ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পৌষসংক্রান্তির ব্যতিক্রমী আয়োজন

দুই শ’ বছরের পুরনো মৎস্যমেলা, এখনও জমজমাট

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ১৬ জানুয়ারি ২০১৭

দুই শ’ বছরের পুরনো মৎস্যমেলা, এখনও জমজমাট

সৈয়দ হুমায়েদ শাহীন ॥ পৌষ সংক্রান্তিতে হরেক রকমের মেলা হয়। এইসব মেলা সম্পর্কে মোটামুটি জানা আছে সবার। কিন্তু একই সময়ে যে মাছের মেলা হয় অনেকে তা জানেন না। তেমন আয়োজনগুলোর একটি নিয়ে এখন সরগরম সিলেটের মৌলভীবাজার। পৌষ সংক্রান্তির দিন থেকে এখানে শুরু হয়েছে মৎস্যমেলা। না, সাদামাটা আয়োজন নয়। অনেকে জেনে অবাক হবেন, এটি দুই শ’ বছরের পুরনো মেলা! দেশে আয়োজিত মৎস্যমেলাগুলোর মাঝে এটি সবচেয়ে বড় বলেই দাবি স্থানীয়দের। বিগত দিনের ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় এবারের আয়োজন। দেশীয় প্রজাতির মাছের বিপুল সরবরাহ সোনালি অতীতের কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার মিলনস্থল কুশিয়ারা নদী। এ নদীর উত্তর তীর শেরপুরের ব্রাহ্মণগ্রামে এই আয়োজন। মূল আয়োজন শুরু হয় গত বৃহস্পতিবার। তিন দিনব্যাপী আয়োজন শনিবার শেষ হওয়ার কথা থাকলেও, এখনও সরব গোটা এলাকা। জায়গাটি মৌলভীবাজার শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে। এর পরও বহু মানুষ সেদিকে ছুটছেন। ক্রেতা ও কৌতূহলী মানুষের স্রোত ধরে এগিয়ে গেলেই মেলায় পৌঁছে যাওয়া যায়। নদীর তীর ঘেঁষে সহস্রাধিক স্টল। বহু জাতের তরতাজা মাছ সাজিয়ে রাখা হয়েছে। সিলেট বিভাগের চার জেলার হাওড় থেকে আসা মাছের চাহিদা তুঙ্গে। বিশালাকার সব মাছ নিয়ে দারুণ কৌতূহলী ক্রেতারা। স্থানীয়রা নন শুধু, মাছ কেনায় ব্যস্ত প্রবাসীরা। পৌষ সংক্রান্তি সামনে রেখে দেশে ফিরেছেন প্রবাসী অধ্যুষিত শেরপুর, নবিগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজারসহ আশপাশের এলাকার বহু মানুষ। তারাও যোগ দিয়েছেন মেলায়। প্রথমদিন মেলা ঘুরে দেখা যায়, বোয়াল, আইর (ঘাগট), রুই, কাতলা, কালিবাউস, ঘাসকাপ, চিতল, মৃগেলসহ বিভিন্ন প্রজাতির বিপুল পরিমাণ মাছ। কুশিয়ারা, সুরমা, মনু নদী, হাকালুকি, কাওয়াদীঘি, হাইল ও টাঙ্গুয়ার হাওড় থেকে মাছ সংগ্রহ করেছেন ব্যবসায়ীরা। সবচেয়ে বড় বাঘাড় মাছের ওজন ৮৫ কেজি। বিক্রেতা গফ্ফার মিয়া দাম হাঁকেন ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। দরকষাকষি শেষে ৭৭ হাজার টাকায় মাছটি বিক্রি হয়। আঃ মালেক নামের অন্য বিক্রেতা ৬৫ কেজি ওজনের বাঘাড় মাছের দাম চান ৭০ হাজার টাকা। আব্দুর রহমান নামের এক বিক্রেতা জানান, ২০ কেজি ওজনের বোয়াল মাছ তিনি বিক্রি করেছেন ১৬ হাজার টাকায়। কচুয়া থেকে মাছ কিনতে আসা সুমন আহমদ, দরগা মহল্লার সালেহ আহমদ, সিলেট শহরের মোঃ আব্দুল্লাহ, শেরপুরের দিপলু মিয়া ও হাজী সাবু মিয়াসহ অনেকেই জানান, মেলায় এসে পছন্দের অনেক মাছ তারা পেয়েছেন। স্থানীয় হাওড় ও নদীর মাছগুলো জীবিত। ফরমালিনমুক্ত। তবে দাম বেশি বলে জানান তারা। অবশ্য বিক্রেতারা এই অভিযোগ মানতে নারাজ। তারা বলছেন, মেলার কারণে তারাও মাছ কিনেছেন বাড়তি দামে। তাছাড়া নানা কারণে বড় মাছের সরবরাহ কম থাকায় দামও একটু বেশি। এ মাছগুলো মেলা ছাড়া তারা সংগ্রহ করতে পারেন না।
×