ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

হেলেনা নোরোভিচ

এ বয়সেও মডেলিং!

প্রকাশিত: ০৬:৫৪, ১৭ মার্চ ২০১৭

এ বয়সেও মডেলিং!

সুন্দরী, তরুণী মডেলদের নিয়ে একটি এ্যাডভার্টাইজিং ক্যাম্পেন চলেছে। কিন্তু এবার যিনি এলেন তিনি সুন্দরী বটে, তবে ঠিক তরুণী নন। নাম হেলেনা নোরোভিচ। বয়স ৮২। পোল্যান্ডে মডেল হিসেবে এখন তাঁর খুব চাহিদা। ফ্যাশন ডিজাইনার মিশাল গিলবার্ত লাশ তাঁর মডেল হিসেবে হেলেনাকেই বেছে নিয়েছেন। মিশাল বলেন, ‘ঝুঁকিটা নিয়ে ভালোই করেছি। প্রথমে জানতাম না, পাবলিকের প্রতিক্রিয়া কি হবে, লোকে কি বলবে তাই ভয় ছিল। হেলেনারও চিন্তা ছিল, একজন তরুণী টপ-মডেলের সঙ্গে তুলনায় তাকে কেমন দেখাবে। কিন্তু ফলটা হয়েছে চমৎকার, অপ্রত্যাশিত, মুগ্ধ হয়ে যাবার মতো। আমরা সকলেই এই প্রচার অভিযানে খুশি।’ একজন তরুণী মডেলের সঙ্গে ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে কেমন লাগে? এ প্রসঙ্গে হেলেনা বলেন, ‘শুধু একবার ভেবেছিলাম আগে আমাকেও ওদের মতো দেখাতো। তারপরে ভাবলাম, বরং ওদের ভাবা উচিত ভবিষ্যত নিয়ে। হেলেনা আসলে তার সারাজীবন অভিনেত্রীর কাজ করেছেন। মেক-আপ নেবার সময় শান্তভাবে বসে থাকেন, কেননা তার মেক-আপ নেয়ার অভ্যাস আছে। তার জীবনে কঠিন সময়ও এসেছে যেমন যখন থিয়েটার কর্তৃপক্ষ তাকে বলেন : অনেক হয়েছে, এবার আপনি বিদায় নিতে পারেন। তার পরের দশ বছর ধরে তিনি কোন কাজ খুঁজে পাননি। তারপর একদিন টেলিফোন বেজে ওঠে, ডাক পড়ে তার নতুন পেশায়। তার বয়স তখন ৮০। হেলেনা বললেন, ‘আমি আমার প্রজন্মের অন্য মানুষজনকে আশার আলো দেখাই। দেখাই যে, বয়স হলেও মানুষ ঠিক যতটা জোরালোভাবে বাঁচতে চায়, ততটা জোরালো ভাবে বাঁচতে পারে।’ হেলেনার সাহস, শৃঙ্খলা ও ‘কুলনেস’, সবই আছে, ৮০ পার হয়েও, শারীরিক বিচারেও তিনি ফিট...। কার্মেন ডেল’ অরেফিস সেই মেয়েটি: ১৯৪৬ সালের এক সকাল। নিউ ইয়র্কের এক রাস্তায় একটা বাস থামল। বাস থেকে নামল এক ১৫ বছর বয়সী কিশোরী। তাকে দেখে এক ফটোগ্রাফারের মনে হলো, ‘মেয়েটির চেহারায়, দৈহিক গড়নে মডেল হবার সব উপাদান আছে।’ সেই মেয়েই কার্মেন ডেল অরেফিস। ইটালিয়ান-হাঙ্গেরিয়ান বাবা-মায়ের সন্তান কার্মেনের এভাবেই মডেলিং দুনিয়ায় পদার্পণ। দারিদ্র্য তাকে করেছে সুপারস্টার : কবি নজরুল লিখেছিলেন, ‘হে দারিদ্র্য, তুমি মোরে করেছ মহান।’ কার্মেনের জীবনেও দারিদ্র্যের কশাঘাত ছিল। বাড়িতে টেলিফোন ছিল না বলে কাজ দিতে চাইলেও এজেন্সি তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারত না। অনেক সুযোগ নষ্ট হয়েছে এ কারণে। বাবা-মায়ের বাসভাড়া দেয়ার ক্ষমতা ছিল না বলে রোলারস্কেটিং করে কর্মস্থলে যেতেন কার্মেন। তখন বয়স মাত্র ১৫। ১৫ বছরেই প্রচ্ছদকন্যা : ঐ ১৫ বছর বয়সেই ‘ভোগ’-এর মতো বিখ্যাত ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদকন্যা হয়ে যান কার্মেন ডেল’ অরেফিস। তখন তিনি সবচেয়ে কম বয়সী মডেলদের একজন। অভিনেত্রী কার্মেন : অভিনয়ও করেছেন কার্মেন ডেল’ অরেফিস। ১৯৬৬ সালে প্রথম ছবি। ছবির নাম ছিল ‘দ্য লাস্ট অব দ্য সিক্রেট এজেন্টস’। তারপর দীর্ঘ ৩০ বছর আর ঐ পথ মাড়াননি। তবে ১৯৯৬ সালে আবার রূপালি পর্দা আলোকিত করতে দেখা যায় তাঁকে। সেই থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত চারটি পূর্ণ দৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। এর বাইরে ছয়টি টিভি সিরিয়ালেও অভিনয় করেছেন কার্মেন। জীবনভর চড়াই-উতরাই : কৈশোরেই পরিবারের দায়িত্ব নিয়ে খুব কম বয়সে প্রাচুর্যের মুখও দেখেছিলেন কার্মেন। শুরুতে ঘণ্টায় সাড়ে সাত ডলার পারিশ্রমিক দিয়ে যারা ভাবত ‘ঢের হয়েছে’, একসময় মোটা অঙ্কের চেক পাঠিয়েও তারা ধন্য হতেন। কিন্তু স্বামীর প্রতারণা নিঃস্ব করেছিল তাঁকে। খুব দৃঢ়চেতা বলেই সামলে উঠে এখনও মডেলিংয়ে টিকে আছেন কার্মেন। ইতিহাসের সাক্ষী : কার্মেনের জন্ম যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে, ১৯৩১ সালে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কথা খুব মনে আছে। সেই যুদ্ধের পরও অনেকগুলো বছর গেল। ফেলে আসা সময় নিয়ে ভাবলে আমেরিকান মডেলের নিজেকে ‘ইতিহাসের সাক্ষী’ বলে মনে হয়। এক সাক্ষাতকারে তাই কার্মেন বলেছেন, ‘আমি জীবনের এমন একটা সময়ে এসে দাঁড়িয়েছি যখন মনে হচ্ছে যে, এ সময়টা একান্তই আমার। গোটা একটা ইতিহাসের সাক্ষী আমি। দীর্ঘ একটা সময়ের অভিজ্ঞতা আছে আমার ঝুলিতে।’ এখনও খবরে : এখনও তাঁকে দেখলে থমকে দাঁড়ায় অনেক তরুণ। তাছাড়া এই বয়সে মডেলিং করছেন বলে মিডিয়ার চোখও থাকে তাঁর দিকে। পাঁচ বছর আগেই বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বয়সী মডেলের স্বীকৃতি পেয়েছেন তিনি। বয়সকে হার মানানো এমন এক তারকার দিকে সবার চোখ থাকাই তো স্বাভাবিক! আজীবন কাজ : ৮৫ বছর বয়সেও মডেলিংয়ে আছেন কার্মেন। নিজেকে একেবারেই ‘বুড়ো’ ভাবেন না। বরং বয়সের প্রশ্ন তুললেই বলে ওঠেন, ‘বুড়ো তো সবাইকেই হতে হবে, মরতেও হবে একদিন। কিন্তু ঠিক কিভাবে আমরা বুড়ো হব, কিভাবে জীবনটা কাটাব সেটা তো আমাদেরই হাতে। তাই আমি জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্ত কাজ করে যেতে চাই।’ আশীষ চক্রবর্ত্তী সূত্র: ডয়েচে ভেলে
×