ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ই-কমার্সে স্বাবলম্বী তরুণ প্রজন্ম

প্রকাশিত: ০৪:১১, ২১ মার্চ ২০১৭

ই-কমার্সে স্বাবলম্বী তরুণ প্রজন্ম

সময়টা ২০১২ সালের শেষের দিকে, ঢাকা কলেজের ছাত্র ফাহিম আরফান চিন্তা করলেন তার বাবার দোকানের ড্রেস তার ফেসবুক এ্যাকাউন্ট থেকে আপলোড দিলে কেমন সাড়া পেতে পারেন? কাছের কিছু মানুষের সঙ্গে কথা বলে আর ফেসবুকে বড় বড় কিছু বুটিক হাউসের পেজ ঘুরে সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি তাদের দোকানের নামে পেজ খুলবেন। এবং প্রথম দিকে পরীক্ষামূলক কিছু ছবি আপলোড দেবেন। তাদের ড্রেসের ছবি দেখে বিভিন্ন ধরনের মানুষ সারাদেশ থেকে কেনার আগ্রহ দেখানোয় তরুণ ফাহিম আরফান আরো ঊৎসাহ পান। ডি.প্রজন্মকে ফাহিম জানালেন, তাদের মেয়েদের কাপড়ের দোকানটির পাশাপাশি ছেলেদের টি-শার্টের জনপ্রিয় একটি ফেসবুক পেজ রয়েছে যার মাধ্যমে আজ তিনি সচ্ছল এবং এর পুরো কৃতিত্ব ই-কমার্সের। দেশের বৃহৎ তরুণ প্রজন্মের কাছে তথ্যপ্রযুক্তি এখন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। বিশ্বায়নের কল্যাণে এখন হাতের মুঠোয় পৃথিবী। উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যেও প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে। তবে এই ক্ষেত্রে বাইরের বিশ্ব যেখানে অনেক অগ্রসর, বাংলাদেশ সেখানে ঠিক ততটা পিছিয়ে আছে। ইন্টারনেট প্রযুক্তির ব্যবহারের কারণে এখন যোগাযোগ ব্যবস্থা হয়ে উঠেছে অনেক সহজ এবং দ্রুততর। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রচার ও প্রসার ঘটছে দ্রুত। বর্তমানে বাংলাদেশে যে ডিজিটাল যুগের সূচনা হয়েছে তারই পথ ধরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ই-কমার্স বা ইন্টারনেটভিত্তিক ব্যবসা বাণিজ্য । আমাদের দেশে ই-কমার্সের সূচনা নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে, যখন ইন্টারনেট জনসাধারণের হাতে পৌঁছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে ই-কমার্স বলতে আমরা কি বুঝি? সহজ ভাষায় এর অর্থ হচ্ছে ইলেক্ট্রনিক কমার্স। প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবসায়ের ধারণাটি বিভিন্ন সমস্যার কারণে দীর্ঘদিন ধরে বিকশিত হয়নি, তবে বর্তমান তরুণ প্রজন্ম বিষয়টির সঙ্গে তাল মিলিয়ে স্বাবলম্বী হচ্ছে। আস্তে আস্তে প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর হচ্ছে, পাশাপাশি আজকের তরুণরা ই-কমার্সের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হয়ে বেকারত্ব দূর করছেন। বর্তমান সময়ে ই-কমার্সের সহযোগিতা নিয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগটা তরুণদের জন্য আরও সুযোগ তৈরি করছে। দেশের তরুণ প্রজন্ম আইটিনির্ভর হয়ে নিজেদের ক্যারিয়ার গড়ে নিচ্ছে, ফ্রিল্যান্সিং করে মাসে ২০-২৫ হাজার টাকা আয় নিয়মিত করে এমন কয়েকজন তরুণ জানালেন তাদের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তাদের জীবনে ই-কমার্সের প্রভাব- ঢাকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া রাজিন আহমেদ জানালেন, ‘আমি ফ্রিল্যান্সিং করছি ছয় মাস ধরে, আমাদের সাইট থেকে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর চাহিদামতো তথ্য সরবরাহ করে দেই, বিনিময়ে তারা ভাল রকমের পেমেন্ট করে। সময়ও খুব একটা দিতে হয় না, কাজ করে এক ধরনের আয়েরও নিশ্চয়তা থাকে এ ধরনের কাজে। তাই আমি আমার বেশ কয়েকজন বন্ধুসহ চিন্তা করছি অফিস নিয়ে আমরা আমাদের কার্যক্রমকে আরও বৃদ্ধি এবং গতিশীল করব।’ ই-কমার্সকে এক কথায় বেকার তরুণদের জন্য আশীর্বাদ বলে জানালেন আরেক ফ্রিল্যান্সার মিল্টন বড়ুয়া বললেন, ‘নিয়মিত বড় বড় প্রতিষ্ঠানের কাজ অর্ডার পাওয়া এবং সফলভাবে এসব কাজ করার মাধ্যমে বাজার বড় হচ্ছে ই-কমার্সের। ধরাবাধা অফিস জীবন থেকে এভাবে স্বাচ্ছন্দ্যে চলার মতো আয়কে তাই আজকের তরুণরা প্রাধান্য দিচ্ছেন।’ ফ্রিল্যান্সিংয়েই থেমে নেই ই-কমার্স। পণ্য অনলাইনে বেচাকেনা ই-কমার্সের কমন একটি উদাহরণ। এখানে বিক্রেতারা অনলাইনে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে পণ্য বা সেবার বিজ্ঞাপন দেয়। ক্রেতারা তা দেখে মাউসের ক্লিকের মাধ্যমে তা কেনে। তরুণ প্রজন্মের কাছে ই-কমার্স এখানে আরও জনপ্রিয়। বিবিএ’র শিক্ষার্থী আরিফ আহমেদের গল্পটি এক্ষেত্রে গড়ে দিয়েছে ই-কমার্স, যেমন তিনি প্রথমে ফেসবুকে বিভিন্ন পেজে দেখতেন বিভিন্ন পণ্যের প্রচারণামূলক লেখা, যেখান থেকে তিনি উদ্বুদ্ধ হন ঘড়ি ব্যবসায়ে, তিনি পুরান ঢাকার একটি ঘড়ি দোকান থেকে ঘড়ি কিনে পণ্যের ছবি তুলে তা ফেসবুকে দেন। বর্তমানে প্রতিমাসে তার কমপক্ষে গড়ে পঁচিশটি ঘড়ির চাহিদা থাকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে, তিনি জানালেন আমি চিন্তা করছি ঘড়ির পাশাপাশি মেয়েদের ব্যাগ তিনি একইভাবে সরবরাহ করবেন। যদি কখনও কোন ঘড়ি বিক্রয় না হয় তাহলেও রয়েছে লাভজনক পদ্ধতি, যেখান থেকে ঘড়িটি তিনি এনেছেন সেখানে আবার ফেরত দেয়ার সুযোগ। আরিফ বললেন, ‘আমার জীবনে পরিবর্তন এনে দিয়েছে ফেসবুক কমার্স।’ এছাড়া পণ্য বিক্রয়ের জনপ্রিয় মাধ্যমগুলোর মধ্যে অসধুড়হ.পড়স অন্যতম একটি ওয়েবসাইট যেখানে পণ্য বা সেবা অনলাইনে বেচাকেনা করা হয় তবে বাংলাদেশে এর পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম এখনও শুরু হয়নি। বাংলাদেশে কয়েকটি ঊ-ঈড়সসবৎপব ভিত্তিক ওয়েবসাইট এর নাম : িি.িনধমফড়ড়স.পড়স,িি.িৎড়শড়সধৎর.পড়স,িি.িধলশবৎফবধষ.পড়স,িি.িপযধষফধষ.পড়স ইত্যাদি। ই-কমার্সের মাধ্যমে ব্যবসায়ে কিংবা যে কোন কাজে স্বাবলম্বী তরুণদের গল্প একটার চেয়ে অন্যটি ভিন্নতর। যা কিছু ক্ষেত্রে বর্তমানের তরুণ প্রজন্মকে করেছে আরও স্বাবলম্বী এবং বেকারত্বমুক্ত বাংলাদেশের নতুন প্রেক্ষাপট রচনা করছে। ই-কমার্স প্রযুক্তিনির্ভর উপায়ে তরুণদের সামনে খুলে দিয়েছে অফুরন্ত কাজের সুযোগ। আজকের প্রজন্ম এখন বিশ্বাস করতে শিখে গেছে কিভাবে স্বাবলম্বী হতে হয় ইন্টারনেটের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে। বর্তমান তরুণদের মধ্যে একটি বড় অংশ যখন ই-কমার্সের সহায়তায় ক্যারিয়ার গড়ে নিতে চাইছে ঠিক সে রকম একটি মুহূর্তে খুলছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পণ্যের এবং সেবার কাজ পাওয়ার সুযোগ। যা ই-কমার্সকে আরও জনপ্রিয় করে দেবে বলে নবীন উদ্যোক্তাদের অধিকাংশই মনে করেন। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তরুণরা ঝুঁকছে সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে তাদের সেবার প্রচারণায়। আলোকচিত্রী কানন মাহমুদুল বললেন, ‘ই-কমার্সের প্রধানতম সুবিধা হলো সময় ও ভৌগোলিক সীমাবদ্ধতা দূর করে। অনেক ক্ষেত্রে এটি সহজে পণ্য বা সেবার প্রত্যাশিত মূল্য নির্ধারণ করে দেয়। এই তরুণ আরও যুক্ত করলেন, ‘আমার ফটোগ্রাফির পেজটি দেশের বিভিন্ন সারির মানুষের চোখে পড়েছে ফেসবুকের সহজলভ্যতার কারণেই, সর্বশেষ মাসে আমার ইভেন্ট ছিল ২২ দিন, আয় হয়েছে পঁচিশ হাজারের অধিক টাকা। বর্তমানে আমার বেশিরভাগ ইভেন্টের ডাক আসে ফেসবুক পেজ থেকেই।’ স্বাবলম্বী হওয়াটা যখন এদেশের প্রেক্ষাপটে খুবই কঠিনতর হয়ে উঠছিল, চাকরির বাজার যখন প্রতিযোগিতায় তখন বর্তমানের তরুণদের পছন্দের তালিকায় ই-কমার্স সময়ের চাহিদা হয়ে যুগের সঙ্গে চমৎকারভাবে পাল্লা দিচ্ছে, গড়ছে সুন্দর আগামী।
×