমূহ রয়েছে। চার নাম্বার জোনের অধীন এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে গুলশান, বনানী, বারিধারা, মহাখালী, পূর্বাচল নতুন শহরসহ এর আশপাশের এলাকা। নতুন নিয়মে এরপরই এসব এলাকার বাসিন্দাদের রাজউকের সকল কর্মকা- অনলাইনে চালুর চিন্তা করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়নে বেশবিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এসব সমস্যার স্থায়ী সমাধান না হলে গ্রাহক সেবার নামে নেয়া অনলাইন সেবার এ উদ্যোগ পুরোটাই ভেস্তে যেতে পারে। জানা গেছে, পাইলট প্রকল্পে প্রায়ই রাজউকের ইন্টারনেট সার্ভারে সমস্যায় ওয়েবসাইট ঠিকতো কাজ করছে না। ফাইল আপলোড ও ডাউনলোড করতেও অনেক সময় লেগে যায়। সেবাগ্রহীতাদের আবেদন দ্রুত ডাউনলোড করা যায় না। অনেক সময় রাজউকের প্রধান সার্ভার ডাউন থাকার ফলে যথা সময় প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট আপলোড করা যায় না। এর ফলে সেবাগ্রহীতারাও দ্রুত আবেদন করতে পারছেন না। এছাড়া পুরো ৫নং জোনের সকল গ্রাহকের সেবার জন্য রয়েছে মাত্র একটি কম্পিউটার যা দিয়ে তিন অপারেটর ক্রমান্বয়ে কাজ করেন। ফলে ইচ্ছে হলেও গ্রাহককে তাদের চাহিদামতো সেবা প্রদান করতে পারছেন না। এর ফলে অনলাইনে দ্রুত সেবা দেয়ার কথা থাকলেও তা দিতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নতুন করে সকল আবেদন গ্রহণ ও সেবা প্রদানের লক্ষ্যে রাজউক সংশ্লিষ্ট কাজের জন্য কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ, কম্পিউটারসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি কেনার উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। আগামী জুনের আগেই টেন্ডারসহ সকল আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে বলে জানা গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজউকের একাধিক কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, উদ্যোগটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে নকশা অনুমোদন, বাড়ি নির্মাণ, ভূমি ছাড়পত্র গ্রহণ থেকে শুরু করে রাজউকের সকল কাজের জন্য ঘুষ লেনদেনের দীর্ঘ বছরের অভিযোগ অতিদ্রুততার সঙ্গে অর্ধেকে নেমে আসবে। এছাড়াও রাজউকের অনলাইন সেবার বিষয়ে জনসাধারণেকে সচেতন করার উদ্যোগও গ্রহণ করতে হবে। তবে ঘুষ বাণিজ্য কমে যাওয়ায় শুরু থেকেই রাজউকের নিম্ন শ্রেণীর অসাধু কর্মচারীরা এ সেবা প্রদানের অসহযোগিতা করতে চাইবে যা কঠোর হস্তে প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। জানা গেছে, পাইলট প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বর্তমানে এক শ্রেণীর দালাল চক্র ও রাজউকের কিছু কর্মচারী ইউনিয়নের নেতারা এ সেবা কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। এর মাধ্যমে অসাধু চক্রটি গ্রাহক সেবায় রাজউকের নেয়া মহতী এ উদ্যোগটিকে ডিজিটাল না করে এনালগ অর্থাৎ ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে রাখতে বাধ্য করছেন। সূত্র জানায়, অনলাইনে ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র নিতে ১৫ মার্চ ২০১৭ পর্যন্ত ১৮০টি আবেদন জমা পড়েছে। এগুলোর মধ্যে ১২৮টি আবেদনের নিষ্পত্তি করা হয়েছে এবং দশটি আবেদনের কার্যক্রম চলমান আছে। নিষ্পত্তি হওয়া আবেদনগুলোর মধ্যে ছাড়পত্র পেয়েছে ৮৬ এবং অবশিষ্ট ৪২ আবেদন সরকারী নিয়ম না মানায় ও আবেদন অনুযায়ী ছাড়পত্র প্রদান করা সম্ভব হবে না বিধায় সেসব আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। অনলাইনে করা আবেদন প্রত্যাখ্যানের কারণ হিসেবে জানা গেছে, রাস্তার প্রশস্ততা কম থাকা (জমির সামনে রাস্তার প্রশস্ততা সর্বনিম্ন ২.৫ মিটার থাকতে হয়) আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের দাবি, কাগজপত্রে ঝামেলা, নোটিস পাওয়ার পরও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিল না করা ইত্যাদি কারণে ৪২ আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। তবে রাজউকের অন্যান্য জোনে এসব নিয়ম থাকলেও অনলাইনভিত্তিক কার্যক্রম পরিচালিত না হওয়ায় অনেক আবেদনের বৈধ কাগজ না থাকলেও ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। প্রসঙ্গত, রাজউকে অনলাইন সেবা চালু হয় ২০১৫ সালের ২২ ডিসেম্বর। ওইদিন ধানম-ির একটি মসজিদ নির্মাণের জন্য অনলাইনে ভূমি ব্যবহারের ছাড়পত্র প্রদানের মাধ্যমে ডিজিটাল সেবাটির উদ্বোধন করেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মন্ত্রী জানান, নতুন এ পদ্ধতিতে এতে হয়রানি ও দুর্নীতি কমবে এবং রাজউকের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত। এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান বজলুল করিম চৌধুরী জনকণ্ঠকে বলেন, নাগরিকদের বর্তমানের চেয়ে কম সময়ে বেশি সুবিধা প্রদানের জন্য আগামী জুন থেকে পর্যায়ক্রমে সকল জোনেই অনলাইনে আবেদন গ্রহণ, ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র প্রদানসহ নক্সা অনুমোদনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। ইতোমধ্যে আমরা পাইলট প্রকল্প হিসেবে রাজউকের আটটি জোনের মধ্যে প্রাথমিকভাবে জোন-৫ (ধানম-ি-লালবাগ) কে এই অনলাইন পদ্ধতিতে আবেদন করা, ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র, নক্সা অনুমোদন আবেদন গ্রহণ করার পদ্ধতিটি চালু করেছি। এর মাধ্যমে ইতোমধ্যে ওই জোনের বাসিন্দারা অনলাইনে তাদের কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারছেন। তবে পাইলট প্রকল্প হিসেবে বাস্তবায়নের আমরা বেশকিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে যা সমাধান করা হবে। বর্তমানে প্রাথমিক অবস্থায় শুধু অনলাইনে ভূমি ব্যবহারের ছাড়পত্র প্রদান করছি। এই ছাড়পত্র নিয়ে ভবনের নক্সার অনুমোদনের জন্য ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে আবেদন করতে হয়। জুন মাসে জোন ৪ মহাখালী, গুলশান পূর্বাচল এলাকার বাসিন্দারা সকল আবেদন ও কার্যক্রম অনলাইনে করতে পারবেন। পরবর্তী সময়ে সকল জোনেই এ পদ্ধতিটি চালু করা হবে। তবে পুরো প্রক্রিয়াটি অনলাইনে নিয়ে আসার জন্যই এই উদ্যোগ হাতে নেয়া হয়েছে। অধিক গ্রাহক সেবাই আমাদের মূল রক্ষ্য। এ জন্য কম্পিউটার সরঞ্জামাদি ক্রয়, জনবল নিয়োগ ও তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
×