ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

পদ্মা সেতুতে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের ১২ নয়া বিশেষজ্ঞ

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

পদ্মা সেতুতে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের  ১২ নয়া বিশেষজ্ঞ

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মাওয়া থেকে ফিরে ॥ পদ্মা সেতুর কাজ এগিয়ে নিতে যুক্তরাষ্ট্রের দু’জনসহ আরও ১২ জন বিশেষজ্ঞ প্রকল্প এলাকায় অবস্থান করছে। বুধবার এই বিশেষজ্ঞ দলটি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সভা করেছে। ঠিকাদারিপ্রতিষ্ঠান চায়না মেজর কোম্পানির পক্ষে সেতু কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে গুণগতমান ঠিক রেখে দলটি কাজ করছে। পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালক সফিকুর রহমান শুক্রবার রাতে জনকণ্ঠকে এ প্রসঙ্গে জানান, সবারই লক্ষ্য যথাসময়ের সেতুর কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন করা। পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালক জানান, ২-১ দিনের মধ্যেই মাওয়া প্রান্তে আবার পাইল স্থাপনের কাজ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। এছাড়া মাওয়া প্রান্তে ভায়াডাক্টের পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ চলছে। ২০-২৫ দিনের মধ্যে এই পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে মাসখানেকের মধ্যেই মাওয়া প্রান্তের ভায়াডাক্টের (সংযোগ সেতু) কাজ শুরু করার সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে জাজিরা প্রান্তে ভায়াডাক্টের ৪৮টি পাইল স্থাপন হয়েছে। নদীতে পাইল স্থাপনের কাজও এগোচ্ছে। পুরোদমে চলছে নদীশাসনের কাজ। তবে শুষ্ক মৌসুমে নদীশাসনের কাজ আরও বেশি অগ্রগতি প্রয়োজন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। মান ঠিক রেখে ও নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করতে কর্মযজ্ঞ প্রসারিত হচ্ছে। মাওয়া প্রান্তে এ্যাপ্রেচ সড়কের কাজ প্রায় শেষ হলেও জাজিরা প্রান্তের কাজ মার্চে শেষ হচ্ছে। সেতু প্রকল্পে পরিবেশ যথাযথ রাখার লক্ষ্যে প্রায় ২ লাখ গাছ রোপণ করা হয়েছে। এখন সবগুলো গাছই বড় হচ্ছে। তবে এই গাছের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা রয়েছে। আরও কয়েক লাখ গাছের চারা প্রকল্প এলাকায় রোপণ করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে সেতু এলাকায় একটি পরিবেশ বেষ্টনী তৈরি করা হচ্ছে। প্রাণী জাদুঘরকে আরও সমৃদ্ধ করার প্রক্রিয়া চলছে। পদ্মার চরেও নানা রকম পরিকল্পনা নিয়ে কাজ এগোচ্ছে। পদ্মা সেতু কেন্দ্রিক মহাযজ্ঞ বিশেষ রূপ ধারণ এখন সময়ের ব্যাপার। আর দু’পাড়ের বিশাল এলাকাজুড়ে আর্থ-সামাজিক পরিবর্তন যে কাউকেই বিস্মিত করবে। এদিকে জাজিরা প্রান্তে ট্রানজিট পিলারে লোড টেস্ট শুরু হয়েছে। তিনটি পাইল স্থাপনের পর নিয়ম অনুযায়ী এই লোড টেস্ট। ১৪ দিন ধরে এই লোড টেস্ট এখন শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এই লোড পরীক্ষার পরই আবার পাইল স্থাপন শুরু হবে। এই ট্রানজিট পিলারে ১৬টি পাইল বসবে। এদিকে পদ্মা সেতুর প্রকল্পের আওতায় পদ্মার ওপর দিয়ে ন্যাশনাল গ্রিডের বিদ্যুত লাইন স্থাপনে নানা প্রক্রিয়া চলছে। পদ্মায় এই বিদ্যুত লাইনের জন্য সাতটি পিলার স্থাপন করবে পদ্মা সেতু প্রকল্পের আওতায়। পদ্মা সেতুর সুপার স্ট্রাকচারের ছয়টি স্প্যান এখন কুমারভোগের ওয়ার্কসপে। এর মধ্যে প্রথম স্প্যনিটি ফিটিং করে লোড টেস্ট সম্পন্ন করে রাখা হয়েছে। এখন পিলার উঠলেই এই স্প্যানটি বসিয়ে দেয়া হবে। বাকি স্প্যানগুলোও ফিটিংয়ের কাজ চলছে। পদ্মা সেতুর ৪২টি পিলারে ৪১টি স্প্যান লাগবে। ১৫০ মিটার দীর্ঘ সেতুটির সুপার স্ট্রাকচারের প্রতিটি স্প্যানের ওজন প্রায় ২ হাজার ৯শ’ টন। বাকি স্প্যানগুলো চীনে পর্যায়ক্রমে তৈরি করা হচ্ছে এবং তা সমুদ্র পথে বাংলাদেশে আনা হচ্ছে। সেতুর সব ধরনের কজাই এগিয়ে চলছে। তবে সংশ্লিষ্টরা এখন পাইল স্থাপনের ওপর এবং শুষ্ক মৌসুমে নদীশাসনের কাজ আরও এগিয়ে নেয়ার ব্যাপারে বেশি মনোনিবেশ করছে। বৈচিত্র্যময় পদ্মার তলদেশের মাটিতে রয়েছে নানা বৈচিত্রতা। তাই বিশ্বের সবচেয়ে বেশি গভীরে পাইল স্থাপনের পরেও রয়েছে নানা চ্যালেঞ্জ। এসব চ্যালেঞ্জ ওভারকাম করেই পদ্মা সেতু তৈরির কর্মযঞ্জ এগিয়ে চলছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
×