ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দায়িত্বকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি যাতে সার্থক হতে পারি ॥ সিইসি

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

দায়িত্বকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি যাতে সার্থক হতে পারি ॥ সিইসি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নতুন নির্বাচন কমিশন। একই সঙ্গে নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করা ও দল মতের উর্ধে থেকে দক্ষতার সঙ্গে নির্বাচন পরিচালনার ওপর জোর দেয়ার কথা বলা হয়েছে। গত বুধবার আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব নিয়ে বৃহস্পতিবার কমিশন সচিবালয়ে এক পরিচিতিমূলক বৈঠকে বক্তব্য রাখেন সিইসি কেএম নূরুল হুদা। বৈঠকে তিনি সবচেয়ে বেশি জোর দেন আগামী জাতীয় নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণের বিষয়টির ওপর। বলেন, নির্বাচন যদি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক না হয়, সব দলের অংশগ্রহণ না থাকে তাহলে সে নির্বাচন বিতর্কিত হবেই। এর আগে দায়িত্ব নিয়ে বৃহস্পতিবার সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নতুন নির্বাচন কমিশন। সকাল ১০টায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন নবনিযুক্ত চার কমিশনার মাহবুব তালুকদার মোঃ রফিকুল ইসলাম, বেগম কবিতা খানম ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) শাহাদৎ হোসেন চৌধুরী। সেখানে তাঁরা এক মিনিট নীরবতা পালন করেন। জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদা সাংবাদিকদের বলেন, আগামী ৫ বছর সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব বেশ চ্যালেঞ্জিং। আমরা আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করব। সফলভাবে এ দায়িত্ব পালনের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। সিইসি বলেন, আমরা এখনও চেয়ারে বসিনি। তাই বিস্তারিত কিছু বলার সময় এখনও আসেনি। তবে এতটুকু বলব, দায়িত্বকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি যাতে সার্থক হতে পারি। এদিকে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদনের পরই সিইসি সরাসরি আগারগাঁও নির্বাচন কমিশন ভবনে চলে যান। সেখানে ইসি সচিবালয়ের বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে পরিচিতিমূলক সভাও করেন। সভায় নতুন সিইসি আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব দলের অংগ্রহণ নিশ্চিত করার পরিকল্পনার কথা ব্যক্ত করেন তিনি। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, এ সময় সিইসি বলেন, এই ইসি নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার হিসেবে শপথের মাধ্যমে আমরা যারা নতুন দায়িত্ব নিয়েছি, কমিশন পরিচালনার জন্য দলমত নির্বিশেষে সব কিছুর উর্ধে থেকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করব। এ সময় তিনি আগামী নির্বাচনের সব দলের অংশগ্রহণের বিষয়টির ওপর জোর দিয়ে বলেন, নির্বাচন যদি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক না হয়, সব দলের অংশগ্রহণ না থাকে, সেক্ষেত্রে নির্বাচন বিতর্কিত হবেই। সুতরাং আমরা আশা করব, সব দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। আগে ইসির অধীনের অনুষ্ঠিত নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, দেশে কতগুলো নির্বাচন অত্যন্ত সফল হয়েছে। যে নির্বাচনগুলো বিতর্কিত ছিল তা বিশ্লেষণে যাব না। একটা কথাই বলতে পারিÑ অনেকেই বলেছেন, ইনক্লুসিভ নির্বাচন ছিল না বলেই বিতর্কিত ছিল বলে উল্লেখ করেন। এ সময় তিনি আরও উল্লেখ করেন, দেশবাসী এই মুহূর্তে নতুন ইসির দিকে তাকিয়ে রয়েছে। তাদের আগ্রহ ও মনোভাবের প্রধান কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে নতুন গঠিত নির্বাচন কমিশন। এ কারণে জাতির আশা আকাক্সক্ষা মেটাতে আশাকরি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে পারব। সুষ্ঠু নির্বাচনের উদাহরণ টেনে তিনি প্রসঙ্গক্রমে ২০১০ সালে চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তা জেসমিন টুলির কথাও উল্লেখ করেন এ সময়। বলেন, জেসমিন টুলী যখন চট্টগ্রামে নিরপেক্ষ ও দৃঢতার সঙ্গে পরিচালনা করে সফল একটা নির্বাচন উপহার দিলেন তখন দেশবাসী তার দিকে তাকিয়ে ছিল। সমস্ত মানুষ বলেছিল, কীভাবে সম্ভব? তাকে কিন্তু কেউ প্রভাবিত করতে পারেনি। তার সিদ্ধান্ত থেকে তাকে কোন রকম কেউ বিব্রত বা বিচলিত করতে পারেনি। ইসি কর্মকর্তাদের নির্ভয়ে দায়িত্ব পালনের আশ্বাস দিয়ে বলেন, যে দক্ষ জনবল রয়েছে তাতে আগামীতে ভাল নির্বাচন উপহার দেয়া সম্ভব হবে। সামনে যেসব নির্বাচন আসবে তা দৃঢতার সঙ্গে মোকাবেলা করতে হবে। মাঠ পর্যায়ে কর্মকর্তারা ভোটে অনিয়ম ঠেকাতে ব্যর্থ হলে ইসির ক্ষমতা নিয়ে পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেন। বলেন, নতুন ইসির অবস্থান জিরো টলারেন্স। কাউকে কোন ক্রমেই রেহাই দেয়া হবে না। পরিচিতিমূলক বৈঠকে ইসির অন্য চার সদস্যও বক্তব্য রাখের বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি শপথ গ্রহণের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক দায়িত্বভার গ্রহণ করেন কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। প্রধান বিচারপতি কাছ থেকে শপথ নিয়ে তারা চলে যান নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে। পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখিও হন। তবে রাষ্ট্রপতি নিযুক্ত নতুন কমিশনকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে স্বাগত জানানো হলেও বিএনপির পক্ষ থেকে হতাশা ব্যক্ত করা হয়েছে। এমনকি এ ইসির অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে না বিধায় দায়িত্ব নেয়ার আগেই পদত্যাগের আহ্বান জানানো হয়। বিএনপির এ ধরনের প্রতিক্রিয়ার জবাবে নূরুল হুদা বৃহস্পতিবার সাভার জাতীয স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বলেন, “তারা কেন কিভাবে এসব মন্তব্য করেন সেটা তাদের বিষয়। এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া বা মন্তব্য কোনটাই নেই বলে উল্লেখ করেন। জাতীয় স্মৃতিসৌধে নির্বাচন কমিশনের নতুন সদস্যদের স্বাগত জানান ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার শাহ মিজান শাফিউর রহমান ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মজিবুর রহমান। পরে জাতীয় স্মৃতিসৌধের বেদীতে সিইসি নূরুল হুদার নেতৃত্বে অপর চার কমিশনার ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এরপর তারা সেখানে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন। শেষে জাতীয় স্মৃতিসৌধের পরিদর্শক বইতে স্বাক্ষর করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। সার্চ কমিটির বাছাইয়ের মাধ্যমে নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন ৫ সদস্যেও নির্বাচন কমিশনকে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। গত ৬ ফেব্রুয়রি সার্চ কমিটি একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অপর চারজন কমিশনার নিয়োগের জন্য ১০ জনের নাম বাছাই করে রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করেন। সুপারিশকৃত ১০টি নাম থেকে রাষ্ট্রপতি কেএম নূরুল হুদাকে প্রধান রাষ্ট্রপতি সাবেক সচিব মাহবুব তালুকদার, মোঃ রফিকুল ইসলাম, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ বেগম কবিতা খানম ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) শাহদৎ হোসেন চৌধুরীকে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেন। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে তারা আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব নিয়েছেন। এ ইসির অধীনে আগামী ৫ বছরের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনসহ অন্য নির্বাচন পরিচালনা করা হবে। এর আগে গত ৮ ফেব্রুয়ারি সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকীব উদ্দিন আহমদ বিদায় নেন। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ছিল রবীক কমিশনের শেষ দিন। ওইদিন অপর নির্বাচন কমিশনার মোঃ শাহনেওয়াজের বিদায়ের মাধ্যমে আগের কমিশনের মেয়াদ শেষ হয়েছে।
×