ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

১৫ বছরের মধ্যে মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরকে ছাড়িয়ে যাবে বাংলাদেশ ॥ পরিকল্পনামন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ২৮ জানুয়ারি ২০১৭

১৫ বছরের মধ্যে  মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরকে ছাড়িয়ে যাবে বাংলাদেশ ॥ পরিকল্পনামন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ ॥ পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল বলেছেন, বাংলাদেশ এখন আর আগের অবস্থানে নেই। আগামী ১৫ বছরের মধ্যে এ দেশ সকল বিবেচনায় প্রথম হবে। সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়াকে হারিয়ে আমরা উন্নত দেশের প্রথম সারিতে থাকব। তাই দেশের ১৬ কোটি ১০ লাখ মানুষের এক জনের জীবনযাত্রার মান খারাপ রাখা যাবে না। তাই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমি এখানে এসেছি। আমি আসলে মন্ত্রী নই। যেদিন এই বেদেদের জন্য আবাসভূমি, ঘর ও চাকরির ব্যবস্থা করতে পরব সেদিন আমি নিজেকে মন্ত্রী বলে মনে করব। তিনি আরও বলেন, দেশ ও জাতিকে উন্নত করতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে কাজ করছি। লৌহজংয়ের তিনটি ইউনিয়নের আড়াই হাজার বেদে পরিবারের জীবনমান উন্নয়ের লক্ষ্যে এখানে নেয়া হবে পাইলট বা মডেল প্রজেক্ট। এখান থেকে শুরু করে সারা দেশে এ ধরনের প্রকল্প নেয়া হবে। আগামী ৩-৪ মাসের মধে সমাজকল্যাণমন্ত্রীকে নিয়ে এখানে প্রকল্প তৈরি করা হবে। এর পর প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে এ প্রকল্পের উদ্বোধন করা হবে। তিনি শুক্রবার বিকেলে মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের গোয়ালী মান্দ্রী বেদে সম্প্রদায়ের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে আয়োজিত সভায় প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন। সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন মুন্সীগঞ্জ-২ আসনের এমপি ও সাবেক হুইপ অধ্যাপিকা সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি। লৌহজং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ ফকির আব্দুল হামিদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল রশিদ সিকদারের সঞ্চালনায় এ সময় বক্তব্য রাখেন অতিরিক্তি ডিআইজি (সংস্থাপন, ঢাকা হেড কোয়ার্টার) মোঃ হাবিবুর রহমান, উপসচিব ও ডিডিএলজি মুন্সীগঞ্জ আবু সালেহ মোঃ মহিউদ্দিন খাঁ, মুন্সীগঞ্জ জেলা আ’লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ঢালী মোয়াজ্জেম হোসেন, লৌহজং উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ ওসমান গণি তালুকদার, হলদিয়া ইউপি আ’লীগ সভাপতি আব্দুস সালাম খান, সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক, বেদে প্রতিনিধি সাহেব আলী, মাসুম মাদবর ও নজরুল ইসলাম। উপস্থিত ছিলেন মেদিনী ম-ল ইউপি আওয়ামী লীগ সভাপতি আলী আকবর, সাধারণ সম্পাদক আশরাফ হোসেন খান প্রমুখ। মন্ত্রী বলেন, মানুষকে জীবনে এগোতে হলে কিছু ছাড় দিতে হয়। আমি অনেক কষ্ট করে এ পর্যায়ে এসেছি। মানুষের টাকায় আমার পড়ার খরচ হয়েছে। যদি অন্যের টাকায় পড়ালেখা করে আমি দেশের মন্ত্রী হতে পারি, তবে আপনারা কেন পারবেন না? মানুষের জন্য মানুষ। তাদের জন্য কিছু করতে হবে। আপনাদেরও পারতে হবে। মোস্তফা কামাল বলেন, প্রধানমন্ত্রী অনেক বাধা অতিক্রম করে পদ্মা সেতু করছেন। এ সেতু হয়ে গেলে এ অঞ্চলের মানুষও আলোকিত হবে। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু এদেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি ও স্বাধীনতা দিতে চেয়েছেন। তিনি স্বাধীনতা দিয়েছেন, একটি পতাকা দিয়েছেন, দিয়েছেন একটি স্বাধীন মানচিত্র। কিন্তু স্বাধীনভাবে এ দেশের মানুষ মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে, মাথা উঁচু করে স্বাধীনভাবে চলতে পারে সে কাজসহ আমাদের দেশের অর্থনৈতিক মুক্তি তিনি দিয়ে যেতে পারেননি। একটি কুচক্রি মহল তাঁকে আমাদের কাছ থেকে সরিয়ে নিয়েছে। তাই তিনি সে কাজটি করে যেতে পারেনিনি। তাঁর সেই অসমাপ্ত কাজটি করার জন্য আমরা পেয়েছি আমদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। তিনি বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ করে চলেছেন। আমরা তার নির্দেশে কাজ করছি। এখানকার এই বেদেদের জীবনমান উন্নয়নে, সকলের জন্য আবাসন ব্যবস্থা করা হবে। শুধু আবাসনই নয় তাদের থাকার ঘর, স্কুল-কলেজ এমনকি সেই স্কুল-কলেজ থেকে যারা শিক্ষিত হয়ে বের হবেন তাদের চাকরির ব্যবস্থাও করা হবে। দেশের এক শ’ শিল্পাঞ্চলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বেদেদের চাকরি দেয়া হবে। পৃথিবীর অনেক পরিবর্তন এসেছে। মানুষ অনেক উপরে উঠতে চায়। তাই সারা দেশের প্রান্তিক মানুষের জন্য কাজ করার প্রথম পদক্ষেপ হবে এই বেদে সম্প্রদায়ের জীবনমান উন্নয়ন। এর পর পর্যায়ক্রমে প্রান্তিক মানুষেরও উন্নয়ন করা হবে। মুন্সীগঞ্জ-২ আসনের এমপি অধ্যাপিকা সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি বলেছেন, বেদেদের জীবনমান উন্নত না করে জাতি এগোতে পারবে না। তাই তাদের শিক্ষা, আবাসনসহ সকল প্রকার উন্নয়নে এ সরকার কাজ করছে। এ এলাকার কোন বেদে যেন আর যাযাবর জীবন যাপন না করে সরকার সে ব্যবস্থাই করছে। বেদে প্রতিনিধি সাহেব আলী বলেন, ঠিক এই মুহূর্তে আমি যখন মঞ্চে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা দিচ্ছি তখন আমার কোন বোন, কোন মা কিংবা কোন ভাই তার রুটি-রুজির জন্য রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন। হয়ত কারো কাছে হাত পেতেছেন ক’টি টাকার জন্য। নয় তো সাপ খেলা, সিংগা লাগানো, নয় তো ভোজবাজি খেলা দেখিয়ে তার পরিবারের রুটি-রুজির জন্য কষ্ট করে চলেছেন। টাকার অভাবে তাদের ছেলেমেয়ের শিক্ষার জন্য স্কুলে পাঠাতে পারছেন না। কিন্তু আমরা এ জীবন চাই না। আমরা এখান থেকে বেরিয়ে এসে মানুষের মতো মানুষ হতে চাই। যাযাবর থাকতে আমাদের এখন আর ভাল লাগে না।
×