ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

গোলাম কুদ্দুছ

প্রকাশিত: ০৪:৫৮, ২০ মার্চ ২০১৭

গোলাম কুদ্দুছ

(শেষাংশ) একদিকে ১৫ মার্চ পূর্ববঙ্গে আইনসভার অধিবেশন, অপরদিকে ১৯ মার্চ মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর ঢাকায় আগমন- এমনি সময়ে পূর্ব বাংলার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা এবং ফুঁসে ওঠা ছাত্র আন্দোলনকে প্রশমিত করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন জরুরী উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদের অন্যতম নেতা কমরুদ্দীন আহমদ তার প্রবন্ধে বলেন যে, ১৪ মার্চ রাতে ডাক্তার মালিক, তোফাজ্জল আলী খাজা নাজিমুদ্দিনের এক চিঠি নিয়ে তার সঙ্গে দেখা করেন। চিঠিতে বলা হয়, যেহেতু জাতির পিতা কায়েদে আযমকে ১৯ মার্চ পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকায় প্রথম সংবর্ধনা জানানো উচিত, সেহেতু প্রধানমন্ত্রী কর্মপরিষদের সঙ্গে ‘রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন’ সম্বন্ধে আলোচনা করতে চান। কমরুদ্দীন আহমদ প্রতিনিধিদের জানিয়ে দেন যে, যেহেতু তিনি এবং আবুল কাসেম ছাড়া রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদের বাকি সদস্যরা প্রায় সকলেই জেলে, এমতাবস্তায় তাদের সঙ্গে আলোচনা না করে কোন মতামত দেয়া সম্ভব নয়। ১৫ মার্চ সকাল সাড়ে সাতটায় মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিনের বার্তা নিয়ে মোহাম্মদ আলী ও মরহুম খাজা নসরুল্লা পুনরায় কমরুদ্দীনের সঙ্গে সাক্ষাত করে জানান যে, মুখ্যমন্ত্রী কর্মপরিষদের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনায় প্রস্তুত এবং তাদের দাবি-দাওয়া মানতে রাজি আছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সকাল সাড়ে ৮টায় কর্মপরিষদের জরুরী কর্মীবৈঠক ডাকা হয় ফজলুল হক হলে এবং বেলা এগারোটায় খাজা নাজিমুদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক শুরু হয়। সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদের পক্ষে আলোচনায় অংশ নেন কমরুদ্দীন আহমদ, আবুল কাসেম, নঈম উদ্দিন, নজরুল ইসলাম, মোহাম্মদ তোয়াহা, আবদুর রহমান চৌধুরী প্রমুখ। খাজা নাজিমুদ্দিনের সঙ্গে প্রাদেশিক সরকারের মুখ্যসচিব পাঞ্জাবি আমলা আজিজ আহমেদের সভায় উপস্থিত থাকার প্রস্তাব করলে ছাত্র নেতৃবৃন্দ তুমুল বিরোধিতা করেন এবং তাকে বাদ দিয়েই আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। তুমুল তর্কবিতর্ক ও বাক্বিত-ার পর কর্মপরিষদের পক্ষে কমরুদ্দীন আহমদ প্রণীত ৭ দফা দাবি সংবলিত একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। খাজা নাজিমুদ্দিন ৭ দফা প্রস্তাব মেনে নিয়ে নতুন আরেকটি প্রস্তাব যুক্ত করেন। চুক্তি সম্পাদনের স্বার্থে কর্মপরিষদের নেতারা তা মেনে নেন। চুক্তি সম্পাদনের পূর্বে সভা মুলতবি দিয়ে কমরুদ্দীন আহমেদ, আবুল কাসেম প্রমুখ ভাষা আন্দোলনে কারাবন্দী নেতা শামসুল হক, শেখ মুজিবুর রহমান, কাজী গোলাম মাহবুব, শওকত আলী, অলি আহাদ, রণেশ দাসগুপ্ত প্রমুখকে চুক্তির শর্তাবলী দেখিয়ে তাদের সমর্থন নিয়ে আসেন। অতঃপর বর্ধমান হাউসে ফিরে এসে আনুষ্ঠানিকভাবে চুক্তি সম্পাদিত হয়। পূর্ববঙ্গ সরকারের পক্ষে মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন এবং রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদের পক্ষে কমরুদ্দীন আহমদ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন, খাজা নাজিমুদ্দিনের সঙ্গে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সম্পাদিত ৮ দফা চুক্তিনামা : ১. ২৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৮ সাল হইতে বাংলা ভাষার প্রশ্নে যাহাদিগকে গ্রেফতার করা হইয়াছে তাঁহাদিগকে অবিলম্বে মুক্তিদান করা হইবে। ২. পুলিশ কর্তৃক অত্যাচারের অভিযোগ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং তদন্ত করিয়া এক মাসের মধ্যে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রদান করিবেন। ৩. ১৯৪৮ সালের এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে পূর্ব বাংলা সরকারের ব্যবস্থাপক সভায় বেসরকারী আলোচনার জন্য যে দিনটি নির্ধারিত হইয়াছে সেইদিন বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করিবার এবং তাহাকে পাকিস্তান গণপরিষদে এবং কেন্দ্রীয় সরকারের পরীক্ষা দিতে উর্দুর সমমর্যাদাদানের জন্যে একটি বিশেষ প্রস্তাব উত্থাপন করা হইবে। ৪. এপ্রিল মাসে ব্যবস্থাপক সভায় এই মর্মে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করা হইবে যে, প্রদেশের সরকারী ভাষা হিসেবে ইংরেজী উঠিয়া যাওয়ার পরই বাংলা তাহার স্থলে সরকারী ভাষা রূপে স্বীকৃত হইবে। ইহা ছাড়া শিক্ষার মাধ্যমও হইবে বাংলা। তবে সাধারণভাবে স্কুল কলেজগুলোতে অধিকাংশ ছাত্রের মাতৃভাষার মাধ্যমেই শিক্ষাদান করা হইবে। ৫. আন্দোলনে যাহারা অংশগ্রহণ করিয়াছেন তাহাদের কাহারো বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হইবে না। ৬. সংবাদপত্রের ওপর হইতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হইবে। ৭. ২৯ ফেব্রুয়ারি হইতে পূর্ব বাংলার যে সকল স্থানে ভাষা আন্দোলনের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করা হইয়াছে সেখান হইতে তাহা প্রত্যাহার করা হইবে। ৮. সংগ্রাম পরিষদের সঙ্গে আলোচনার পর আমি এ ব্যাপারে নিঃসন্দেহ হইয়াছি যে, এই আন্দোলন রাষ্ট্রের দুশমনদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয় নাই। [বদরুদ্দীন উমর-পূর্ব বাংলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি, প্রথম খ-, প্রথম ভারতীয় সংস্করণ, পৃ. ৮৪-৮৫] মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিনের সঙ্গে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সম্পাদিত ৮ দফা চুক্তি নিয়ে ক্ষোভ ও বিতর্ক সৃষ্টি হয়। অন্য বন্দীদের সঙ্গে সদ্য কারামুক্ত শেখ মুজিবুর রহমান এই চুক্তিকে একটি আপোসের দলিল বলে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায় প্রকাশ করেন এবং তাঁর প্রস্তাবে ১৬ মার্চ সকালবেলা ফজলুল হক হলে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের জরুরী বৈঠক বসে। এই বৈঠকে ৮ দফা চুক্তিনামার ৩টি সংশোধনী এনে সেই সংশোধিত প্রস্তাব ওই দিনকার ছাত্রসভায় পেশ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সংশোধনী ৩টি ছিল নিম্নরূপ : ১. ঢাকা ও অন্যান্য জেলায় পুলিশী বাড়াবাড়ি সম্পর্কে তদন্তের জন্য সংগ্রাম কমিটি কর্তৃক অনুমোদিত এবং সরকারী ও বেসরকারী সদস্যদের সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি নিয়োগ করিতে হইবে। ২. বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষার মর্যাদাদানের সুপারিশ করিয়া প্রস্তাব গ্রহণের উদ্দেশ্যে আলোচনার জন্য পূর্ব বাংলা পরিষদের অধিবেশন চলাকালে একটি বিশেষ দিন নির্ধারণ করিতে হইবে। ৩. সংবিধান সভা কর্তৃক তাহারা উপরোক্ত সংশোধনী প্রস্তাবগুলো অনুমোদন করাইতে অসমর্থ হইলে সংবিধানসভার এবং পূর্ব বাংলার মন্ত্রিসভার সদস্যদিগকে পদত্যাগ করিতে হইবে। [বদরুদ্দীন উমর, পূর্ব বাংলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি, প্রথম খ-, প্রথম ভারতীয় সংস্করণ, পৃ.৯৩ রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহ্বানে ওই দিন ১৬ মার্চ দুপুর দেড়টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাধারণ ছাত্রসভা অনুষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের নেতা নঈমুদ্দীনের প্রস্তাবে এ সভায় সভাপতিত্ব করেন সদ্য কারামুক্ত ছাত্রনেতা শেখ মুজিবুর রহমান। সভায় শেখ মুজিবুর রহমানই ছিলেন একমাত্র বক্তা। সাধারণ সভায় ৮ দফা চুক্তিনামার ৩টি সংশোধনী প্রস্তাব গ্রহণ করে তা মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিনের নিকট প্রেরণ করা হয়। সভাশেষে শেখ মুজিবুরের নেতৃত্বে একটি জঙ্গী মিছিল এ্যাসেম্বলির দিকে যায়। মিছিলকারীরা সেখানে বিক্ষোভ প্রদর্শন এবং উত্তেজনাকর সেøাগান দিতে থাকলে পুলিশ টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে মিছিল ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সম্পর্কে ভাষাসৈনিক গাজীউল হক বলেন, ‘আট দফা চুক্তির ফলে মিইয়ে যাওয়া ভাষা আন্দোলনকে সেদিন বঙ্গবন্ধু এককভাবে নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। এখানেই ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের বৈপ্লবিক দিক। উল্লেখ্য, তারপর রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক শামসুল আলম পদত্যাগ করেন।’ [সূত্র : ভাষা আন্দোলনের আর্থ-সামাজিক পটভূমি : আতিউর রহমান সম্পাদিত, চতুর্থ খ-, ভাষা আন্দোলন : অংশগ্রহণকারীদের শ্রেণী অবস্থান, আতাউর রহমান ও সৈয়দ হাশমী, পৃ. ৫৩] ১৬ মার্চের ছাত্রসভা সম্পর্কে আন্দোলনের অন্যতম নেতা মোহাম্মদ তোয়াহা বলেন, ‘আমরা মিটিং দিয়েছিলাম ইউনিভার্সিটিতে বেলা ১১টার সময়। (আসলে দুপুর দেড়টায়-লেখক)। সেদিন মিটিংয়ের জন্য আমরা গিয়ে দেখলাম শেখ মুজিবুর রহমান সময়ের পূর্বেই বেলতলায় মিটিং শুরু করে দিয়েছে। সেখানে তখন ১০০ জনের মতো ছাত্র ছিল। আগে আমারই মিটিংয়ে সভাপতিত্ব করার কথা ছিল কিন্তু মুজিব আগে থেকেই সভাপতি হয়ে বক্তৃতা শুরু করে দিয়েছিলেন।...যাই হোক, আমরা গিয়ে দেখলাম সে খুব গরম বক্তৃতা দিচ্ছে। এর পূর্বে নাজিমুদ্দিনের সঙ্গে আমাদের একটি অমৎববসবহঃ হয়েছিল, কিন্তু মুজিব সে অমৎববসবহঃ-এর কোন কথা জানত না। কথা ছিল আমরা সে দিনের মিটিংয়ে অমৎববসবহঃ এবং তার বিবরণ পেশ করব। কিন্তু মুজিবের জন্য সেটা সম্ভব হয়নি। সে বক্তৃতার পর অন্য কাউকে বলার সুযোগ না দিয়ে বলল ‘চলো চলো অংংবসনষু চলো।’ সে সময় প্রাদেশিক অংংবসনষু সেশন হচ্ছিল। ... সেøাগান দিয়ে মুজিব কিছুসংখ্যক ছাত্রদের নিয়ে অংংবসনষু’র দিকে রওনা হলো। পরে পথে আরও লোক জুটে গেল।’ {সূত্র : [ভাষা আন্দোলন প্রসঙ্গ : কতিপয় দলিল (দ্বিতীয় খ-), বদরুদ্দীন উমর, পৃ. ২৬৪] সে দিনের সভা সম্পর্কে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আরেক নেতা শওকত আলী বলেন- ‘১৬ তারিখ সকাল থেকে আমরা সভার ব্যাপারে কাজকর্ম করতে থাকলাম এবং দুপুর দেড়টা-দুইটায় সভা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে শুরু হলো। সভায় সভাপতিত্ব করল শেখ মুজিবুর রহমান। সেই বক্তৃতা করল তারপর একটি মিছিল নিয়ে আমরা অংংবসনষু ঐড়ঁংব-এর দিকে গেলাম।’ [সূত্র : বদরুদ্দীন উমর, ভাষা আন্দোলন প্রসঙ্গ-কপিয় দলিল (দ্বিতীয় খ-), পৃ. ২৫০] ১৬ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে রাষ্ট্রভাষা ও সংগ্রাম পরিষদ আয়োজিত সভা সম্পর্কে আবদুল মতিন ও আহমদ রফিক বলেন- ‘যাই হোক সংশোধিত প্রস্তাব ছাত্র সভায় অনুমোদিত হওয়ার পর অলি আহাদের মাধ্যমে নাজিমুদ্দিনের কাছে পাঠিয়ে দেয়া হয়। ইতোমধ্যে ওই সভায় বক্তৃতা শেষে শেখ মুজিবুর রহমান সংগ্রাম পরিষদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই কিছুসংখ্যক ছাত্রের একটি মিছিল নিয়ে সরকারবিরোধী ধ্বনি দিতে দিতে পরিষদ ভবনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন। পুলিশ সেখানে যথারীতি তাদের বাধা দেয়। তাদের সেøাগানে আকৃষ্ট হয়ে আরও বহু ছাত্র সেখানে সমবেত হন এবং এই সংখ্যা ক্রমেই বাড়তে থাকে। পুলিশের লাঠি চালনা সত্ত্বেও ছাত্রদের বিক্ষোভ সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে এবং মন্ত্রী ও পরিষদ সদস্যগণ পরিষদ ভবন থেকে বের হতে পারে না। অবশেষে পুলিশের লাঠি, কাঁদানে গ্যাস এবং ফাঁকা গুলির চাপে ছাত্রদের অবরোধ ছেড়ে চলে যেতে হয়। [সূত্র : ভাষা আন্দোলন ইতিহাস ও তাৎপর্য, লেখক আবদুল মতিন ও আহমদ রফিক, পৃ. ৫৫] ছাত্র মিছিলে পুলিশী হামলার প্রতিবাদে করণীয় নির্ধারণের জন্য সে রাতে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ১৭ মার্চ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট ও সভা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু পরদিন ১৭ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত ছাত্রসভা থেকে ১৯ মার্চ জিন্নাহর ঢাকা আগমন উপলক্ষে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে ছাত্র ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকায় ২১ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে প্রদত্ত গণসংবর্ধনার বক্তৃতায় এবং ২৪ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে অনুষ্ঠিত সমাবর্তনে একমাত্র উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার কথা বললে শুধু ছাত্র সমাজই নয় সারাদেশের মানুষ এর প্রতিবাদে মুখর হয়। এর মধ্যে ১১ সেপ্টেম্বর ১৯৪৮ জিন্নাহর মৃত্যু হলে রাষ্ট্রভাষার বিষয়টি আপাতত অমীমাংসিত থেকে যায় এবং আন্দোলনেও ভাটা পড়ে। ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে ১১ মার্চ এক মাইলফলক হিসেবেই চিহ্নিত হয়ে থাকবে। ধর্মের ভিত্তিতে পাকিস্তানের সৃষ্টির ফলে ধর্মীয় আবেগ, মধ্যবিত্ত শিক্ষিত মুসলমানদের একটি বড় অংশের ইংরেজী প্রীতি এবং মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর পাহাড় সমান জনপ্রিয়তাকে উপেক্ষা করে যে ছাত্র-যুবকরা রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে সেদিন আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন সময় এবং পরিস্থিতির বিবেচনায় তাদের শুধু ভাষাপ্রেমী নয় বীর হিসেবে চিহ্নিত করাই হবে যথার্থ। বায়ান্নর ২১ ফেব্রুয়ারি রক্তদানের যে ইতিহাস রচিত হয়েছিল তার সূত্রপাত এবং প্রেরণা ছিল ১১ মার্চ। আর সে কারণেই বায়ান্নর পূর্ব পর্যন্ত ১১ মার্চকে রাষ্ট্রভাষা দিবস হিসেবে পালন করা হতো সর্বত্র। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য ইতিহাস প্রণয়নের ক্ষেত্রে অনেকেই ভাষা আন্দোলনের এ পর্যায়কে তেমন গুরুত্ব প্রদান করেননি। ইতিহাসে যার যা ভূমিকা তা যথার্থভাবে তুলে ধরার লক্ষ্যেই এই নিবন্ধ রচনা। লেখক : গবেষক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব
×