ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আজ সার্চ কমিটি প্রথম বৈঠকে বসছে

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ২৮ জানুয়ারি ২০১৭

আজ সার্চ কমিটি প্রথম বৈঠকে বসছে

শাহীন রহমান ॥ নির্বাচন কমিশন গঠনে আজ শনিবার আনুষ্ঠানিক বৈঠকে বসছে রাষ্ট্রপতি নিযুক্ত ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে সার্চ কমিটি যোগ্য ব্যক্তিদের কমিশনে নিয়োগ প্রদানের জন্য চারটি বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অনুসন্ধান কার্যক্রম চালাবেন। এর মধ্যে যেসব রাজনৈতিক দল ইসি গঠনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনায় অংশ নিয়েছে সেসব দলের কাছ থেকে যোগ্য ব্যক্তিদের সংক্ষিপ্ত নামের একটি তালিকা চাওয়া হতে পারে। এছাড়া অবসরপ্রাপ্ত সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব হিসেবে যারা কাজ করেছেন তাদের নামের তালিকা মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে চাওয়া হতে পারে। ইতোমধ্যে সার্চ কমিটির সাচিবিক সহায়তা দেয়ার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে। জানা গেছে, অবসরপ্রপ্ত জেলা বিচারকদের নামের তালিকাও সংগ্রহ করবেন তারা। অবসরপ্রাপ্ত জেলা বিচারকের মধ্য থেকেও যোগ্য ব্যক্তিদের বিবেচনায় নেয়া হতে পারে। এছাড়া রাষ্ট্রপতি যে ছয়জনের সার্চ কমিটি গঠন করেছেন তারাও ব্যক্তিগতভাবে যোগ্য ব্যক্তিদের নামের তালিকা সংগ্রহ করছেন। সেখান থেকে যোগ্য ব্যক্তিদের নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ দেয়ার বিষয়টিও তারা বিবেচনায় রেখেছেন। জানা গেছে, আজকের বৈঠকে কমিটির সদস্যরা যোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনে কোন উপায়ে কাজ করা যায় সে বিষয় নিয়েই মূলত আলোচনা করবেন। আজকের বৈঠকের পর ১০ কর্মদিবসেই যোগ্য ব্যক্তিদের নামের একটি তালিকা রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দেবেন। প্রতি পদের বিপরীতে দুজনের নাম তারা প্রস্তাব করবেন। এর মধ্য থেকে রাষ্ট্রপতি একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্য চারজন কমিশনার নিযোগ দেবেন। যারা আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। এছাড়াও আজকের বৈঠকে যাদের প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য চার কমিশনার হিসেবে নিয়োগের জন্য বিবেচনায় নেয়া হবে তাদের সম্পর্কে খোঁজ খবর নেয়ার বিষয়গুলো নিয়ে মূলত আলোচনা হবে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের তালিকা সংগ্রহ ও পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে বলে জানা গেছে। আজ শনিবার বেলা ১১টায় সুপ্রীমকোর্টের জাজেজ লাউঞ্জে প্রথমবারের মতো আলোচনায় বসছেন ছয় সদস্যের এই সার্চ কমিটি। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি বিদায় নিচ্ছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকীবউদ্দিন আহমেদসহ অন্য কমিশনার আবু হাফিজ, আবদুল মোবারক, জাবেদ আলী। এছাড়া অন্য কমিশনার মোঃ শাহ নেওয়াজ কমিশন থেকে বিদায় নেবেন আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি। এ কারণে ১৪ ফেব্রুয়ারির আগেই নতুন নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দিতে হবে। ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বর্তমান কমিশনের ধারাবাহিকতা থাকবে। এরপরই নতুন কমিশন দায়িত্ব নেবেন। তবে এর আগেই নতুন কমিশন গঠন করতে হবে। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হয়ে আসায় নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে গত বুধবার ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। যার প্রধান করা হয়েছে সুপ্রীমকোর্টের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে। যদিও রাষ্ট্রপতি গঠিত সার্চ কমিটি নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন এই সার্চ কমিটি যে নির্বাচন কমিশন গঠন করবে তা নিরপেক্ষ হবে না। কারণ যাদের এ কমিটিতে নেয়া হয়েছে তারা সবাই সরকারের নিয়োগপ্রাপ্ত। ফলে তারা নির্বাচন কমিশনে যাদের নিয়োগের জন্য সুপারিশ করবেন তারা কেউ নিরপেক্ষ হতে পারেন না। সার্চ কমিটির প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল তিনি গতবারও সার্চ কমিটি প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাদের মাধ্যমে যে ইসি নিয়োগ দেয়া হয়েছে তারা নিরপেক্ষভাবে কাজ করেনি। যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সার্চ কমিটি তাদের দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে যোগ্যব্যক্তিদের নিয়োগের সুপারিশ করবেন। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল বলেছেন, নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ না হলে নিরপেক্ষ সরকার গঠন করেও সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়। এ কারণেই যোগ্য ব্যক্তিদের নির্বাচন কমিশনে নিয়োগের আহ্বান জানান তিনি। সংবিধানে নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য রাষ্ট্রপতির এখতিয়ার দেয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী এতদিন রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে নির্বাচন কমিশন গঠন করে আসছেন। সংবিধানে এ বিষয়ে আইন করার কথা থাকলেও আজ পর্যন্ত ইসি নিয়োগে কোন আইন করা হয়নি। এতদিন একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য দুজন কমিশনার দায়িত্ব পালন করলেও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান গঠিত সার্চ কমিটির মাধ্যমে প্রথমবার কমিশনে একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য চারজন কমিশনারসহ মোট পাঁচজনকে নিয়োগ প্রদান শুরু হয়। এবার একই ধারা অনুসরণ করে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ দেয়ার জন্য সার্চ কমিটি গঠন করেছেন। তাদের বাছাই করা নামের তালিকা থেকেই ৫ সদস্যের কমিশন গঠন করা হবে। তবে গতবার চার সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করা হলেও এবার তার আকার বাড়িয়ে ছয়জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এতে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন অধ্যাপককেও কমিটিতে নিয়োগে দেয়া হয়েছে। জানা গেছে রাষ্ট্রপতির সার্চ কমিটি গঠনের পর কমিটির সদস্য যোগ্য ব্যক্তিদের বাছাই করতে কাজ শুরু করেছেন। তবে তাদের মধ্যে আজ শনিবার আনুষ্ঠানিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সুপ্রীমকোর্টের জাজেজ লাউঞ্জে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সার্চ কমিটির প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন এরই মধ্যে কমিটির অন্য সদস্যদের নির্বাচন কমিশনের সদস্য কারা হতে পারেন সে সম্পর্কে প্রাথমিক খোঁজ-খবর করতে বলেছেন। এরই অংশ হিসেবে কমিটির সদস্যরা ব্যক্তিগতভাবে কিছু কিছু ব্যক্তির নাম তালিকাভুক্ত করতে শুরু করেছেন। এই নামগুলো কমিটির প্রথম সভায় উত্থাপন করা হবে। সার্চ কমিটির সদস্য মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) মাসুদ আহমেদ রাজনৈতিক দলগুলোকে সার্চ কমিটির ওপর আস্থা রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমাদের বিশ্বাস, দক্ষতা ও নৈতিকতা অনুযায়ী কাজ করব। অন্য সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ইসি নিয়োগে আলোচনা করে পরবর্তী বিষয়গুলো জানতে পারব। সার্চ কমিটির সদস্য অধ্যাপক শিরীন আখতার বলেন, ‘এটা পবিত্র দায়িত্ব। নিরপেক্ষভাবে কাজ করে একটি সুন্দর নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন করতে নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের নাম তুলে আনতে পারব আমরা। আজকের বৈঠকে কাজের পরিধি নির্ধারণ করা হবে। হাতে সময় খুব কম। তবু স্বল্প সময়ে যোগ্য ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতে পারব উল্লেখ করেন। জানা গেছে, সার্চ কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্য রাষ্ট্রপতির কাছে নামের সুপারিশ দিতে বলা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেয়া হবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে। আশাকরি ৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সার্চ কমিটির সব কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে। ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে নতুন কমিশন হবে। তিনি বলেন, যোগ্যদের নাম সংগ্রহে গতবারের মতো যে কোন ধরনের সহায়তা চাওয়া হলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ তা করবে। কোন উপায়ে যোগ্য ব্যক্তিদের বাছাই করা হবে বা অনুসন্ধান কমিটির কার্য পদ্ধতি কি হবে তা কমিটির সদস্যরা বসে সিদ্ধান্ত নেবেন। তিনি বলেন, আমরা প্রয়োজনীয় সাচিবিক সহায়তা দেব। সেক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলের কাছে নাম চাওয়া কিংবা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও সুপ্রীমকোর্টের মাধ্যমে সাবেক উচ্চ পদস্থদের নাম সংগ্রহ করার বিষয়ে সহায়তা কমিটির পক্ষ থেকে চাওয়া হলে দেয়া হবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতবারের গঠিত সার্চ কমিটি প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার এবং সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব কাজী রকীবউদ্দিনের নাম প্রস্তাব করেছিলেন। পাশাপাশি চার জন কমিশনার হিসেবে একজন নারীসহ আটটি নাম সুপারিশ করেন তারা। এদের মধ্যে ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আবু হাফিজ ও শাহ মোঃ মনসুরুল হক, অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব আবদুল মোবারক, সাবেক পুলিশপ্রধান হাদিস উদ্দিন আহমেদ, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাবেদ আলী, সুপ্রীমকোর্টের সাবেক নিবন্ধক ফজলুল করিম, সাবেক দায়রা জজ মোঃ শাহনেওয়াজ এবং এনজিও ব্রতীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমীন মুরশিদ। তার মধ্য থেকে কাজী রকীবকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং আবু হাফিজ, আবদুল মোবারক, জাবেদ আলী, মোঃ শাহনেওয়াজ কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান।
×