ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মেগাসিটি ঢাকায় সাড়ে ৫শ’ মানুষের জন্য পুলিশ মাত্র একজন

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

মেগাসিটি ঢাকায় সাড়ে ৫শ’ মানুষের জন্য পুলিশ মাত্র একজন

শংকর কুমার দে ॥ পৌনে দুই কোটি জন অধ্যুষিত রাজধানী ঢাকা এখন এক মেগাসিটি। এই মেগাসিটির প্রায় সাড়ে ৫০০ মানুষের জন্য মাত্র ১ জন পুলিশ। রাজধানীতে এত অল্প সংখ্যক পুলিশ দিয়ে বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা বিধান করতে গিয়ে অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে। বাড়ছে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগও। গত এক বছরে রাজধানীতে ৪০০ পুলিশকে বিভিন্ন অভিযোগে শাস্তি দেয়া হয়েছে। ডিএমপি সূত্রে এ খবর জানা গেছে। ডিএমপি সূত্র জানায়, ১৯৭৬ সালে ১ ফেব্রয়ারি ১২টি থানা নিয়ে কার্যক্রম শুরু হয় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি)। তখন রাজধানীর জনসংখ্যা ছিল মাত্র ৪১ লাখ। আর ২০১৭ সালে এসে জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় পৌনে ২ কোটি। রাজধানীতে এখন থানার সংখ্যা ৪৯টি। প্রায় ৩৫ হাজার পুলিশ সদস্য কর্মরত আছেন ডিএমপিতে। রাজধানীতে জনসংখ্যার অনুপাতে যে পুলিশ আছে তা নিতান্তই কম। ডিএমপি সূত্র জানায়, সারাদেশে গত বছর ৫০ হাজার পুলিশ নিয়োগ করা হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৭০০ পুলিশ সদস্যকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে ডিএমপিতে। অথচ একটি দেশের রাজধানীই হচ্ছে সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু। বিশেষ করে রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও জননিরাপত্তা উন্নত থাকলে সারাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিই নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে মনে করা হয়। অথচ পুলিশ নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজধানীকে অনেক পেছনে রাখার বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সহায়ক নয়। ডিএমপিতে জনবল সঙ্কটের কারণে দেখা যাচ্ছে, যার ৮ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করার কথা সে দায়িত্ব পালন করছে ১৬ ঘণ্টাও। ডিএমপির পক্ষ থেকে বারবারই জনবল বৃদ্ধির পক্ষে বলা হচ্ছে। ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, ডিএমপিতে যেসব বিভাগের মাধ্যমে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে তার মধ্যে রয়েছেÑ গোয়েন্দা ও অপরাধ গোয়েন্দা বিভাগ, অপরাধ ও অপারেশন বিভাগ, ট্রাফিক বিভাগ, সুরক্ষা ও প্রটোকল বিভাগ, পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট ও সদর বিভাগ, বিশেষ নারী পুলিশ বাহিনী ইত্যাদি। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ছাড়াও অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা বিধানের সহযোগিতা এবং সঙ্গে সাংগঠনিক যোগাযোগ বজায়ে রেখে কাজ করছে বাংলাদেশ আনসার, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, বিশেষ শাখা (বাংলাদেশ), বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো, র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন ও অন্যান্য জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা। এসব সংস্থায় কর্মরত যেই ধরনের জনবল রয়েছে তাতে নানা ধরনের অপরাধ দমন ও তদন্তে আরও বেশি দক্ষ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সদস্য বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার কথা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বারবারই বলা হচ্ছে। তবে মাঠ পর্যায়ে কর্মরতদের প্রতি যথাযথ সুপারভিশন বা তত্ত্বাবধানের অভাবের কারণে আরও বেশি সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি অনেক পুলিশ সদস্য অপরাধেও জড়িয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ আসছে। ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, পুলিশ বাহিনীর অনেক সদস্যের বিভিন্ন ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ আসছে। মামলা তদন্তে ঘুষ নেয়া, গ্রেফতার বা ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করা, ছিনতাই-ডাকাতি, মাদক কেনাবেচা, ধর্ষণসহ বড় ধরনের অপরাধে পুলিশের জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ রয়েছে। এ ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়া বন্ধ করতে পুলিশ প্রশাসন থেকে নানা পদক্ষেপ নেয়া হলেও তা খুব কাজে আসছে না। প্রতিবছরই নানা ধরনের অভিযোগে পুলিশের শাস্তি হচ্ছে, আবার অপরাধের সঙ্গেও জড়িয়ে পড়ার ঘটনাও ঘটছে। বিশেষ করে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগে কর্তব্যরত পুলিশের বিরুদ্ধে প্রায় মাত্রাতিরিক্ত বাড়াবাড়ি, অসদাচরণ, ঘুষ, দুর্নীতির অভিযোগ প্রতিনিয়তই ঘটছে, যা ইচ্ছা করলেই এড়ানো যায়। ২০১৬ সালে ডিএমপির ৪০০ পুলিশকে শাস্তি দেয়া হয়েছে তার মধ্যে রয়েছেÑ পদোন্নতি বন্ধ, নিম্নপদে নামিয়ে দেয়া, বেতন কর্তন, বেতন বাড়ানো বন্ধ, চাকরি থেকে অব্যাহতি ও চাকরিচ্যুত করা ইত্যাদি। এসব পুলিশের বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতিসহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকা-ে জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়ার পর শাস্তি দেয়া হয়। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোঃ আছাদুজ্জামান মিয়া ডিএমপির ৪২তম প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে রাজধানীর শাহবাগে নাগরিকদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানানোর আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ২০১৬ সালে ডিএমপিতে কর্মরত ৪০০ পুলিশকে শাস্তি দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে কখনও অপেশাদার আচরণ সহ্য করা হয় না। ডিএমপিতে কর্মরত পুলিশের অপরাধ প্রবণতা কমেছে বলে দাবি করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, এ ব্যাপারে আমাদের অবস্থান আমরা বহুবার বলেছি। বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী একটি বিধিবিধান অনুযায়ী চলে। যদি দায়িত্ব পালনের সময় তার আচরণে কোন বিচ্যুতি ঘটে, যদি কেউ অপেশাদার আচরণ করে অথবা প্রয়োজনের অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করে তাহলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে আইন মেনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
×