ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গণতন্ত্র রক্ষা করুন ॥ বিদায়ী ভাষণে ওবামা

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ১২ জানুয়ারি ২০১৭

গণতন্ত্র রক্ষা করুন ॥ বিদায়ী ভাষণে ওবামা

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ প্রেসিডেন্ট হিসেবে শিকাগোতে আবেগঘন শেষ বিদায়ী ভাষণে মার্কিনীদের প্রতি ‘গণতন্ত্র রক্ষার’ আহ্বান জানিয়েছেন বারাক ওবামা। ২০০৮ ও ২০১২ সালের নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর এই শিকাগোতেই প্রথম সমর্থকদের সামনে এসে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন তিনি। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাতে (বাংলাদেশ সময় বুধবার সকালে) সেই শিকাগোর ম্যাককরমিক কনভেনশন হলে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শেষ ভাষণ দেন ৪৪তম এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট। দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে বড় এই কনভেনশন হলে তার বক্তৃতা মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনেছে অন্তত ২০ হাজার দর্শক। ৫৫ বছর বয়সী ওবামার ওই ভাষণে আরও অনেকগুলো বিষয় স্থান পায়। এগুলো হলো অভিবাসন, বর্ণবাদ, কিউবার সঙ্গে সম্পর্ক পুনস্থাপন, কর্মসংস্থান, শিক্ষা, বিচারব্যবস্থা, ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে মুসলমানদের সংশয়ের চোখে দেখা ইত্যাদি। তিনি বলেন, কোন একটি ধর্মের লোক সেদিন ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে হামলা চালিয়েছিল ঠিক এমন নয়। এই হামলার পেছনে দায়ী আলকায়েদা। খবর এএফপি, বিবিসি ও এনআরবি নিউজ। ভাষণের এক পর্যায়ে আবেগঘন হয়ে পড়েন ওবামা। তার চোখের কোণে পানি দেখা যায়। আবার পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে প্রকৃত রাষ্ট্রনায়কসুলভ ভঙ্গিমায় ঐক্যবদ্ধ আমেরিকা গড়ার আহ্বান জানান ওবামা। আমেরিকাকে এখন আগের চেয়ে ভাল অবস্থানে থাকা শক্তিশালী দেশ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এবার আমার গুডবাই বলার পালা। তবে তিনি সতর্কবাণী করেন, অগণতান্ত্রিক কর্মকা-কে প্রশ্রয় দিলে গণতন্ত্র হুমকির মুখে পড়বে। তিনি একে অপরের দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়গুলো বিবেচনা করতে সর্বস্তরের মানুষের প্রতি সনির্বন্ধ অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের আরও মনোযোগী হতে হবে এবং বিভিন্ন বিষয় শুনতে হবে।’ ০৮ সালে আশা এবং পরিবর্তনের বার্তা দিয়ে বারাক ওবামা আমেরিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তার উত্তরসূরি ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রতিজ্ঞা করেছেন তিনি ওবামার কিছু নীতিতে পরিবর্তন আনবেন। আগামী ২০ জানুয়ারি ট্রাম্প নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন। ভাষণদানকালে দর্শকদের মধ্য থেকে তাকে আরও চার বছর দায়িত্ব পালনের সেøাগান ওঠে। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমার কিছু করার নেই।’ কারণ সংবিধানে দুইবারের বেশি প্রেসিডেন্ট থাকার কোন সুযোগ নেই। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্টগণের মধ্যে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর আমেরিকার গণতন্ত্রের ‘হলমার্ক’। তবে তিনি বলেন, আমেরিকার গণতন্ত্রের জন্য এখনও হুমকি হলো-অর্থনৈতিক অসমতা ও বর্ণবাদ। তিনি বলেন, ‘আমি প্রেসিডেন্ট হিসেবে সর্বশেষ আপনাদের একটা অনুরোধ করতে চাই-তা হলো আপনারা আস্থা রাখুন। পরিবর্তনের ক্ষেত্রে আমার সক্ষমতার ওপর নয়, আপনাদের সক্ষমতার ওপর আস্থা রাখুন।’ বদায়ী ভাষণে প্রেসিডেন্ট ওবামা তার শাসনামলের সাফল্যের খতিয়ান তুলে ধরেন। তিনি তার আট বছরের শাসনামলের সফলতার কথা উল্লেখ করতে গিয়ে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পুনরুদ্ধার, কিউবার সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন, জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রসঙ্গ টানেন। যুক্তরাষ্ট্রে এখনও বর্ণবাদ আছে বলে স্বীকার করেন ওবামা। তিনি বলেন, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে সবার আরও অনেক কিছু করার আছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশ এবং বিল ক্লিনটন তাদের শেষ ভাষণ হোয়াইট হাউসে বসেই দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ওবামা দিলেন শিকাগো গিয়ে। এর কারণ হিসেবে ওবামা বলেন, তিনি যেখান থেকে শুরু করেছিলেন সেখানেই শেষ করতে চেয়েছেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে ৪৪৫তম বারের মত এয়ারফোর্স ওয়ান নামক বিমানে চেপে শিকাগোতে যান ওবামা। তার সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী ও কন্যা। বিদায়ী ভাষণ দেয়ার সময় ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও সস্ত্রীক উপস্থিত ছিলেন। ভাষণের শেষ ভাগে স্ত্রী, কন্যা ও ভাইস প্রেসিডেন্ট বাইডেনসহ তার প্রশাসনের সকল কর্মকর্তাকে ধন্যবাদ দেন ওবামা। স্ত্রী মিশেল এবং দুই মেয়ে মালিয়া ও শাশার কথা বলতে গিয়ে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন। ভাষণে তিনি তার স্ত্রীকে ‘সেরা বন্ধু’ হিসেবে আখ্যা দেন। এর পর তিনি মিশেলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘তোমার কাজ আমাকে যেমন গর্বিত করেছে, তেমনি গর্বিত করেছে দেশকেও।’ মিশেলকে ধন্যবাদ জানিয়ে ওবামা বলেন, ‘গত ২৫ বছর ধরে তুমি আমার সঙ্গে আছ। তুমি কেবল আমার স্ত্রী আর আমাদের সন্তানের মা নও। তুমি আমার সেরা বন্ধুও বটে।’ ‘এই হোয়াইট হাউসে থাকাকালে তুমি তোমার মতো করে সব কাজ সুচারুভাবে সামলেছ। তোমাকে কখনও বলতে হয়নি। তুমি আমার সব কাজের অংশীদারিত্ব নিজের করে নিয়েছ।’ বক্তৃতার এ পর্যায়ে এসে ওবামা রুমাল বের করে নিজের চোখ মোছেন। ওবামার বিদায়ী ভাষণের সময় তাঁর পাশে কালো পোশাক পরে বসে ছিলেন ফার্স্ট লেডি মিশেল। বক্তব্যে দুই মেয়ের কথাও বলেন ওবামা। তিনি বলেন, ‘আমার মেয়েরা আমার সম্মান ও সুনাম অক্ষুণœ রেখেছে। আজ আমি বলছি, তাদের বাবা হিসেবে আমি গর্বিত।’ বক্তব্যের সময় সমর্থকরা ‘আই লাভ ইউ ওবামা’ বলে চিৎকার করতে থাকেন। এতে বক্তব্যের মাঝেই অনেকবার থামতে হয় ওবামাকে। ইসরাইলী নীতি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনে অন্তরায়Ñ ওবামা ॥ দখলকৃত ভূখণ্ডে ইসরাইলী বসতি সম্প্রসারণে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর নীতি ভবিষ্যতে অঞ্চলটিতে দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানকে অসম্ভব করে তুলছে বলে মন্তব্য বারাক ওবামা। মঙ্গলবার ইসরাইলী একটি টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক সাক্ষাতকারে তিনি এই কথা বলেন। ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সংক্ষিপ্ত নাম উল্লেখ করে ওবামা বলেন, ‘বিবি (নেতানিয়াহু) সবসময় বলে থাকেন, তিনি দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানে বিশ্বাস করেন। অথচ এখনও পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে তার কার্যকলাপে এটাই প্রতীয়মান হচ্ছে যে, বসতি সম্প্রসারণের ব্যাপারে চাপ দেয়া হলে তিনি দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের গুরুত্ব অগ্রাহ্য করে তাতেই অনুমোদন দেবেন। ইসরায়েলের দখলে থাকা পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে বর্তমান প্রায় ৫ লাখ ৭০ হাজার ইসরাইলী নাগরিক বসবাস করছেন। তাদের পাশাপাশি ২৬ লাখ ফিলিস্তিনীও বসবাস করছেন। ১৯৬৭ সালে মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধে পশ্চিম তীর ও জেরুজালেম দখল করে নেয় ইসরাইল। পরবর্তী সময়ে পূর্ব জেরুজালেমেও দখল সম্প্রসারণ করে ইহুদী রাষ্ট্রটি। তবে তা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়নি। ওবামা বলেন, গেল কয়েক বছরে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জনকেরি ‘অসংখ্য সময়’ ব্যক্তিগতভাবে নেতানিয়াহুর প্রতি বসতি স্থাপন কর্মকাণ্ড বন্ধের অনুরোধ জানিয়েছেন। কিন্তু তার আবেদন বরাবরই প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। চ্যানেল টুকে দেয়া এই সাক্ষাতকারে ওবামা বলেন, “এই ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান যে বিষয়টি আপনি দেখছেন তার ফলে পরিস্থিতির সমাধান অসম্ভব হয়ে উঠছে। অন্ততপক্ষে অত্যন্ত কঠিন হয়ে উঠছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে তা কার্যকর ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন অসম্ভব করে তুলবে।
×