ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মাকিদ হায়দার

জনৈক ম্যাজিস্ট্রেটের আত্মজীবনী হইতে

প্রকাশিত: ০৬:৫২, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

জনৈক ম্যাজিস্ট্রেটের আত্মজীবনী হইতে

সাংবাদিক, হাবিবুর রহমান স্বপন প্রীতিভাজনেষু। শেষ অবধি কর্ণ দুটি বধির হইয়া গেলো। স্ত্রীকে বললাম, ঈশ্বর আমাকে মুক্তি দিয়াছেন অদ্য হইতে শুনিতে হইবে না বোমার শ্লেষ মিশ্রিত বাণী। তিনি কি বলিলেন তাহা তিনিই জানেন শুনি নাই শুনিবার সাধও নাই, ইচ্ছাও নাই। মাত্র দুই সপ্তাহ আগে আমাদের বিবাহের প্রথম বার্ষিকী পূর্ণ হইয়াছে বাদ্যি বাজনা বাজাইয়া, লাল, নীল বাতি দিয়া ঘর সাজাইয়া, শ্বশুরালয়ের যাবতীয় আত্মীয় স্বজনদিগকে রাতান্নে উৎকৃষ্ট নব্য ঘি দ্বারা আপ্যায়ন করিলাম হাসি মুখে। সেই আহ্লাদে, স্ত্রী খুশিতে ডগমগ হইয়া সেই রাত্রে আমাকে চুম্বন করিলেন ঊনচল্লিশ বার, যাহা তিনি বিগত বছরে একবারও করেন নাই। এমনকি এসব ও জিজ্ঞাসা করেন নাই, বিবাহ বার্ষিকীতে তোমার কোন ধার কর্জ হইয়াছে কিনা! যদি তিনি করিতেন, তাহা হইলে মনে, মনে বলিতাম অবশ্যই হইয়াছে, তোমাকে তাহা বলিলেই, তুমি তোমার নিশ্চয়তার নিকট নিয়া সেই কথা বলিয়া দিলেই আমার মান সম্মান কিছুই থাকিত না সেই ভয়ে বলি নাই ধার কর্জের কথা। সেই বিবাহ বার্ষিকীতে আমার পিতা মাতা, আত্মীয় স্বজনদের কাহাকেও বলিতে পারি নাই, কেননা বলিতে নিষেধ করিয়াছিলো আমার স্ত্রী উম্মে হাবিবা। তিনি পূর্বেই আমাকে সতর্ক করিয়া, ইতিউতি তাসাইয়া বারংবার বলিয়াছিলেন, সাবধান! আমাদের প্রথম বিবাহ বার্ষিকীতে তোমার আত্মীয়স্বজনদের এই গৃহে প্রবেশ নিষেধ কেননা, তোমার পিতার শরীরে এখনো লাগিয়া আছে বিশ্রী রকমের ঘামের গন্ধ। চেহারায় চাষা ভুষার চিহ্ন প্রকট, এমনকি তোমার মায়ের তেলহীন চুল, পান খাওয়া দাঁত ও মুখ দেখি নাই, আমার সকল স্বজনেরা তাহাদের কোটি টাকা দামের গাড়ি লইয়া যথারীতি করিবেন প্রস্থান, তাহারা হয়ত যাইবার কালে বলিয়া যাইবেন, অথবা বলিবেন, ছি ছি ম্যাজিস্ট্রেট শুনিয়াই, ছেলেটিকে কোটি টাকার বিনিময়ে কেন যে কিনিয়া, আমাদের মেয়েটিকে বিবাহ দিয়াছিলাম ওই চাষা ভুষার দিন আনা দিন খাওয়া পরিবারে। হঠাৎ দেখিলাম, উইষ্ম চোখ মুছিলেন গোপনে। হাবিবের সেই কথা শুনিয়াছি শুধু বলি নাই কিছু, বলিলেই গৃহের শান্তি নিয়া অশান্তি হইলে হয়তো বা একদিন আমাকে ছাড়িয়া চলিয়া যাইবে তাহার ফুফুর ছেলে সহিত। আমি ভীরু, কাপুরুষ বলিয়াই হাবীবাকে বলি নাই কিছু ইহার চাইতে মরণ ভালো জানিয়াও আমার পিতা মাতাকে বলিতে পারি নাই, আমাদের বিবাহের প্রথম বার্ষিকীতে আসিবার কথা সুখের বিষয় আগামী বছর হাবীবা যখন দ্বিতীয় বিবাহ বার্ষিকীর কথা বলিবে তখন আমি শুনিয়াও শুনিব না বরং পাড়া প্রতিবেশীদের নিকট গিয়া বলিয়া দিব। উম্মে হাবীবার অত্যাচারে আমি হইয়াছি কাপুরুষ এবং একই সঙ্গে হইয়াছি মূখ ও বধির।
×